X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ক্রসফায়ারে এগিয়ে পুলিশ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৮:৩২আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৮:৩৪

ক্রসফায়ার

গত জানুয়ারি থেকে শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ক্রসফায়ার ও বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় র‌্যাবের চেয়ে এগিয়ে আছে পুলিশ। শুক্রবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদনে’ এ চিত্র উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়,আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে ও ক্রসফায়ারে গত নয় মাসে ১৫০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে র‌্যাবের সঙ্গে ক্রসফায়ারে ৩৪ জন, পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে ৬১ জন, ডিবি পুলিশের ক্রসফায়ারে ১১ জন, পুলিশ ও বিজিবি’র ক্রসফায়ারে ১জন,  কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সোয়াত টিমের অপারেশনে (হিট স্ট্রং-২৭) ৩ জন ও অপারেশন স্টর্ম-২৬ অভিযানে ৯জন, পুলিশের নির্যাতনে ৭জন, ডিবি পুলিশের নির্যাতনে ১জন, রেল পুলিশের নির্যাতনে ১জন, পুলিশের গুলিতে ৯ জন, বিজিবি’র গুলিতে ১জন ও থান্ডারবোল্ট অভিযানে যৌথ বাহিনীর গুলিতে ৬ জন মারা গেছেন। এছাড়া থানা হাজতে অসুস্থ হয়ে ৪ জন এবং ২ জনের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীর অভিযোগের ভিত্তিতে আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাদা পোশাকে আসা ব্যক্তিরা আইন -শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ৭৫ জনকে আটক করে নিয়ে যান। এরমধ্যে পরবর্তী সময়ে ৮ জনের লাশ পাওয়া যায়। তিনজন ফেরত আসলেও বাকি ১৮ জনকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো আটকের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। গত নয় মাসে কারা হেফাজতেও ২৩ জন কয়েদি ও ৩৪ জন হাজতি মারা গেছেন।

গত জানুয়ারির পর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৬৯৬টি। এসব ঘটনায় মারা গেছেন ১৪৩ জন। আহত হয়েছেন আরও ৯ হাজার ১৯০ জন। ইউপি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার চারটি গ্রামের প্রায় ১০০ হিন্দু পরিবারকে গ্রাম ছাড়া করা হয়। কক্সবাজার সদর খুরুশকুল ইউনিয়ন পরিষদে জয়ী হতে না পেরে হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক বাড়ি-ঘর ও মন্দির ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে ১৫৯টি সংঘাতের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৫ জন। আহত হয়েছেন আরও এক হাজার ৬৭৩ জন। গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জনের। সহিংসতা দমনে প্রশাসন দেশের বিভিন্নস্থানে ২০ বার ১৪৪ ধারা জারি করেছিল।

এ বছর নির্যাতনের ঘটনাও আশঙ্কাজনক। গত নয় মাসে ৭৫৪ জন শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ৩৩০ জন শিশুকে নিষ্ঠুর ও ভয়াবহ কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। নানা ধরনের নির্যাতনের পর ৩৬ জন শিশু আত্মহত্যা করেছে। এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ২৮জন নারী। এরমধ্যে মারা গেছেন ১জন। সালিশ ও ফতোয়ার মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮জন নারী। গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৯জন। এরমধ্যে ২৪ জনের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়। শারীরিক নির্যাতনের পর মারা গেছেন ৫জন গৃহকর্মী। দুইজন আত্মহত্যা করেছেন।

সীমান্তে বিএসএফ-এর গুলিতে মারা গেছেন ২১ জন বাংলাদেশি। আহত হয়েছেন ২৮ জন। অপহরণের শিকার হয়েছেন আরও ১৯জন। অপহরণের পর বিজিবি’র মধ্যস্থতায় দেশে ফেরত এসেছেন ১৮জন। 

যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৯৩ জন নারী। এরমধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৯৩ জন। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৯৬ জন নারীকে। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন আরও তিন নারী। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আরও ৩০৫ জন নারী। তাদের মধ্যে ২০৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৩৯ জন নারী। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আরও ৫৯ নারী।

যৌন হয়রানির শিকার হয়ে ৬ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন ৫ জন নারী ও ৬ জন পুরুষ। এছাড়া ১৭৬ জন নারী-পুরুষ হয়রানি ও লাঞ্চনার শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪৬৬ জন নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৬ জন নারীকে। ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন নারী। এছাড়া ৪৬ জন নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে ।

দেশের বিভিন্নস্থানে হিন্দু ধর্মাবলম্বি মঠের অধ্যক্ষ, সাধু, দর্জি, পুরোহিত ও সেবায়েতসহ সাতজনকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। একই কায়দায় হত্যার উদ্দেশ্যে মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষককে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ৫৮টি বাসস্থানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ৭৯ টি প্রতিমা ভাংচুর, পুজা মন্ডপ ও মন্দিরে হামলা এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৭ জন।

নির্যাতন, হুমকি, হয়রানি ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে গত নয় মাসে ৯৫ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার ও বাধার সম্মুখীন হয়েছেন।

ক্রসফায়ারে পুলিশ এগিয়ে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এক্ষেত্রে কখনও পুলিশ এগিয়ে থাকে, আবার কখনও র‌্যাব এগিয়ে থাকে। এটা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর একটা কৌশলও হতে পারে। সামগ্রিক অর্থে ক্রসফায়ার কখনও থেমে থাকেনি। তাছাড়া সমাজের অন্যান্য শাখাগুলোর মতো আইন -শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর মধ্যেও এনিয়ে এক ধরনের অনৈতিক প্রতিযোগিতা চলছে। দিন দিন এ অবস্থার অবনতি ছাড়া উন্নতি কখনও হয়নি।

/জেইউ/এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়