X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মকবুলের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে ফেনী যাচ্ছেন ট্রাইব্যুনাল কর্মকর্তা

আমানুর রহমান রনি
২১ অক্টোবর ২০১৬, ২০:১১আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০১৬, ২০:৪৯

জামায়াতের নতুন আমির মকবুল আহমাদ জামায়াতে ইসলামীর নতুন আমির মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগ অনুসন্ধানে শিগগিরই ফেনী যাবেন ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান আব্দুল হান্নান খান বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

আব্দুল হান্নান খান বলেন, ‘মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ওঠার পর বৃহস্পতিবার আমি তা অনুসন্ধান করতে জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি। লিখিত সেই নির্দেশে বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদন ও জামায়াতের প্রতিবাদ সংযুক্ত করা হয়েছে। আমাদের কর্মকর্তা প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে যে প্রতিবেদন দেবেন, তার ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান বলেন, ‘বিষয়টি যাচাই-বাছাইয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান করা হচ্ছে। মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে যেসব এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, আমাদের কর্মকর্তা অনুসন্ধানের জন্য সেসব এলাকায় যাবেন।’

গত ১৮ অক্টোবর ‘জামায়াতের নতুন আমির: ৭১-এর রাজাকার-কমান্ডার, আছে হত্যার অভিযোগও’ শিরোনামে প্রথম বাংলা ট্রিবিউনে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর দেশের অন্যান্য গণমাধ্যমও এ নিয়ে খবর ছাপায়।

বাংলা ট্রিবিউনের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় মকবুল আহমাদ স্বাধীনতাবিরোধী চক্রান্তে যুক্ত ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। ফেনী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মীর আবদুল হান্নানের বরাত দিয়ে বাংলা ট্রিবিউনে বলা হয়, ‘৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন মকবুল আহমাদ রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। তারই নির্দেশে ফেনীর স্থানীয় রাজাকার, আলবদর বাহিনীর সদস্যরা ফেনী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা ওয়াজ উদ্দিনকে চট্টগ্রামে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।’

দাগনভূঁঞা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উপজেলা কমান্ডার শরিয়ত উল্যাহ বাঙ্গালী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মকবুল আহমাদের নির্দেশে দাগনভূঁঞা উপজেলার জয়লস্কর ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ায় আগুন দিয়ে ১০ জনকে হত্যা করা হয়।’ তিনি তদন্তসাপেক্ষে এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকায় মকবুল আহমাদের বিচার দাবি করেন।

কেন্দ্রীয় ও ফেনী জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, মকবুল আহমাদের গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার দাগনভূঁঞা উপজেলার পূর্বচন্দ্রপূর ইউনিয়নের ওমরাবাদে। পেশায় তিনি স্কুলশিক্ষক ছিলেন। ফেনী মডেল হাইস্কুলের শিক্ষকতা থেকে অবসরের পরই জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই গ্রামের বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দেন তিনি। পারিবারিক জীবনে চার সন্তানের জনক মকবুল আহমাদ। রুকন থেকে পর্যায়ক্রমে দলটির অঞ্চলভিত্তিক পরিচালক, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও নায়েবে আমিরের দায়িত্ব পালন করেন।

জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী গ্রেফতারের পর বিগত প্রায় ৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি দলটির ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ সময় তিনি আত্মগোপনে থেকেই দল পরিচালনা করেন।

জামায়াতের নেতাকর্মীদের কাছে 'মুখলিস' (সৎ) চরিত্রের মানুষ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন মকবুল আহমাদ। দলের নেতাকর্মীদের কাছে একাত্তরে তার অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা কোনও কিছু বলতে রাজি হননি।

রাজনৈতিক জীবনে ফেনী-২ আসন থেকে ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে যান মকবুল আহমাদ। প্রচারণার আড়ালে থাকা জামায়াতের নতুন আমিরকে নিয়ে অন্যান্য দলের মধ্যেও আলোচনা কম। যদিও গত মাসে তার আমির হওয়ার খবর প্রকাশের পর তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এম এ আউয়াল এমপি বলেছিলেন, 'মকবুল আহমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের চিত্র খতিয়ে দেখা হোক।'

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থাকে তার বিষয়ে তদন্ত করতেও আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

এদিকে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান আব্দুল হান্নান খানের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার (২১ অক্টোবর) গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়েছে জামায়াত। দলের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ওই বিবৃতিতে বলেন, ‘মকবুল আহমাদ সম্পর্কে আবদুল হান্নান যেসব অভিযোগ করেছেন, তা সম্পূর্ণ অসত্য। তিনি তার কর্মজীবনের সূচনায় ফেনীর দুটি স্বনামধন্য উচ্চ বিদ্যালয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন। নির্মল চরিত্রের এই শিক্ষক তার ছাত্র-ছাত্রী ও সহকর্মী এবং সর্বস্তরের মানুষের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ও সজ্জন। এমন একজন খ্যাতিমান শিক্ষকের রাজাকার থাকা কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। একজন শিক্ষকের রাজাকার থাকার কথা কোনও অবোধ শিশুও বিশ্বাস করবে না। তাই ওই এলাকার রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করার জন্য আমি আবদুল হান্নানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

গত সোমবার আমির হিসেবে শপথ নেওয়ার পর মকবুল আহমাদ বলেন, ‘দেশে বিরাজমান সমস্যা ও সংকটের সমাধান আমাদের সবাইকে মিলেই করতে হবে। কোনও একটি দলের পক্ষে কিংবা একা সরকারের পক্ষ্য এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। দল ও মতের ঊর্ধ্বে উঠে সবার সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে চলমান সংকট ও সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমি সরকারের প্রতি আবারও আহ্বান জানাচ্ছি। আর এ জন্য সব দল ও পক্ষের অংশগ্রহণে একটি সফল জাতীয় সংলাপের কোনও বিকল্প নেই। তবে জাতীয় সংলাপকে সফল করতে হলে সংলাপের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন।'

/এআরআর/এআরএল/

আরও পড়ুন: বৃহস্পতিবার যা ঘটেছিল সিটিসেল অফিসে

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!