X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতাই জরুরি

জাকিয়া আহমেদ
০১ অক্টোবর ২০১৬, ০৬:৩০আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০১৬, ০৬:৩২





স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতাই জরুরি বিশ্বজুড়ে অক্টোবর মাস স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসেবে পালিত হয়। ১ অক্টোবর ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মাত্র সচেতনতার অভাবেই দেশে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া নারীদের চিকিৎসায় বিলম্ব হয়। সচেতনতার অভাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্যান্সার ধরা পড়ে দেরিতে। যখন চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার আর তেমন কোনও সম্ভাবনা থাকে না, তখন তারা চিকিৎসকের কাছে আসেন।

তারা বলছেন, স্তন ক্যান্সারের বিভিন্ন ঝুঁকি বা ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ সর্ম্পকে যদি মানুষকে সচেতন করা যায়, তাহলেই কেবল স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে প্রাথমিকভাবে অনেক কিছু করা সম্ভব। সে কারণে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগ শনাক্ত করা।

স্তন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রাথমিক লক্ষণগুলো দেখা মাত্রই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত এবং চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। আর নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে এ অসুখের লক্ষণ শনাক্ত করা সম্ভব। এ সময় চিকিৎসা করালে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেড়ে যায়। এতে শারীরিক কষ্ট এবং চিকিৎসা খরচ দুটোই কমে যায়।

স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাসকে কেন্দ্র করে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশে ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার, শিক্ষা এবং সচেতনতার অভাবে ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) প্রকাশিত এক জরিপ থেকে দেখা যায়, সারাবিশ্বের মতো যে কোনও রোগের মধ্যে বাংলাদেশের নারীদের মধ্যেও স্তন ক্যান্সার এক নম্বরে। আবার নারী-পুরুষ মিলিয়ে হিসাব করলে স্তন ক্যান্সার শীর্ষে। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর হারেও এই রোগ এক নম্বরে অবস্থান করছে।

প্রতিবছর বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, ১৪ হাজার ৮২২ জন। আর মারা যায় ৭ হাজার ১৩৫ জন। সেই হিসাবে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ২২ হাজার ৭১৫ জন নারী নতুন করে আক্রান্ত হয় এবং মারা যায় ৯১ হাজার ৩৩৯ জন।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যান্সার নিবন্ধনের ২০১৪ সালের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নারী ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্তন ক্যান্সার (২৭ দশমিক ৪) আর স্তন ক্যান্সারে ভোগা নারীদের গড় বয়স ৪৩ বছর।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বৈশ্বিক অঙ্গীকারে আমাদের দেশের সরকারও স্বাক্ষর করেছে। চলতি বছরেই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের ১১টি দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা কলম্বো ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছেন। এই ঘোষণায় ক্যান্সারসহ অসংক্রামক রোগের পরিস্থিতির তীব্রতা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পর্যায়ে এইসব রোগের সেবাপ্রদান, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে শনাক্ত ও চিকিৎসার আওতায় আনা, স্ক্রিনিং ও কাউন্সিলিং সেবা নিশ্চিত করার প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে। আর এ জন্য পরিবারের সদস্যদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর পাশে থাকতে হবে। তাকে ভালোবাসা-মায়া দিয়ে আগলে রাখতে হবে।’

ডা. হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘যারা ক্যান্সার নিয়ে কাজ করেন, তাদেরও সচেতনতার বিষয়টির ওপর জোর দিতে হবে। সচেতনতাই পারে অনেক ক্ষেত্রে প্রতিরোধের কাজ করতে।’

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতাই জরুরি জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারি ও বেসরকারিভাবে যারা ক্যান্সার নিয়ে কাজ করেন, তাদের উচিত সচেতনতা বৃদ্ধিতে সমন্বিতভাবে কাজ করা। সরকারের অনেক প্রকল্প হয়ত রয়েছে এ বিষয়ে; কিন্তু সেগুলো তৃণমূলে কতটা পৌঁছায়, সেটা ভেবে দেখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘ক্যান্সার হাসপাতালগুলোকে সরকার অনুদান দেয়। হাসপাতালগুলোকে যদি সরকার নির্দেশ দেয়, নির্দিষ্ট পরিমাণ অনুদানের টাকা কেবলমাত্র সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যয় করতে হবে, তাহলে বাংলাদেশের গ্রাম, জেলাশহরগুলোতে সচেতনতা সৃষ্টি করা সম্ভব।’

সরকারি ফান্ডের অর্থ কীভাবে ব্যয় হচ্ছে, তা তাদের জানা নেই উল্লেখ করে এই চিকিৎসক বলেন, ‘সরকারি ফান্ড ব্যয় হচ্ছে; কিন্তু কীভাবে ব্যয় হচ্ছে, সেগুলো আমরা জানি না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতরের সময় এসেছে, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের তৃণমূলে যেতে হবে নতুবা স্তন ক্যান্সারকে আমরা রোধ করতে পারবো না।’

স্তন ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠা এবং ‘অপরাজিতা সোসাইটি অ্যাগেইনস্ট ক্যান্সার’ সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ তাহমিনা গফুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নারীদের স্তন ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার প্রধান বাধা সচেতনতা এবং গোপনীয়তা। লোকলজ্জা, সমাজের ভয় এ রোগ শনাক্তে নারীদের মূল প্রতিবন্ধকতা।’ তিনি বলেন, ‘এমনও দেখেছি, সংসার ভেঙে যাওয়ার ভয়ে মেয়েরা মরণব্যাধি এই অসুখের কথা বলতে ভয় পান। নারীদের এই ভয় জয় করতে হবে। শরীরের অন্য আর দশটা অসুখের মতোই এটাও একটা অসুখ। চিকিৎসা করালে এটি ভালো হয়, এই বোধটা সবার জন্য জরুরি; বিশেষ করে পরিবারের সদস্যদের এ বিষয়টা জানা খুবই জরুরি।’

‘সচেতনতার কোনও বিকল্প নেই। সচেতনতাই পারে স্তন ক্যান্সার রুখতে’ বলেন, তাহমিনা গফুর।
/জেএ/এবি/

আরও পড়ুন

১ কোটি মানুষের জন্য ১ জন ভাসকুলার সার্জন!

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা