X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
একান্ত সাক্ষাৎকারে শ্যামল কান্তি

‘পকেট হেড মাস্টার হতে পারিনি বলেই মন জয় করতে পারিনি’

জাকিয়া আহমেদ
২৭ মে ২০১৬, ২২:৩৩আপডেট : ২৭ মে ২০১৬, ২২:৫৩

পকেট হেড মাস্টার হতে পারিনি বলেই কারও মন জয় করতে পারিনি। আমি জিরো থেকে এই স্কুলকে হিরো বানিয়েছি। কোনও ক্ষেত্রেই আপস করিনি। তবে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজন আমাকে সহ্য করতে পারতেন না, কেন পারতেন না সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে আমি কোনওদিন কোনও অন্যায় করিনি, অবৈধ কাজকে প্রশ্রয় দেইনি।

শ্যামল কান্তি ভক্ত শুক্রবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় বসে একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলা ট্রিবিউনকে কথাগুলো বলেন, নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের আলোচিত প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত।

গত ১৩ মে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ তুলে উসকে দেওয়া জনরোষের মুখে এই শিক্ষককে কান ধরে উঠবোস করান জাতীয় পার্টির স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। এ ঘটনা সামাজিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। আদালতও এ বিষয়ে রুল জারি করেন।

সেলিম ওসমানের প্রসঙ্গে শ্যামল কান্তি বলেন, তিনি রাজনীতিবিদ আর আমি একজন সাধারণ শিক্ষক। তিনি কোথায় আর আমি কোথায়। তিনি যা বলছেন, সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। আমি বলবো, এমপি সাহেব নিজের দিকে ফোকাস ঘোরাতে চাচ্ছেন। আমার বিরুদ্ধে তিনি অপপ্রচার করছেন। কিন্তু সেটা সিদ্ধ হবে না। কারণ, মিথ্যা সবসময়ই মিথ্যা।

আরও পড়ুন: আমার গালে থাপ্পড় মেরেছেন সেলিম ওসমান: শ্যামল কান্তি ভক্ত

তিনি বলেন, গত ১৩ মের ঘটনা পুরোটাই পূর্ব পরিকল্পিত সাজানো নাটক। এই নাটক যদি আগে একটু বুঝতে পারতাম, তাহলে আমাকে এই অপমানের শিকার হতে হতো না।

কেন এখন মনে হচ্ছে এই ঘটনা সাজানো এবং পূর্ব পরিকল্পিত- জানতে চাইলে শ্যামল কান্তি বলেন, যেভাবে ঘটনা ঘটনা হয়েছে, তাতে এখন তাই মনে হচ্ছে। যদিও আমি শুনতে পাইনি কিন্তু সেদিন মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, নয়তো এতো মানুষ কীভাবে এলো? আমার সেই ছাত্র এবং তার মা বলেছেন, আমি ধর্ম নিয়ে কোনও কটূক্তি করি নাই। তদন্ত কমিটিও বলেছে, আমার কটূক্তির কোনও প্রমাণ মেলেনি। আমি স্পষ্ট করে সবাইকে বলতে চাই, আমি এটা বলতে পারি না, কোনও শিক্ষকও এটা বলতে পারবে না। আর এখন যদি কেউ এরকম কিছু বলে তাহলে বুঝতে হবে, চাপের মুখে তারা এটা বলতে বাধ্য হচ্ছে। আমার ছাত্রটিও এখন তাই করছে।

তিনি জানান, বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি গঠনের পর থেকে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে, এটা সত্যি। ম্যানেজিং কমিটির তিন জন- মতিউর রহমান, মোবারক হোসেন ও মিজানুর রহমানের সঙ্গে আমার বাদানুবাদ হতো প্রায়ই। যেটা শুরু হয় গত বছর। তারা মাঝে মধ্যেই বিরক্ত করতেন তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এটা আমি বুঝতাম। আমি ঠিক মতো স্কুলে আসি না বলেও মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়। পরে বুঝতে পারি, তারা আমাকে তাড়াতে চান। আধিপত্য বিস্তার কিংবা প্রধান শিক্ষকের চেয়ার তারা অন্য কাউকে বসাতে চান।

আরও পড়ুন: ‘আমার এখন দেহ আছে, প্রাণ নেই’

এই ‘অন্য কেউ’ কে হতে পারে বলে আপনি সন্দেহ করেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, হয়তো বর্তমান সহকারী প্রধান শিক্ষক যিনি বিলুপ্ত হওয়া ম্যানেজিং কমিটির আত্মীয়।

কথা বলার মাঝখানেই শ্যামল কান্তিকে ফোন করেন স্কুলের বিলুপ্ত হওয়া ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলাম। ২৮ মে স্কুলটির গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষে শ্যামল কান্তি বিদ্যালয়ে যোগ দেবেন কিনা সে বিষয়ে তিনি জানতে চান। প্রধান শিক্ষক তাকে জানান, হাসপাতাল থেকে তাকে রিলিজ না দিলে এবং নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি না হলে তিনি স্কুলে যেতে পারবেন না। বিলুপ্ত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলামের বাবার নাম আব্দুল লতিফ। স্কুলের তিন প্রতিষ্ঠাতার একজন তিনি। সেই সূত্র ধরেই ফারুকুল এই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি।

ম্যানেজিং কমিটি গঠনে প্রধান শিক্ষক হিসেবে তার কোনও ভূমিকা কখনও থাকতো না জানিয়ে শ্যামল কান্তি বলেন, ফারুকুল ইসলাম নিজের মতো করে ম্যানেজিং কমিটির ছক সাজিয়ে আমাকে জানাতেন।

তিনি জানান পিয়ার, সাত্তার এবং লতিফ নামের তিন বন্ধুর গড়ে তোলা এই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৪ সালে। প্রায় ৩ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা স্কুলটিতে শ্যামল কান্তি প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ২০০২ সালে। তখন একটি টিনশেড ঘর থাকলেও বর্তমানে এটি তিনতলা ভবন। এসবই তিনি করেছেন স্কুল ফান্ডসহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সাহায্যে।

স্কুলের নির্মাণ কাজের খরচ নিয়ে কখনোও কারও সঙ্গে মতবিরোধ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারও সঙ্গে মতবিরোধ হয়নি।

নারায়ণগঞ্জে কবে যাবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার রিজিক যেখানে আছে সেখানেই যাবো। তবে উনি (সেলিম ওসমান) কোন দিকে মোড় নেবেন সেটা বুঝতে পারছি না, এখনতো তিনি এটা নিয়ে রাজনীতি করছেন। কিন্তু আমিতো রাজনীতি করি না, একজন শিক্ষক আমি। আমার ক্ষত কখনও সারবে না- এটা সত্যি। উনি আমার এলাকার এমপি, আমি শিক্ষক মানুষ, আমিতো ওনাকে তাচ্ছিল্য করে কোনও কথা বলতে পারি না, আমার শিক্ষা অনুযায়ী আমি চলবো সারাজীবন।

প্রচণ্ড মারধরের কারণে মেরুদণ্ড এবং বুকের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও চিকিৎসায় অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন শিক্ষক শ্যামল কান্তি।

হাসপাতালেও নিরাপত্তা সংকটে ভুগছেন কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যে সহযোগিতা পাচ্ছি, তাতে কিছুর ঘাটতি আমি দেখছি না।

কিন্তু হাসপাতাল থেকে দেওয়া খাবার নাকি খাচ্ছেন না- জানতে চাইলে শ্যামল কান্তি বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমি এখানে আসার পর থেকেই হাসপাতালের খাবার খাচ্ছি, থাকছি হাসপাতালে বাইরের খাবার কেন খাবো। কেন, কে বা কারা এই কথা বলছে বুঝতে পারছি না। হাসপাতাল যা সাপ্লাই দিচ্ছে তাই খাচ্ছি।

আরও পড়ুন: আমরা ওসমান পরিবারের দালালি করতে মাঠে নামি নাই: হেফাজত

/এজে/আপ-এমও

 

সম্পর্কিত
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
করারোপ নীতি শিক্ষা সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করবে: সলিমুল্লাহ খান
বাংলা ট্রিবিউনকে ওয়াসিকা আয়শা খান‘নারীরা যে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়ে চলেছেন, এর নেপথ্যে শেখ হাসিনা’
সর্বশেষ খবর
শুধু চাকরির পেছনে ছুটবে না, উদ্যোক্তা হবে:  স্বাস্থ্যমন্ত্রী
শুধু চাকরির পেছনে ছুটবে না, উদ্যোক্তা হবে:  স্বাস্থ্যমন্ত্রী
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক এমডিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক এমডিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বঙ্গোপসাগরে ডুবলো জাহাজ, ভাসছেন ১২ নাবিক
বঙ্গোপসাগরে ডুবলো জাহাজ, ভাসছেন ১২ নাবিক
মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ইসির
মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ইসির
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের