X
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

নদীর পেটে যাচ্ছে বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর

আনিসুর রহমান স্বপন, বরিশাল
২৬ মার্চ ২০১৬, ১৮:৫৭আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬:৩৫

স্বাধীনতার মাত্র ৪৪ বছর পার হয়েছে। কিন্তু যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতা, তাদের স্মৃতি আজ ক্রমশ মলিন ও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আর তাই প্রতিষ্ঠার আট বছর পরেও পূর্ণতা পায়নি বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। বরং ইতোমধ্যেই নদী ভাঙনে নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে প্রতিষ্ঠানটি।

বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘর-১

বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের জন্ম ১৯৪৯ সালের ৮ মার্চ বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার দুর্গম আগরপুর ইউনিয়নের রহিমগঞ্জে। তার বাবার নাম আবদুল কাদের, মায়ের নাম সাফিয়া খাতুন।

তিনি ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে কমিশন পান।

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর

১৯৭১ সালের জুলাই মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে এসে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের ৭নং সেক্টরে যোগ দেন।

বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘর

বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদীর রেহাইচর এলাকায় সম্মুখ যুদ্ধের সময় শত্রু বাহিনীর হাতে শহীদ হন এ বীর মুক্তিযোদ্ধা।

তার মরদেহ উদ্ধার করে ঐতিহাসিক ’সোনা মসজিদ’ প্রাঙ্গনে দাফন করা হয় এবং মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য তিনি ’ বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধি পান।

নদীর ভাঙন ঠেকানো হয়েছে কোনওমতে। তারপরও ঝুঁকিতে বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন যাদুঘর

‘বীরশ্রেষ্ঠ’দের স্মৃতি রক্ষা প্রকল্পের আওতায় বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিনের গ্রাম রহিমগঞ্জে তার পরিবারের দান করা ৩০ শতাংশ জমির ওপর গড়ে তোলা হয় ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’। জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ যাদুঘরের উদ্বোধন করা হয় ২০০৮ সালের ২০ মে।

স্মৃতি জাদুঘরে বিভিন্ন সময়ে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মহিউদ্দিনের পরিবারকে দেওয়া সরকারি বেসরকারি পদকের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধসহ নানা বিষয়ের চার হাজার বই, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নানা পোস্টার, সাময়িকী ও পত্রপত্রিকা সংরক্ষিত রয়েছে।

এ সময় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নামানুসারে এলাকার নামকরণ করা হয় ’জাহাঙ্গীর নগর’।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সময় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মহিউদ্দিনের মা সাফিয়া খাতুন এ দুর্গম এলাকার হতদরিদ্র মানুষের জন্য একটি সরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিলেন। সে বছরেই তার মৃত্যু হলেও আজও হাসপাতালের দাবিটি বিবেচনায় নেনয়নি সরকার।

বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর যাদুঘরের অভ্যন্তর ভাগ

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মহিউদ্দিনের নামে সেখানে চার বছর আগে প্রতিষ্ঠিত একটি বেসরকারি কলেজ ভালো ফলাফল করা সত্ত্বেও অদৃশ্য কারণে এখনও তা এমপিওভুক্ত হতে পারেনি।

বীরশ্রেষ্ঠের ভাই এবং ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মঞ্জুর রহমান বাচ্চু জানান, স্মৃতি জাদুঘরে যদি কিছু স্মৃতি না থাকে তাহলে জাদুঘর করার মানে কী? মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর যেসব স্থানে যুদ্ধ করেছেন, সেসব স্থানের ছবি স্থাপন করার জন্য অনুরোধ করেও আজ পর্যন্ত সাড়া পাওয়া যায়নি। ওইসব ছবি থাকলে মানুষ তার অবদানের কথা এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারত। এসব অপূর্ণতার কারণেই গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে পাঠক এবং দর্শনার্থী নেই বললেই চলে।

গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের জন্য কোনও স্থায়ী জনবল কাঠামো নেই বলে জানান প্রতিষ্ঠানের কেয়ারটেকার কাম লাইব্রেরিয়ান বীরশ্রেষ্ঠ’র চাচাতো ভাই সিদ্দিকুর রহমান।

তারা দুজনই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর এখন সুগন্ধা নদীর তীব্র ভাঙন কবলিত। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমেই এ প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সমাধি

 গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর দেখতে আসা দর্শনার্থী আগরপুর ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী আফসানা আক্তার জানান, একজন বীরশ্রেষ্ঠের নামে স্মৃতি জাদুঘর এতো কম পরিসরে হতে পারে না। জাদুঘরটি আরও সম্প্রসারিত এবং এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় যাতায়াতের সুব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

বীরশ্রেষ্ঠের ভাতিজা কলেজছাত্র সাব্বির  হোসেন জানান, এই প্রতিষ্ঠানটি করার পর এলাকায় শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রসার ঘটেছে। এখানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আরও বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করলে এলাকার ছাত্রছাত্রী এবং নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আরও বেশি করে জানতে পারবে।

তার পরিবার এ প্রতিষ্ঠানটি আরও আধুনিকায়নের পাশাপাশি সরকারিভাবে এখানে বীরশ্রেষ্ঠের জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকীসহ জাতীয় দিবসগুলো পালনের ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন।

এছাড়াও বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর স্মৃতি কমপ্লেক্সকে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ জাদুঘর হিসেবে গড়ে তুলতে এবং একে নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য অবিলম্বে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধারা।

/বিটি/টিএন/

m
টাইমলাইন: কেমন আছে গ্রন্থাগারগুলো
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:০০
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:৩৮
২৬ মার্চ ২০১৬, ১৮:৫৭
নদীর পেটে যাচ্ছে বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর
সম্পর্কিত
গ্রন্থাগার অধিদফতরের কাজে গতি আনতে কামাল চৌধুরীর আহ্বান
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ দিবস পালন করলো সিএজি কার্যালয়
অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিন আজ
সর্বশেষ খবর
ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে অ্যাস্ট্রা এয়ারওয়েজের চুক্তি সই
ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে অ্যাস্ট্রা এয়ারওয়েজের চুক্তি সই
দেশের উন্নয়নের বিষয়টি বিএনপির সহ্য হচ্ছে না: আইনমন্ত্রী
দেশের উন্নয়নের বিষয়টি বিএনপির সহ্য হচ্ছে না: আইনমন্ত্রী
আরসার বিরুদ্ধে অভিযান নিয়ে যা বললো র‌্যাব
আরসার বিরুদ্ধে অভিযান নিয়ে যা বললো র‌্যাব
‘মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হবে না’
‘মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হবে না’
সর্বাধিক পঠিত
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
এডিপি: সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে যে ১০ প্রকল্প
এডিপি: সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে যে ১০ প্রকল্প