X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ৮০ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত বিনিয়োগ লাগবে: সিপিডি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৩ জুন ২০১৬, ১৩:০৮আপডেট : ০৩ জুন ২০১৬, ২৩:১৬

জাতীয় বাজেট ২০১৬-১৭ সিপিডির পর্যালোচনা বিষয়ক সংবাদ সম্মেলন
বেসরকারি খাতে আরও ৮০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ না হলে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে না বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘জাতীয় বাজেট ২০১৬-১৭: সিপিডির পর্যালোচনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, তার দৃষ্টিতে ঘোষিত এই বাজেট কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। কারণ, ব্যক্তি খাতে বাড়তি এই ৮০ হাজার কোটি টাকা কিভাবে বিনিয়োগ হবে তার কোনও রূপরেখা নেই।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রস্তাবিত এই বাজেটে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ, নতুন কর্মসংস্থান তৈরিসহ অনেক খাতেই কোনও ইতিবাচক পরিকল্পনা নেই। এতে বাজেট বাস্তবায়ন কষ্টস্বাধ্য হয়ে যাবে।

সিপিডির বাজেট প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেন হোসেন, রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য ৭.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হলেও এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য যে সক্ষমতা দরকার সেটা অর্জন নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ গত দুই বছরে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের পতন ঘটেছে। এই অবস্থায় আগামী বছর ব্যক্তি খাত থেকে কিভাবে বাড়তি অর্থ আসবে সেটি এখন বড় বিবেচ্য বিষয়।

তিনি বলেন, আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করের হার কম এবং কর রেয়াতের ক্ষেত্রেও বৈষম্য রয়েছে। চলতি বাজেটে করের হার স্থিতিশীল রাখা হয়েছে; যা বিশ্বের আর কোনও দেশে দেখা যায় না। বাজেটে কম আয়ের থেকে বেশি আয়ের ব্যক্তির কর ও কর রেয়াতের বৈষম্য লক্ষ্যণীয়। নতুন কর নীতিমালা তৈরিসহ কর সংগ্রহের পদ্ধতি আরও সহজ করার পাশাপাশি প্রত্যক্ষ করের প্রতি জোর দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সব ধরনের রফতানি খাতে সমান সুযোগ দেওয়ার সমালোচনা করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, আমদানি ও রফতানি শুল্কের পরিমাণ বাস্তবসম্মত নয়।

বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহার, এডিপির বাস্তাবায়ন ও কর আহরণের ক্ষেত্রে সমস্যা রয়ে গেছে। এর বাইরে জাতীয় বাজেটের আর্থিক কাঠামোর ক্ষয় হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রসঙ্গ তুলে ধরে ড. দেবপ্রিয় বলেন, এডিপি নিয়ে নতুন কোনও ধরনের অগ্রগতি লক্ষ্য করছি না। মেগা প্রকল্পগুলো আগের মতো অবস্থায় রয়েছে। এডিপির তহবিল গতবারের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি। এটা ব্যবহার করতে হলে যে নীতির পরিবর্তন দরকার, যে অবকাঠামো দরকার তা নেই।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এডিপির অনেক প্রকল্প রয়েছে যার ৫০ শতাংশই সম্পন্ন হয়নি, যে প্রকল্পগুলো শেষ হবে বলা হচ্ছে সেগুলোতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ১৮টি প্রকল্পে মাত্র ১ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, ২০টিতে মাত্র ১ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া অন্যগুলোতে পর্যাপ্ত অর্থায়ন করা হয়নি। ভর্তুকির ক্ষেত্রে একটা জাতীয় নীতিমালারও দাবি জানিয়েছেন সিপিডির এই বিশেষ ফেলো।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাজেটের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ঠিক আছে। তবে আয়-ব্যয় কাঠামোতে স্বচ্ছতার ঘাটতি আছে। নিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি, জিডিপির প্রবৃদ্ধি, রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধিসহ বেশ কিছু কারণে এবারের বাজেট প্রণয়ন তুলনামূলক স্বাচ্ছন্দময় হয়েছে।

তিনি বলেন, অস্বস্থিমূলক স্বস্থির মধ্যে এবারের বাজেট ঘোষণা হয়েছে। এ বাজেট নিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না।

এই বাজেটকে বড় বাজেট বলতে নারাজ এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে। একইসঙ্গে বড় অংশের রাজস্ব আদায়ের সুযোগ বাড়ছে। সেই অর্থে বাজেটের আকার খুব বেশি বড় নয় বলেও দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, অনুন্নয়ন ব্যয়ের তুলনায় উন্নয়ন ব্যয় বাড়নোর প্রয়োজনীয়তা বেশি থাকলেও এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে বাজেট প্রস্তাবনায়। অথচ বেশির ভাগ দেশের বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয়ের চেয়ে উন্নয়ন ব্যয়ের পরিমাণ বেশি থাকে। উন্নত দেশগুলোর বাজেটেও একই চিত্র দেখা যায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল এবং নিম্ন মধ্য আয়ের তালিকায় থাকা দেশের বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয়ের তুলনায় উন্নয়ন ব্যয় বড় হওয়া উচিত। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের অর্থ বরাদ্দসহ বিভিন্ন কারণে অনুন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও মনে করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য।

তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরের জন্য শিক্ষা ও প্রযুক্তি, সামাজিক সুরক্ষা এবং পরিবহন খাতে বরাদ্দ বাড়ানোয় সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছে সিপিডি। তবে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়লেও আনুপাতিক হারে বাড়েনি।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

/জিএম/ এফএস/এএইচ/

সম্পর্কিত
চূড়ান্ত বাজেটে তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি
চলতি অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পাস
জিডিপির অনুপাতে বাজেটের আকার অনেক ছোট: মির্জ্জা আজিজ
সর্বশেষ খবর
কুবিতে উপাচার্য-ট্রেজারার-প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, ৩ দফতরে তালা
কুবিতে উপাচার্য-ট্রেজারার-প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, ৩ দফতরে তালা
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: সতর্ক ম্যাক্রোঁর
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: সতর্ক ম্যাক্রোঁর
রবিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে, শনিবারও ক্লাস চলবে
রবিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে, শনিবারও ক্লাস চলবে
অবৈধ ব্যবহারকারীদের ধরতে বাড়ি বাড়ি যাবে তিতাস
অবৈধ ব্যবহারকারীদের ধরতে বাড়ি বাড়ি যাবে তিতাস
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা