X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

উস্কানি ছড়ানো পেজগুলো পর্যবেক্ষণের বাইরে: নির্ঝর মজুমদার

উদিসা ইসলাম
২২ মে ২০১৬, ১৫:৫০আপডেট : ২২ মে ২০১৬, ১৯:২২

নির্ঝর মজুমদার বাংলাদেশে একের পর এক জঙ্গি হামলা ও মুক্তমনা ব্লগারদের হুমকি দিতে ফেসবুকের ব্যবহার এখনও পুরোপুরি মনিটরিংয়ের আওতায় আসেনি। অন্তত ৫ হাজার পেজ থেকে এখনও সক্রিয় উস্কানি ও হুমকি দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে ৫৭ ধারা সক্রিয় থাকার মধ্য দিয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হচ্ছে বলে মনে করছেন অ্যাক্টিভিস্টরা।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে নিউ মিডিয়া এবং জঙ্গিবাদ বিষয়ক গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট নির্ঝর মজুমদারের সঙ্গে কথা বলা হয়। নির্ঝরের মাস্টার্সের গবেষণার বিষয় ব্লগ এবং আইসিটি এক্টের ৫৭ ধারা কিভাবে কাজ করছে বা মত প্রকাশের চর্চাকে কিভাবে প্রভাবিত করছে। এর পাশাপাশি তিনি একটি আর্কাইভ তৈরির কাজ করছেন যেটা ভবিষ্যতে জঙ্গিবাদ এবং বিশেষত সাইবার টেররিজমে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গবেষণায় সহায়ক হবে।
একইসঙ্গে জঙ্গিবাদের অনলাইনভিত্তিক প্রচারণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কৌশলগুলো কেমন এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোন কোন অঞ্চলের জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের ইন্টারনেটভিত্তিক প্রকাশ্য যোগাযোগ হয়, তার ম্যাপিং নিয়ে কাজ করছেন তিনি।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার দৃষ্টিতে ৫৭ ধারা কিভাবে ইন্টারপ্লে করছে বা মত প্রকাশের চর্চাকে কিভাবে প্রভাবিত করছে? বা আদৌ প্রভাবিত করছে কিনা?
আইসিটি এক্টের ৫৭ ধারা বাংলাদেশের সমাজের ধর্মীয়ভাবে উদারবাদী অংশের ক্ষেত্রে সেলফ সেন্সরশিপের মাত্রা বাড়াচ্ছে, এতে কোনও সন্দেহ নেই। এই মাত্রা বাড়ার ব্যাপারটি ঘটছে শুধু তাদের ক্ষেত্রে যারা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে উদারবাদের চর্চা করে অথবা উগ্রবাদী মতবাদে বিশ্বাস করে না। অপরদিকে যারা চরমপন্থায় বিশ্বাস করে, তারা এই ব্যাপারটিকে নিয়েছে এক ধরণের আইনি আশ্রয়ের মত করে। উদাহরণ স্বরূপ চট্টগ্রামে ২০১৪ সালে আটক হওয়া দুজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে, যাদের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারাতে মামলা দেওয়া হয়েছিলো জঙ্গিবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত ফারাবি শাফিউর রহমানের সঙ্গে ইনবক্সে বাদানুবাদের কিছু কনটেন্টের ভিত্তিতে। খেয়াল করে দেখুন, সেখানে কিন্তু ৫৭ ধারাটিকে এক ধরণের আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করেছে যারা উগ্রবাদে বিশ্বাসীরা। তারাও এই ৫৭ ধারা অনুযায়ী অপরাধ করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পার পেয়ে যাচ্ছে তাদের স্থানীয় রাজনৈতিক সমর্থন এবং উগ্রবাদী নেটওয়ার্কগুলোর আর্থিক ও রাজনৈতিক আনুকূল্য পেয়ে। এই ধরণের আইনগুলোর প্রধান অসুবিধা হলো- সেগুলো প্রয়োগ করা হয় রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে এবং আইনের চোখে অপরাধের নির্দিষ্ট বিবরণ না থাকার কারণে সেটির অপব্যবহার হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
আরও পড়ুন: ৬ জঙ্গির সবই জানে পুলিশ, অজানা শুধু ঠিকানা ও পরিচয়

বাংলা ট্রিবিউন: সেক্যুলার বা ধর্মীয় উদারবাদীদের বাইরে এর প্রয়োগ না হওয়ার স্পেসিফিক কোনও কারণ আছে মনে করেন? নাকি তারা মনিটরিংয়ের বাইরে রয়ে যাচ্ছে?
প্রথম কারণ এই আইনটির প্রয়োগ হচ্ছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কথা মাথায় রেখে। রাজনৈতিকভাবে যদি হেফাজতে ইসলাম বা এই ধরণের ধর্মীয় উগ্রবাদী দলগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে কিন্তু এই আইন তাদের বিরুদ্ধেও প্রয়োগ হওয়া সম্ভব। মানুষ খুন করার আহ্বান সম্বলিত পোস্ট দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে এরা, একইসঙ্গে অশ্লীল এবং পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট এবং ধর্মীয় কনটেন্ট আপলোড করে যে নৈতিক এবং আইনগত অপরাধ তারা করছে সেটিও কিন্তু পার পেয়ে যাচ্ছে কারণ তারা নিজেদের উপস্থাপন করছে ‘ধর্মীয়’ শক্তি হিসেবে।
এই পেজগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরাসরি জঙ্গিবাদ এবং চরমপন্থায় উস্কানি দিয়ে থাকে এবং কিছু ক্ষেত্রে চরম সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক লেখালেখি করে। এই পেজগুলো সংখ্যায় প্রচুর এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলো সরকার মনিটরের বাইরে থাকে বলেই আমার ধারণা।

