X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

৫ বছর ধরে হাসপাতালে থাকা মায়ের সেই শিশু মারিয়া নিখোঁজ

জাকিয়া আহমেদ
২৫ আগস্ট ২০১৬, ১১:০৯আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০১৬, ১৪:১৯

হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ শিশু মারিয়া

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক মায়ের পাঁচ বছরের কন্যাশিশু মারিয়া ২৩ আগস্ট নিখোঁজ হয়েছে। মারিয়ার মা মরিয়ম ওরফে মানসুরা গত পাঁচ বছর ধরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসাতালে চিকিৎসাহীন অবস্থায় ছিলেন। সংবাদ মাধ্যমে তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মরিয়মের চিকিৎসার বিষয়ে উদ্যোগী হয়। বর্তমানে কিছুটা সুস্থ হলেও তার যাওয়ার কোনও জায়গা না থাকায় হাসপাতালেই থাকছেন তিনি। এই পাঁচ বছর ধরে সঙ্গে ছিল শিশু মারিয়া।

মানসুরার  চিকিৎসায় এগিয়ে আসা স্বজনেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তার মেয়েটির হদিস নিয়ে। তাদের প্রশ্ন, মেয়েটি গেল কোথায়?

হাসপাতালের বেডে মাকে ভাত বেড়ে দিচ্ছে শিশু মারিয়া

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মানসুরার  দেখাশোনা করা পরিচ্ছন্নকর্মী ফিরোজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২৩ আগস্ট দুপুরের দিকে বোরকা পরা দুজন নারী এসেছিলেন মানসুরাকে দেখতে। মারিয়া তাদের সঙ্গে  গেছে বলে পাশের বেডের রোগীরা জানিয়েছেন। এরপর আর ফিরে আসেনি মারিয়া।’

ফিরোজা বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত থেকে শিশুটির মা মানসুরা কান্নাকাটি করছে। আগে কিছু না বুঝতে না পারলেও  চিকিৎসার পর তিনি এখন অনেকটা সুস্থ। তিনি এখন বুঝতে পারছেন যে,  মেয়ে মারিয়া নাই। মেয়েটি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে কিছুই খাচ্ছেন না, কেবল মারিয়া মারিয়া করছেন।’

এ বিষয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে  বলেন, ‘ঘটনাটি আমি শুনেছি, আমরা তাৎক্ষণিক খোঁজ নিয়েছি, এখনও নিচ্ছি।’

মারিয়ার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে জানিয়ে ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, মানসুরা এখন একেক সময় একেক কথা বলছেন। কখনও বলছেন মেয়ে হারিয়ে গেছে। আবার কখনও বলছেন তিনি মেয়েকে দিয়ে দিয়েছেন। রোগীর অ্যাটেনডেন্টের দায়িত্ব যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের না, কিন্তু মানসুরার বিষয়টি সেনসিটিভ হওয়াতে তার দিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছিলাম। এখনও সেই অবস্থান থেকেই তার মেয়ের বিষয়ে আমরা খোঁজ নিতে চেষ্টা করছি। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয় ।’ বলেন ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া। 

মানসুরা-মারিয়ার অসহায়ত্ব দেখে তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ভেতরকার ফেরিওয়ালা আব্দুল কাশেম। তিনি এ প্রতিবেদককে ফোন করে কাঁদতে থাকেন। বলেন, ‘এতদিন ধরে মেয়েটাকে দেখে রাখছি। প্রত্যেকদিন বিকালে এসে ওর হাতে কিছু একটা তুলে দিয়েছি। চোখের সামনে মেয়েটা বড় হলো। আর আজ মেয়েটাকে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় গেল,কে নিয়ে গেল সেটা যদি জানতাম,মেয়েটাকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতাম।’

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মানসুরা

‘মেয়েকে নিয়ে ৫ বছর ধরে হাসপাতালে আছেন মা, হচ্ছে না চিকিৎসা’ শিরোনামে মানসুরাকে নিয়ে বাংলা ট্রিবিউন প্রতিবেদন প্রকাশ করে গত এপ্রিল মাসে। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। মানসুরা এবং তার মেয়ের সাহায্যে এগিয়ে আসেন অসংখ্য মানুষ। তার চিকিৎসায় গঠিত হয় মেডিক্যাল বোর্ড এবং বিনামূল্যে তার যাবতীয় চিকিৎসা দেয় কর্তৃপক্ষ।  মানসুরার চিকিৎসক শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র রায় বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘তার মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের কিছু কিছু জায়গা শুকিয়ে গেছে। দিনে দিনে এই অবস্থা আরও খারাপ হবে, দেশে তো নয়ই, বিদেশেও এর  চিকিৎসা নেই।’ তাকে পুনর্বাসন করা প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন প্রয়োজন তাকে কোনও এক জায়গায় পুনর্বাসন করা। কিন্তু ওকে যে কোথাও পুনর্বাসন করবো সেটাও আমরা করতে পারছি না।’

এপিএইচ/

আরও পড়ুন:

 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা