X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

দারুল ইহসানের শিক্ষার্থীদের ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে গড়িমসি

রশিদ আল রুহানী
০৩ আগস্ট ২০১৬, ১৮:১৭আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০১৬, ১৮:৩২

দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি মালিকানা দ্বন্দ্ব, অবৈধ আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনাসহ নানা অনিয়মের দায়ে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়েছে ২৬ জুলাই মঙ্গলবার। বন্ধের পরে শিক্ষার্থীদেরকে ভিন্ন কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান। বন্ধের এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে গড়িমসি করছে। এতগুলো শিক্ষার্থীর জীবন  অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাদের উচিত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধের পরের দিন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দারুল ইহসানের শিক্ষার্থীরা চাইলে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করতে পারবে। ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যাপারে সরকার সহযোগিতা করবে। তবে এখনও পর্যন্ত কার কাছে কোনও পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিপূরণ দাবি করবে তাও জানায়নি মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবৈধ প্রায় ১২০টি ক্যাম্পাস রয়েছে। সব ক্যাম্পাস মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। এই ২৫ হাজার শিক্ষার্থীই এখন চোখে মুখে রীতিমত অন্ধকার দেখছেন।
আদালতের রায় অনুযায়ী হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ জানতে ২৬ জুলাই সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা  ধানমন্ডি ক্যাম্পাসে ভিড় জমান।  সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে, ফটকের সামনে সাইনবোর্ডসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব চিহ্ন মুছে ফেলা হয়েছে। ভবনটির বিপরীতে অন্য ভবনের নিরাপত্তা প্রহরী জানান, গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সাইনবোর্ড মুছে ফেলা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যায়টি বন্ধ থাকবে জানিয়ে একটি নোটিশও দেওয়া হয়েছে।

দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের এক শিক্ষার্থী মাহমুদ হাসানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, আমি গত বছর ধানমণ্ডি ক্যাম্পাসে ১ম বর্ষে ভর্তি হয়েছি। নিয়মিত ক্লাসও করছিলাম। কিন্তু এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টি হুট করে বন্ধ হয়ে যাবে বুঝতেও পারিনি। গত কয়েকদিন ধরে শিক্ষকদের ফোন করছি। কিন্তু তারাও সঠিক কোনও তথ্য দিচ্ছেন না। বাবা মা অনেক টাকা খরচ করে এখানে ভর্তি করিয়েছেন। এখন কী করবো বুঝতে পারছি না।

নওঁগা থেকে এসে ভর্তি হওয়া একই বিভাগের অন্য এক শিক্ষার্থীর বাবা ফজলে রাব্বি মোবাইলে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টি অবৈধ হলে বন্ধ হোক। তাতে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু আমার সন্তানকে নিয়ে তো ক্ষতির মুখে পড়েছি। এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সেমিস্টার থেকে ভর্তি করাতে পারবো, নাকি তার পড়াশোনাই বন্ধ হয়ে যাবে বুঝতে পারছি না। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমার ছেলে তিনটি সেমিস্টার শেষ করে ফেলেছে।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা শুনেছি, কিন্তু এতো দেরি কেন হচ্ছে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে? এভাবে কত দিন চলবে?

গত বুধবার (২৭ জুলাই) সচিবালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্য অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইন লঙ্ঘন করার কারণেই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য যার যে ক্ষতি হয়েছে সেই ক্ষতির সব দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। অর্থাৎ যে ছাত্রের লেখাপড়া মাঝপথে থেমে গেছে সে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করতে পারবে। শিক্ষার্থীরা দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইলে সরকার তাদের সহযোগিতা করবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এতে তারা অন্য জায়গায় পড়তে পারবে।

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়াতে শিক্ষার্থীদেরকে ক্ষতিপূরণ দেবে কিনা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিষ্ট্রার আজফার আহমেদ মঙ্গলবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ রাখতে বলেছে, আমরা বন্ধ রেখেছি। পরবর্তী কোনও নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (বিশ্ববিদ্যালয় অধিশাখা) মো. বেলায়েত হোসেন তালুকদার বুধবার বিকেলে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,আমরা শিক্ষার্থীদের বিষয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারিনি। তবে খুব দ্রুতই ইউজিসির সঙ্গে বসে একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নেবো। আমরা চেষ্টা করছি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা যেন অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে। তাদের যেন কোনও সেমিস্টার লস না হয় সেদিকও খেয়াল রাখা হবে।ৱ

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এসব সমস্যায় আইন অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ভিন্ন কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়ে থাকে। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্তে যাব।

আরও পড়তে পারেন: ব্র্যাককে ৪০৪ কোটি টাকা আয়কর পরিশোধের নির্দেশ

 

/আরএআর/ এমএসএম/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া