X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১
তাভেল্লা সিজার হত্যা

চার্জশিট বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে, র‌্যাব বলছে জেএমবি জড়িত

নুরুজ্জামান লাবু
২২ অক্টোবর ২০১৬, ০০:৩১আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০১৬, ০১:৪৯

তাভেল্লা হত্যাকাণ্ড রাজধানীর গুলশানে ইতালিয়ান নাগরিক তাভেল্লা সিজার হত্যায় বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। অপরদিকে র‌্যাবের দাবি এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নব্য জেএমবি জড়িত। গত বৃহস্পতিবার র‌্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ফলে এ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।  

গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত ইতালিয়ান নাগরিক তাভেল্লা সিজার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপির স্থানীয় নেতাসহ সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গত ২৭ জুন আদালতে সাত জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্রে থাকা আসামিরা হলেন- ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এমএ কাইয়ুম, তার ভাই আব্দুল মতিন, তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল ওরফে শুটার রুবেল, রাসেল চৌধুরী ওরফে চাক্কি রাসেল, মিনহাজুল আরেফিন রাসে ওরফে ভাগনে রাসেল, শাখাওয়াত হোসেন শরিফ ও সোহেল ওরফে ভাঙারি সোহেল।

চার্জশিট দেওয়ার প্রায় চার মাসের মাথায় র‌্যাব বলছে, তাভেল্লা সিজারকে গুলি করে হত্যা করে নব্য জেএমবি। নব্য জেএমবির বাংলাদেশ প্রধান সারোয়ার জাহান ওরফে আব্দুর রহমান ওরফে শাইখ আবু ইব্রাহীম আল-হানিফের নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়। সারোয়ার জাহানের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া নথি বিশ্লেষণ করে র‌্যাব কর্মকর্তাদের দাবি, তাভেল্লা ছাড়াও নব্য জেএমবি আরও অন্তত ২২টি হামলা চালিয়েছে। 



র‌্যাবের আইন ও গণমধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যা পেয়েছি তা প্রকাশ করেছি। এখন এটা তদন্তের বিষয়। পুলিশ কি করবে বা করবে না, তা তাদের নিজস্ব বিষয়। এনিয়ে আমাদের কোনও ভাষ্য নেই।’

জানা গেছে, তাভেল্লা সিজারকে হত্যার মাধ্যমে দেশে বিদেশি নাগরিক ও ভিন্ন মতালম্বী ও ধর্মালম্বীদের ওপর হামলা শুরু হয়। বিভিন্ন হামলার ঘটনায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) দায় স্বীকার করলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয় এসব হত্যার সঙ্গে আইএস বা জঙ্গি সংগঠনগুলির সম্পৃক্ততা নেই। তবে তাভেল্লা হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের ২৬ অক্টোবর মিনহাজুল আরেফিন রাসেল, রাসেল চৌধুরী, তামজিদ আহম্মেদ রুবেল এবং শাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। গত বছরের ৪ নভেম্বর বেনাপোল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় আব্দুল মতিনকে, যিনি বিএনপি নেতা কাইয়ুমের ভাই ও স্থানীয় বিএনপি নেতা।

ডিবির একটি সূত্র জানায়, তাভেল্লা সিজার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে তামজিদ, রাসেল চৌধুরী, মিনহাজুল ও শাখাওয়াত আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মতিনসহ তারা সবাই কারাগারে রয়েছে। অভিযোগপত্রে নাম আসা বাকি দুই জন কাইয়ুম কমিশনার ও সোহেল এখনও পলাতক রয়েছেন।

তাভেল্লা হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, একজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করে দেশে-বিদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করাই ছিল হামলাকারদের লক্ষ্য। তাভেল্লাকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করে তামজিদ। তাকে সহায়তা করে রাসেল চৌধুরী ও মিনহাজুল। মিনহাজুল মোটরসাইকেল চালিয়েছিল।

অভিযোগপত্রে এই হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে আব্দুল মতিনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মতিন ও তার ভাই কাইয়ুম কমিশনার এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতা। হামলাকারীরা অস্ত্র ভাড়া নিয়েছিল ভাঙারি সোহেলের কাছ থেকে। আর মোটরসাইকেলের মালিক শাখাওয়াত। যদিও এই হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি এখনও উদ্ধার হয়নি।

অপরদিকে র‌্যাব বলছে, নব্য জেএমবির নেতৃত্বে তাভেল্লা ছাড়াও গত বছরের ৩ অক্টোবর রংপুরের কাউনিয়ায় জাপানি নাগরিক ওসি কোনিও, ৫ অক্টোবর পাবনার ঈশ্বরদীতে ফাদার লুক সরকারকে হত্যা চেষ্টা, ২২ অক্টোবর রাজধানীর গাবতলীতে পুলিশ চেকপোস্টের সময় এএসআই  ইব্রাহীম মোল্লাকে হত্যা, ২৩ অক্টোবর তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা, ৪ নভেম্বর নবীনগর-কালিয়াকৈর সড়কে শিল্প পুলিশের কনস্টেবল মুকুল হত্যা, ১৮ নভেম্বর দিনাজপুরে ইতালীয় ধর্মযাজক ড. পিয়েরো পারোলারি সামিওকে হত্যাচেষ্টা, ২৬ নভেম্বর বগুড়ার শিবগঞ্জে শিয়া মসজিদে হামলা, ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাটির মসজিদে বোমা বিস্ফোরণ চালানো হয়। এছাড়া চলতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড়েরর দেবীগঞ্জে পুরোহিত যগেশ্বর দাসাধিকারীকে হত্যা, ২৫ মে গাইবান্ধায় দেবেশ চন্দ্র প্রামাণিক হত্যা, ৫ জুন নাটোরের বড়াইগ্রামে খ্রিস্টান পল্লীতে সুনীল গোমেজ হত্যা, ৭ জুন ঝিনাইদহের নলডাঙ্গায় পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীকে হত্যা, ১০ জুন পাবনার হেমায়েতপুরে খ্রিস্টান ধর্মযাজক নিত্যরঞ্জন পান্তে হত্যা, ১৫ জুন মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে হত্যাচেষ্টা, ১ জুলাই ঝিনাইদহে রাধামদন মঠের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাসকে হত্যা, একই দিন গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারীতে হামলা ও ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মসজিদে হামলা চালানো হয় আবু ইব্রাহীম আল-হানিফের নির্দেশনায়।

বিষয়টি নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উল্লেখ্য, রংপুরের কোনিও হোসি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাতেও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের ছোট ভাই রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য রাশেদ উন নবী খান বিপ্লব এবং কোনিওর বন্ধু হুমায়ুন কবির হীরাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এদের একজনের কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও নেওয়া হয়। পরে জানা যায়, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জঙ্গিরা জড়িত। গ্রেফতার হওয়া একাধিক জঙ্গি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছে।

/এনএল/এসএনএইচ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিলেছে ২৭ বস্তা টাকা
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিলেছে ২৭ বস্তা টাকা
বিকল্প অর্থনীতি ও গ্রাম্য কায়কারবার
উপন্যাসবিকল্প অর্থনীতি ও গ্রাম্য কায়কারবার
ইরান-সমর্থিত ইরাকি সেনা ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ, নিহত ১
ইরান-সমর্থিত ইরাকি সেনা ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ, নিহত ১
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধ
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধ
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি