X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনৈতিক বিবেচনায় মেডিক্যাল কলেজ!

জাকিয়া আহমেদ
২৪ জুলাই ২০১৬, ০৭:৩৪আপডেট : ২৪ জুলাই ২০১৬, ১৯:২৫

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা বাড়ছে দেদারছে। রাজনৈতিক প্রভাবে এসব মেডিক্যাল কলেজ অনুমোদন পাচ্ছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না নীতিমালা। সরকারের নজরদারির অভাবে এসব কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলেও সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ অনুমোদনে কড়াকড়ি আরোপ করেছে এবং কয়েকটি কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশে বর্তমানে বেসরকারি খাতে অনেকগুলো মেডিক্যাল কলেজই রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে। যেখানে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। কেবল মুনাফা অর্জনই যেন এদের লক্ষ্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি নজরদারির অভাবেই রাজনৈতিক সুবিধায় এসব মেডিক্যাল কলেজ অনুমোদন পাচ্ছে এবং একথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই।
উল্লেখ্য, গত ১২ জুন মেডিক্যাল কলেজ পরিচালনার নীতিমালা ভঙ্গ করায় রংপুরের নর্দান মেডিক্যাল কলেজ, গাজীপুরের সিটি মেডিক্যাল কলেজ, আশুলিয়ার নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করার নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, যদিও শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ১৬ জুন এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার। তবে আগামী বছর থেকে নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে নীতিমালা না মানায় চট্টগ্রামের সাউদার্ন মেডিক্যাল কলেজের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত এবং একই জেলার বিজিসি ট্রাস্ট মেডিক্যাল কলেজের আসন সংখ্যা ১২৫ থেকে কমিয়ে ৭৫ করা হয়। নীতিমালা না মানায় মিরপুরে অবস্থিত মার্কস ডেন্টাল কলেজকে ডেন্টাল ইউনিটে পরিণত করা হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে দেশের ৬৮টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শন কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দিতেও পরিদর্শন কমিটিকে নির্দেশ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে বর্তমান সরকারের শাসনামলেও সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, যশোর, পাবনা, নোয়াখালী, কক্সবাজার, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও গাজীপুরে মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর  থেকে জানা যায়,মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা ছিল ৪১ টি, বর্তমানে এর সংখ্যা ৬১টি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিদর্শন কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বলেন, সুচিকিৎসক পাওয়া যাবে না যদি না মেডিক্যাল কলেজের মান বজায় থাকে। মেডিক্যাল কলেজগুলো কেবল সার্টিফিকেট বিতরণের জন্য কার্যক্রম চালাতে পারে না। সরকার এসব মেডিক্যাল কলেজের কার্যক্রমের মান কঠোরভাবে তদারকি করবে। পরিদর্শন কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।

জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিদর্শন কমিটি ইতোমধ্যে ২৫টি বেসরকারি কলেজের পরিদর্শন সম্পন্ন করেছে। আগামীতে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ অনুমোদন, নবায়ন ও আসন সংখ্যা বৃদ্ধির সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের পৃথক পৃথক পরিদর্শন প্রতিবেদন সমন্বিতভাবে আলোচনার মাধ্যমে পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এছাড়াও, গত ১৯ জুন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) আয়োজিত এক সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী  রাজনৈতিক কারণে মেডিক্যাল কলেজ অনুমোদনের কথা স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন,আমি স্বীকার করছি এর মধ্যে কতগুলো রাজনৈতিক কারণেও দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলোর শিক্ষার মান নিয়ে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসব মেডিক্যাল কলেজের মান বাড়াতে কাজ করছি, সরকার এখন এ কলেজগুলোর মান বজায় রাখার উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, মেডিক্যাল কলেজ নীতিমালা ভঙ্গের কারণে কয়েকটি কলেজের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিয়েছি। কিন্তু ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই শুরু করে দেয় হইচই, পড়তে হয় চাপের মুখে। আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালিয়ে যায়।

বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ/ডেন্টাল কলেজ নীতিমালা অনুযায়ী নতুন মেডিক্যাল কলেজকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে হলে অন্তত দুই বছর আগে একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল চালু করতে হবে। যেমন-৫০ আসনের মেডিক্যাল কলেজের কমপক্ষে আড়াইশো শয্যার হাসপাতাল, কলেজের একাডেমিক ভবন ও হাসপাতাল ভবন পৃথক ভাবে থাকতে হবে। কোনও মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ভাড়া বাড়িতে স্থাপন করা যাবে না।

বেসরকারি মেডিক্যাল স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা ২০১১তে বলা হয়েছে, বিভিন্ন বিভাগের জন্য একই ক্যাম্পাসে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধাসহ পৃথক অ্যাকাডেমিক ভবন ও হাসপাতাল থাকতে হবে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক ও বিএমএ’র (বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই মাহবুব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনও মেডিক্যাল কলেজ হতে পারে না। মেডিক্যাল কলেজ হয় ডাক্তার বানানোর জন্য। সেখানে যদি শিক্ষার পরিবেশ এবং সর্বোত্তম শিক্ষা না দিতে পারে তাহলে তো সাফার করবে জনগণ। নিশ্চয় রাজনীতিবিদরা চান না, জনগণ সাফার করুক। যদি এটি সত্য হয়ে থাকে তাহলে এটা মোটেই ঠিক নয়। সরকারকে এ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। অবকাঠামোসহ অন্যান্য সব শর্ত পূরণ করেই মেডিক্যাল কলেজ অনুমোদন পাবে, নয়তো নয়।

রশীদ-ই মাহবুব আরও বলেন, শিক্ষাগত উন্নয়নটা কীভাবে করা যায়, সে বিষয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের সচেষ্ট থাকতে হবে। শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে কলেজ বন্ধ কোনও সমাধান হতে পারে না। আর যদি কর্তৃপক্ষ সার্বিকভাবে ম্যানেজ করতে না পারে তার অর্থ তারা ব্যর্থ। আর সরকারের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি প্রস্তাব থাকবে এ পরিস্থিতির কীভাবে উন্নয়ন করা যায়।

অপরদিকে, মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকারের যা যা করার দরকার সরকার সবই করবে বলেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ( চিকিৎসা শিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়ন) ডা. মো. আবদুর রশীদ। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে যাতে করে এসব মেডিক্যাল কলেজ সতর্ক হয়েছে। মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকার যে কোনও ধরনের পদক্ষেপ নিতে বদ্ধপরিকর।    

 

আরও পড়তে পারেন: খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্য কত দূর?

আরও পড়তে পারেন: ৫১ নেতাকর্মীর পরিবারে ভাগ করে দেয় হুজি নেতা নাজিমউদ্দিন

/জেএ/এমএসএম/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