বাংলা ট্রিবিউন: এই যে কিছু পেজে অপপ্রচার চালানো দেখে গ্রেফতার এবং প্রায়ই নানা পেজে হুমকি উসকানি দেওয়ার নজির দেখা যায়। আপনার গবেষণায় এ ধরনের কতগুলো পেজ সক্রিয় আছে? এরা কোন পন্থায় কাজ করে? এদের টার্গেট কী বলে মনে হয়েছে আপনার?
পেজগুলো সরাসরি জঙ্গিবাদী কার্যক্রম চালায়, সরাসরি জঙ্গিবাদী মতবাদ প্রচারণা করে এবং সহিংসতার নির্দেশনা দেয়। যেমন- বাঁশেরকেল্লা বা বখতিয়ারের ঘোড়া। অন্য দিকে আরও কিছু পেজ আছে, যেগুলো মূলত আইনশৃঙ্খলা সংস্থার নজরদারি এড়িয়ে যেতে পারে খুব সহজেই। এই ধরণের পেজগুলোর প্রথম লক্ষ্য থাকে সরকার বিরোধিতা এবং ধর্মীয় বক্তব্য প্রচারের ছলে এরা মূলত সরকার বিরোধিতা ও জঙ্গিবাদী মতবাদ এবং মনোভাব ছড়ানোর/প্রচারণার কাজ করে। ব্লগ বা ফেসবুকের পরিবেশ সম্পর্কে যাদের ধারনা নেই, তাদের পক্ষে এই ধরণের প্রচারণাগুলো খেয়াল করা এবং চিহ্নিত করা বেশ কঠিন। কিছু পেজ আছে যেগুলো সরাসরি অশ্লীল কনটেন্ট বা গল্প প্রচারের পাশাপাশি ধর্মীয় প্রচারণা চালিয়ে থাকে। এ এক অদ্ভুতকৌশল, প্রথমত অশ্লীল কনটেন্ট প্রচার করে তারা তাদের প্রচারণা বাড়ায় এবং পরে ধর্মীয় প্রচারণার ছলে তারা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক কনটেন্ট, জঙ্গিবাদী এবং সরকার বিরোধী কনটেন্ট প্রচার করে। ব্লগের পরিভাষায় একে বলা হয় ‘রিভার্স গেম’।

আমার ধারণা এই ধরনের জঙ্গিবাদী এবং সাম্প্রদায়িক পেজের সংখ্যা পাঁচ হাজারের অধিক এবং যেটা ভয়ংকর তা হলো- এদের অডিয়েন্সের সংখ্যা। এই পেজগুলো দিয়ে তারা নিমিষেই লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছে কোনও ধরনের বিপত্তি ছাড়াই। এটিই বড় বিপত্তির কারণ। শুধু কিছু পেজকে ফেসবুকে ব্লক করে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না। দেখা গেছে একটি পেজ ব্লক করার কয়েক ঘণ্টার মাথায় সেটি আবারও অনলাইনে ফেরত আসে, কারণ ফেসবুক বা অন্যান্য সোশ্যাল সাইটে এই ধরণের পাবলিক চ্যানেলগুলো তৈরি করা প্রচণ্ড সহজ। মূল কাজ হলো জঙ্গিবাদের উস্কানি দাতাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা।

এদের প্রথম টার্গেট হল সরকার বিরোধী প্রচারণা চালানো, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো এবং উগ্র মৌলবাদের প্রসার। সেই কাজ করতে গিয়ে তারা লক্ষ্য পূর্ণ করছে কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তি, বা প্রতিষ্ঠান এর বিরুদ্ধে স্পর্শকাতর অভিযোগ তুলে। খেয়াল করুন প্রায় সব ক্ষেত্রেই অভিযোগটি হচ্ছে ধর্ম অবমাননার। এই কৌশল এর যে রাজনৈতিক ব্যবহার আছে, সেটিই হছে মূল সমস্যার জায়গা।

আরও পড়ুন: উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও সুষম বণ্টনের বাজেট প্রায় চূড়ান্ত

/এজে/

সম্পর্কিত
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
করারোপ নীতি শিক্ষা সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করবে: সলিমুল্লাহ খান
বাংলা ট্রিবিউনকে ওয়াসিকা আয়শা খান‘নারীরা যে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়ে চলেছেন, এর নেপথ্যে শেখ হাসিনা’
সর্বশেষ খবর
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
তিন লাল কার্ডের ম্যাচে মোহামেডানের খেলতে অস্বীকৃতি, আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা
তিন লাল কার্ডের ম্যাচে মোহামেডানের খেলতে অস্বীকৃতি, আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা
প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, গ্রেফতার ১
প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, গ্রেফতার ১
ইরান হামলা বন্ধ করলেও ছায়াশক্তিরা সক্রিয়
ইরান হামলা বন্ধ করলেও ছায়াশক্তিরা সক্রিয়
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী