X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

নার্সের নির্দেশেই বিপ্লবকে ইনহেলার দিয়েছিল ‘ওয়ার্ড বয়’ সুমন

আমানুর রহমান রনি
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২১:০২আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২১:০৯

 

 

স্পেশাল-ওয়ার্ড-বয়-সুমন
নার্সের নির্দেশেই বিপ্লব মণ্ডলের অক্সিজেন মাস্কের ভেতরে সালবিউটামল ইনহেলার দিয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ‘স্পেশাল ওয়ার্ড বয়’ সুমন। তিন দিনের রিমান্ডে থাকা সুমন শাহবাগ পুলিশকে এই তথ্য জানিয়েছে। এদিকে ঘটনা তদন্তে ঢামেক হাসপাতালের গঠিত কমিটিতে আরও তিনসদস্যকে যোগ করা হয়েছে।

শাহবাগ থানার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ‘ঘটনার সময় ওই ওয়ার্ডে কোনও চিকিৎসক, নার্স ছিলেন না। পাশের ওয়ার্ডের একজন নার্স সুমনকে ইনহেলারটি মাস্কের ভেতরে দিতে বলেছিলেন। তার কথা অনুযায়ী সুমন মাস্কের ভেতরে ওই ইনহেলার দিয়েছিল।’

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুবকর সিদ্দিক বাংলা ট্রিবিউনকে  বলেন, ‘এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমরা হাসপাতালের ৫ থেকে ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এর মধ্যে নার্স, চিকিৎসক রয়েছেন। প্রাথমিকভাবে জেনেছি, ঘটনার সময় ওই ওয়ার্ডে কোনও নার্স, চিকিৎসক ছিলেন না। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে, তাই এখনই সবকিছু বলা যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় নিহতের স্বজনরা আমাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। তাই আমরা তদন্ত করছি। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ প্রমাণিত হলে, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তবে দায়িত্বে অবহেলার কারণে যদি বিপ্লব মণ্ডলের মৃত্যু হয়ে থাকে, তাহলে আইন অনুযায়ী পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। এর সঙ্গে যেই দায়ী থাক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আমরা এখন ময়নাতদন্তের জন্য অপেক্ষা করছি।’

গত শুক্রবার বিকেলে ঢামেক হাসপাতালের ২০০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিপ্লব মণ্ডলের   মৃত্যু হয়। এরপর স্বজনরা অভিযোগ করেন, ভুল চিকিৎসার জন্য তার মৃত্যু হয়েছে। বিপ্লব অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখার মতো কেউ ছিল না। পরবর্তী সময়ে অন্য ওয়ার্ডের নার্সের লিখে দেওয়া ইনহেলার বহিরাগত ওয়ার্ড বয় বা স্পেশাল ওয়ার্ড বয় অক্সিজেন মাস্কের ভেতরে দিয়ে দেওয়ার চার থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে তার মৃত্যু হয়। এরপর স্পেশাল ওয়ার্ড বয় সুমনকে ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ বক্সে সোপর্দ করেন নিহতের স্বজনরা। নিহতের ভাই মিন্টু শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। শনিবার সকালে শাহবাগ পুলিশ সুমনকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে আদালতে চালান করে। এরপর উপ-পরিদর্শক (এসআই) হরিচাদ হাজরা পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সুমন পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তিনি গত সাত মাস ধরে ঢামেক হাসপাতালে কাজ করেন। ঘটনার দিন নিহত বিপ্লব মণ্ডলের ভাই মিন্টু মণ্ডল তাকে ডেকেছিলেন। নার্স যে ইনহেলার লিখে দিয়েছেন, তা মিন্টু বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসে। এরপর মিন্টুকে নিয়ে সে নার্সের কাছে যায় আবার। এরপর নার্স তা সুমনকে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়।

সুমনের এই কথার সত্যতা পাওয়া যায় মিন্টুর কথাতেও। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি ভাইয়ের শ্বাসকষ্ট দেখে দৌড়ে নার্সের কাছে গেলে, তিনি একটা ওষুধ লিখে দেন। এরপর আমি তা বাইরের একটি ফার্মেসি থেকে কিনে নিয়ে তার কাছে ফের যাই। নার্স আমাকে বলেন, এটা সুমন (স্পেশাল ওয়ার্ড বয়) দিতে পারবে। আমরা লাগবে না।’

ঢামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিউরো সার্জারি বিভাগের ডা. অসিত চন্দ্র সরকারের অধীনে ছিল বিপ্লব। শুক্রবার থাকায় তিনিও ওই দিন হাসপাতালে ছিলেন না। বিপ্লবের শ্বাস কষ্টের কথা শুনে নার্স একটা সালবিউটামল ইনহেলার লিখে দেন। ওটা দেখতে ইনজেকশনের মতো এবং অক্সিজেন মাস্কের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করানো হয়। সাধারণত এই কাজটা চিকিৎসক বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সিস্টার করার কথা। কোনোভাবেই ওয়ার্ড বয়ের করার কথা নয়।

শাহবাগ থানার ওসি বলেন, ‘রোগীকে যে চিকিৎসা দেওয়ার কথা, তা ওয়ার্ডের বয় কখনো দেওয়ার অধিকার রাখে না। কিন্তু এক্ষেত্রে তাই ঘটেছে। এটা স্পষ্ট। আমরা ময়নাতদন্তের জন্য ওয়টে করছি। তারপর আরও আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

২০০ নম্বর ওয়ার্ডের সরদার আজিজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অভিযুক্ত সুমনের বোনের স্বামী ঢামেক হাসপাতালের ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের নিয়োগপ্রাপ্ত এমএলএস। তার মাধ্যমে সুমন ঢামেক হাসপাতালে কাজ পেয়েছে। আমাদের ওয়ার্ড মাস্টার বিস্তারিত জানেন। তিনি  এ বিষয়ে বলতে পারবেন।’

এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক (ডিডি) ডা. খাজা আব্দুল গফুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রবিবার পরিচালক হাসপাতালে যোগদান করেছেন। তিনি ঘটনার সময় বিদেশ ছিলেন। তিনি এসেই কমিটিতে আরও সদস্য বৃদ্ধি করেছেন। আগের কমিটি তিনসদস্যের ছিল। এখন একজন প্রফেসারকেও সংযুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে কমিটি ছয় সদস্যের করা হয়েছে।’

গত রবিবার কেরানীগঞ্জে মোটরসাইকেলে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে বের হওয়ার সময় দুর্ঘটনায় পড়েন বিপ্লব। তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। দুর্ঘটনার পর তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু চারদিনের মাথায় তিনি ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন।  শনিবার সকালে তার বাড়িতে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার বিকালে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে ওয়ার্ড বয় অক্সিজেনের সঙ্গে ইনহেলার দেওয়ার কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়। তার গ্রামের বাড়ি কেরানীগঞ্জের শাক্তায়। তার বাবার নাম বিনোদ মণ্ডল। তিনভাইয়ের মধ্যে বিপ্লব সবার ছোট ছিল।

 আরও পড়ুন: ঢামেক হাসপাতালে ‘স্পেশাল দুইশ ওয়ার্ডবয়’ যেন ডাক্তার!

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব
স্থায়ী সংঘাতে পরিণত হচ্ছে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা: তুরস্ক
স্থায়ী সংঘাতে পরিণত হচ্ছে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা: তুরস্ক
ট্রাকের ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত
ট্রাকের ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!