X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘শিক্ষা আইন চূড়ান্ত হলে ২৫ লাখ মানুষ পথে বসবে’

রশিদ আল রুহানী
১৫ মে ২০১৬, ০১:৫৩আপডেট : ১৫ মে ২০১৬, ০৮:৩৭

আলমগীর সিকদার লোটন প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন ২০১৬-এর খসড়া প্রকাশের পর থেকেই আইনটির কয়েকটি ধারা, উপধারা সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। সমিতির সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটন বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন,সম্প্রতি শিক্ষা আইনের খসড়ায় পাঠ্য পুস্তক প্রকাশের ক্ষেত্রে যে আইন করা হচ্ছে তা চূড়ান্ত হয়ে গেলে শিক্ষা ব্যবস্থার অবনতি ঘটবে। লেখক, প্রকাশক ও শিক্ষার্থীরা তাদের মুক্তচিন্তা চর্চায় বাধাগ্রস্ত হবেন। বাংলাদেশ তো কমিউনিস্ট কান্ট্রি নয় যে সরকার সব কিছুই নির্ধারণ করে দেবে। সরকারই মুক্তচিন্তা ও বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে।
বাংলা ট্রিবিউন: খসড়া আইনটির কোন কোন ধারায় আপনাদের আপত্তি?
আলমগীর সিকদার লোটন: খসড়া আইনের ধারা ২ এর ৩১ উপধারায় নোট ও গাইড বইয়ের সংজ্ঞা, প্রথম অধ্যায়ের ধারা ৭ এর ৬, ৯, ১১, ১২ উপধারা ও তৃতীয় অধ্যায়ের ধারা ২১ এর ৫ এবং ৬ উপধারা নিয়ে আমাদের আপত্তি রয়েছে।
আরও পড়তে পারেন: বজ্রাঘাত নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা
বাংলা ট্রিবিউন
: ধারাগুলোতে আপনাদের আপত্তি কেন?
আলমগীর সিকদার লোটন: প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে বলা হয়েছে,সহায়ক শিক্ষা উপকরণ হিসেবে ডিজিটাল শিক্ষণ সামগ্রী প্রকাশ করা যাবে। কিন্তু কোনও প্রকার নোট বা গাইড বই প্রকাশ করা যাবে না। যদি কোনো প্রকাশক এই আইন অমান্য করে নোট বা গাইড প্রকাশ করেন তাহলে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকার অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে তাকে। আইনটি যদি চূড়ান্ত হয় তাহলে বই প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত আমরা ২৫ লাখ মানুষ পথে বসে যাবো। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানই দেশের উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নিয়ে থাকে। আমরা সেইসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। এতে শিক্ষা ব্যবস্থারও অবনতি ঘটবে।
বাংলা ট্রিবিউন: কিভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার অবনতি ঘটবে বলে মনে করেন?
আলমগীর সিকদার লোটন: আমরা ছোট বেলাতে কি শুধু একটা বই পড়েছি? যে লেখকের বই পছন্দ হয়েছে সেই বই পড়েছি। নানা রকমের বই পড়ে নানা রকম জ্ঞান নিয়েছি। এখনও শিক্ষার্থীরা যে বই পছন্দ করে সে বই কিনে পড়ে। এতে তাদের জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এনসিটিবি যদি মাত্র একটি বই নির্ধারণ করে দেয় এবং সেটাই পড়তে হয় তাহলে তো মুক্ত চিন্তার বিকাশ ঘটবে না। শিক্ষার্থীরা একটি সীমাবদ্ধ জ্ঞানের মধ্যে আটকে যাবে। কাজেই বই প্রকাশের স্বাধীনতা তো থাকতে হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: সরকার বলছে নোট বা গাইড বই পড়লে সৃজনশীলতা নষ্ট হয়। এক্ষেত্রে কি বলবেন?
আলমগীর সিকদার লোটন: আমার কাছে বেশ কিছু পত্রিকা আছে যেসব পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে বেশিরভাগ শিক্ষকই সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানেন না। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই নোট গাইডের ওপর নির্ভরশীল। মূল সমস্যা যেখানে সরকারের উচিত সেখানে ট্রিটমেন্ট করা। স্বাধীনভাবে বই প্রকাশ না করতে দিলে তো লেখক, প্রকাশক ও ছাত্র-ছাত্রীদের মুক্তচিন্তা চর্চা হবে না,বাক-স্বাধীনতাও থাকবে না।

বাংলা ট্রিবিউন: নোট বই প্রকাশ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলে মুক্তচিন্তা চর্চা বাধাগ্রস্ত হবে কেন?

আলমগীর সিকদার লোটন:এনসিটিবি তাদের নির্ধারিত বই প্রকাশ করুক তাতে তো আমাদের কোনও আপত্তি নেই।পাশাপাশি আমাদেরকেও বই প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। বাজারে অনেক ধরনের বই থাকলে ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবকরা সেখান থেকে পছন্দ মতো বই কিনে পড়তে পারবে।এনসিটিবি যদি নির্ধারণ করে দেয় গুটি কয়েক বইয়ের বাইরে পড়া যাবে না এবং বই প্রকাশের স্বাধীনতা যদি না থাকে তাহলে মুক্ত চিন্তা হবে কিভাবে?

বাংলা ট্রিবিউন: এখন কি প্রস্তাবিত আইনের সংশোধনের দাবিতে আপনারা আন্দোলন করছেন?

আরও পড়তে পারেন: খুনিদের ‘ছবি আঁকলেও’ তা প্রকাশ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় পিবিআই!
আলমগীর সিকদার লোটন:
আমরা এই আইনটির খসড়া প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গেই আন্দোলন শুরু করেছি। শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। সারাদেশে দুইদিন সমস্ত বইয়ের দোকান বন্ধ রেখেছি। আমরা চাই আইনটি সংশোধন করা হোক। আমরা বই প্রকাশের স্বাধীনতা চাই। তাছাড়া সরকারের একার পক্ষে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয় সেটা সবাই জানেন। আমরাও দেশের উন্নয়নের অংশীদার হয়ে আসছি বহু বছর ধরে। সরকার নিজেই এ পথ বন্ধ করে দিতে চাচ্ছে।

বাংলা ট্রিবিউন: আইনটি যদি সংশোধন না হয় তাহলে সামনে আপনাদের পরিকল্পনা কি?

আলমগীর সিকদার লোটন: আমরা এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই আইনটির খসড়ায় সংশোধনী আনা হবে। সংশোধনী আনা না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো। 

বাংলা ট্রিবিউন: কঠোর বলতে ঠিক কি ধরনের কর্মসূচির কথা ভাবছেন?

আলমগীর সিকদার লোটন: আমরা লাগাতার বইয়ের দোকান বন্ধ রাখতে পারি। এছাড়া আরও কি কর্মসূচি দেওয়া যায় সে ব্যাপারে আলোচনা করা হবে।

/এমএসএম /

সম্পর্কিত
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
করারোপ নীতি শিক্ষা সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করবে: সলিমুল্লাহ খান
বাংলা ট্রিবিউনকে ওয়াসিকা আয়শা খান‘নারীরা যে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়ে চলেছেন, এর নেপথ্যে শেখ হাসিনা’
সর্বশেষ খবর
কুড়িগ্রাম জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালককে শোকজ
কুড়িগ্রাম জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালককে শোকজ
বিদ্যুৎ ও গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না
বিদ্যুৎ ও গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না
ওমরা পালনে সৌদি গেলেন পাটমন্ত্রী
ওমরা পালনে সৌদি গেলেন পাটমন্ত্রী
গাজায় আবিষ্কৃত গণকবরের স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র
গাজায় আবিষ্কৃত গণকবরের স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা