X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
তনু হত্যাকাণ্ড

ডিএনএ টেস্টই অপরাধী শনাক্তের শেষ ভরসা

উদিসা ইসলাম
১৭ জুন ২০১৬, ০৭:৪৯আপডেট : ১৭ জুন ২০১৬, ০৭:৫৫
image

তনু হত্যাকাণ্ড কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ টেস্টের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা গবেষকরা। তারা বলছেন, তনুর লাশ থেকে কিছু ডিএনএ নমুনা পাওয়া গেছে। তনুর মা কয়েকজন সন্দেহভাজনের নাম উল্লেখ করেছেন। এ কারণে এখন এই ব্যক্তিদের ডিএনএ টেস্ট করে আগে প্রোফাইল তৈরি করে ডিএনএ-এর সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে।
ডিএনএ সংশ্লিষ্টরা বলছেন,  তনুর  লাশ থেকে পাওয়া ডিএনএ নমুনার সঙ্গে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ না মেলালে এর কোনও কূলকিনারা পাওয়ার সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, তনুর লাশ থেকে পাওয়া ডিএনএ নমুনার সঙ্গে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ডিএনএ এখনও মেলাতে পারেনি মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। অথচ ডিএনএ পরীক্ষার বরাত দিয়ে একমাস আগে সিআইডির কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তনুকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছিল।
এর আগে ১০ মে তনুর মা আনোয়ারা বেগম কুমিল্লায় সাংবাদিকদের, তারপর সিআইডির কর্মকর্তাদের বলেন, সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহী জাহিদ তনুকে ডেকে নিয়ে যান। এরপর আর তনু ফিরে আসেননি। ওই দুই সেনাসদস্য এ হত্যায় জড়িত বলে তিনি মনে করেন বলে জানালেও তনুর লাশ থেকে পাওয়া ডিএনএ স্যাম্পলের সঙ্গে তাদের ডিএনএ টেস্টের ফল ম্যাচে করে দেখার সুযোগ মেলেনি। তিনি আরও বলেন, তনু তো ছোটখাটো মানুষ ছিল না। এত লোকের সামনে দিয়ে তারে কিভাবে জঙ্গলে আনল। সেদিনের ডিউটি রোস্টার দেখেও সন্দেহভাজনদের তালিকা বানানো যায়।

তনুর দেহ থেকে নেওয়া ডিএনএ-এর পরবর্তী স্টেপ সম্পর্কে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবুল বাশার মীর মোহম্মদ খাদেমুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখন সন্দেহভাজনদের সঙ্গে ডিএনএ ম্যাচ করাতে হবে। সংগ্রহ করা ডিএনএর সঙ্গে এই সন্দেহভাজনদের ডিএনএ যদি মিলে যায়, সেটা ভালো। তবে না-ও পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এর বাইরে আর কোনও উপায় নেই। সন্দেহভাজনদের তালিকা করে যতটা সম্ভব ডিএনএ মিলিয়ে দেখতে হবে। নমুনা দেখে বুঝে ফেলার কোনও উপায় নেই, এটা অমুকের সঙ্গে মিলবে।

ড. আবুল বাশার মীর মোহম্মদ খাদেমুল ইসলাম আরও বলেন, সন্দেহভাজনদের ডিএনএ নিয়ে প্রোফাইল করে তনুর থেকে পাওয়া প্রোফাইল ম্যাচ করছে কিনা দেখতে হবে। উন্নত দেশে অনেক ক্রিমিনালের  ডিএনএ প্রোফাইল করাই থাকে। ডাটাবেজ থেকে ম্যাচ করানোর কাজটা করা হয়। আমাদের এখানে তেমন কোনও ডাটাবেজ না থাকায় যাদের সন্দেহতালিকায় রাখা হচ্ছে। তাদের ডিএনএ না নিয়ে কিছু করা যাবে না।

তনুকে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। কর্মকর্তাদের ধারণা, তনুকে সন্ধ্যা পৌনে সাতটা থেকে রাত নয়টার মধ্যে সেনানিবাসের ভেতরেই কোথাও হত্যা করা হয়েছে। পরে তার লাশ ঝোপের মধ্যে ফেলা হয়। এই ঘটনায় তিন থেকে চারজন জড়িত থাকতে পারে। তনুর পরনে থাকা কাপড়ে ডিএনএ টেস্ট করে তিনজনের আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে।

এই প্রতিবেদন ও তনুর মা সন্দেহভাজনের নাম সিআইডিকে জানানোর পরও কেন ডিএনএ মেলানো হলো না—জানতে চাইলে মামলার তদন্ত-তদারক কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার নাজমুল করিম খান বলেন, আমাদের বলা হচ্ছে নিশ্চিত হয়ে ডিএনএ মেলানোর জন্য। সেটা কিভাবে সম্ভব আমি জানি না। সন্দেহভাজনদের ডিএনএ নমুনা পেলেই কেবল মিলিয়ে দেখা সম্ভব। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলটি সেনানিবাসের ভেতরে। এ কারেণে সেখানে অবাধে প্রবেশাধিকার না থাকা ও সেনা সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে অসহায়ত্বের বিষয়ে ইঙ্গিত করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশের শীর্ষস্থানীয় একজন ডিএনএ গবেষক বলেন, যদি কারও ডিএনএ না নেওয়া হয়, তাহলে আপনি কিসের সঙ্গে তনুর লাশের পাওয়া ডিএনএ নমুনাগুলো মেলাবেন। যেকোনও সন্দেহভাজন ব্যক্তির ডিএনএ প্রোফাইল করেইতো পুরো কাজটি হবে। সেক্ষেত্রে যাদের নাম আসছে, তাদের ডিএনএ নমুনা নেওয়া এবং তদন্তে যাদের কথা উঠে আসছে, তাদের তালিকা করেই এই কাজটি করতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতর একটি ঝোপ থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর তার লাশের ময়নাতদন্ত হলেও তাতে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে পারেননি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। তনুর শরীরের জখমের কথা গোপন রাখা হয়। প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠলে আদালতের নির্দেশে ৩০ মার্চ কবর থেকে তনুর লাশ তুলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত হয়। তখন ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তনুর শরীর থেকে কিছু নমুনা নেওয়া হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন বলেছিলেন, প্রাপ্ততথ্য ও পারিপার্শ্বিক আলামত থেকে ধারণা করা হচ্ছে, তাকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে।

এরপর গত ১৬ মে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সিআইডির একাধিক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে, তনুকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে। পরীক্ষায় পৃথক তিন ব্যক্তির শুক্রাণুর আলামত পাওয়া গেছে। ওই তিন ব্যক্তির ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হয়েছে, যেন সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ডিএনএর সঙ্গে যাচাই করা যায়। এরপর বাকি কাজটা কিভাবে হবে, সেটি সন্দেভাজনদের ডিএনএ নমুনা নেওয়া সম্ভব হলে তবেই নির্ধারণ সম্ভব বলে মনে করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

 আরও পড়ুন:

 ধর্ষণ থেকে ‘যৌন সংসর্গ’: তনু হত্যার তদন্ত কোন পথে

তনু হত্যাকাণ্ড: সন্দেহভাজনদের ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ চলছে

‘তনু হত্যার বিচারে সঠিক পদক্ষেপ নেবেন প্রধানমন্ত্রী’

/এমএনএইচ/

আপ - /এসএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!