X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘জিডি করেন, কিছু ফেরত পাবেন না'

উদিসা ইসলাম
২৪ অক্টোবর ২০১৬, ১৭:০৮আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০১৬, ১৭:৪০

মলম পার্টির প্রতীকী ছবি (সংগৃহীত) ধানমণ্ডি সাত মসজিদ রাস্তা দিয়ে ৯/এ সড়কের আবাসিক এলাকায় ঢুকতেই আচমকা ব্যাগে টান । হুড়মুড়িয়ে রিকশা থেকে পড়ে যান সেলিনা আখতার। রাত তখন সাড়ে নয়টা। হঠাৎই টের পেলেন চোখে কেউ কিছু লাগিয়ে দিয়েছে। রিকশাওয়ালাও ততক্ষণে চম্পট। পেশায় এনজিওকর্মী সেলিনার ব্যাগে সেলফোন, বেশকিছু টাকা আর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিল। তিনি ধাতস্থ হয়ে প্রথমে থানায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। শরীরের নানা জায়গা ছুলে যাওয়া আর চোখে কিছু না দেখতে না পাওয়ায় আশপাশ থেকে দৌড়ে আসা কিছু মানুষ তাকে পাশের ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন। তাদের পরামর্শে থানায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও বাড়ির লোকজন তাকে নিরুৎসাহিত করেন। তাদের কথা, জিডি করে কেউ কোনোদিন কিছু ফেরত পায় না, শুধু শুধু সময় নষ্ট। প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকলেও এ কথায় দমে যান তিনি। পরবর্তীতে আর জিডি করা হয়নি তার।

স্কুটি নিয়ে রাত সাড়ে দশটায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে উত্তরা ফিরছিলেন সিলভিয়া। বনানী পার হওয়ার পর থেকেই দুইটা মোটরবাইক তার পাশাপাশি এগিয়ে যাচ্ছিল। স্পিড একটু বাড়িয়ে  দ্রুত গন্তব্যের পথে এগুচ্ছিলেন তিনি। নিকুঞ্জ থেকে একটু সামনে যেতেই শান্ত রাস্তা দেখে ওই মোটরবাইকের আরোহীরা ইচ্ছা করে তাকে রাস্তায় ফেলে দেয়। পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে যন্ত্রণা টের পেতে শুরু করার মুহুর্তেই আরও টের পান চোখে কোনও কিছু লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। যত বেশি চোখ ডলতে থাকেন তত যন্ত্রণা বাড়ে, চারপাশ অন্ধকার হয়ে যায়। চিৎকার করলে একটা প্রাইভেট কার থামে এবং তাকে উদ্ধার করে পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার করাতে সাহায্য করে। সে মুহুর্তে পুলিশের একটি টহল গাড়ি আসে। তাদের কাছে সহায়তা চাইলে তারা চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন এবং পাশের একটি বড়সড় ফার্মেসিতে তাকে পৌঁছে দেওয়ার অফার দেন। সিলভিয়া মামলা করার কথা বললে, টহল পুলিশ তাকে নিরুৎসাহিত করেন এবং বলেন, ‘মেয়ে মানুষ অযথা হয়রানির শিকার হবেন, আপনার ব্যাগের জিনিসপত্র ফেরত পাওয়ার কোনও চান্স নেই।’

সিলভিয়া বলেন, টহল পুলিশের ওই কর্মকর্তা সহায়তাতো দিলেনই না, সহায়তা নিতে চাইলেও না করলেন এবং আমাকে বললেন, ‘আপনি এত রাতে বাইক নিয়ে কী করেন সে প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন তো?’

ওপরের দুটো ঘটনা হচ্ছে রাজধানীতে অব্যাহতহারে বেড়ে যাওয়া মলম পার্টির হাতে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া দুই যাত্রীর বর্ণনা মাত্র। এরকম অসংখ্য ঘটনা প্রতিদিন ঘটে যাচ্ছে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি পথেই। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠলে হঠাৎ করে গাড়ি নষ্টের ভান করে নির্জন সড়কে বা সুবিধামতো জায়গায় থামিয়ে এর চালকের সহায়তায় মলম পার্টির লোকদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও অনেকেরই জানা। 

গত কয়েকবছর ধরে রাস্তাঘাটে চোখে মলম বা মরিচের গুড়া দিয়ে ব্যাগ ও সঙ্গের জিনিসপত্র ছিনতাই করে নেওয়ার এমন প্রবণতা বেড়েই চলেছে। অথচ এসব নিয়ে পুলিশের বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। উল্টো তাদের সহযোগিতা চাইলে এ ঘটনায় ‘অভিযোগ করে কী হবে’ কিংবা ‘এদের তো আর খুঁজে পাওয়া যাবে না’ বা ‘আপনার মালামাল তো আর ফিরে পাবেন না’ জাতীয় কথাই ক্ষতিগ্রস্তদের বেশিরভাগ সময় শুনিয়ে থাকেন তারা।

খোঁজ নিতে গিয়ে রাজধানীর আগারগাঁও, ধানমণ্ডি, তেজগাঁও, কাফরুল, পল্লবী ইত্যাদি এলাকাতেও এধরনের বেশকিছু ঘটনার কথা জানা গেছে যাতে ভুক্তভোগীরা মলমপার্টির হামলার শিকার হলেও থানায় অভিযোগ করেননি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গত এক বছরের  অপরাধ তালিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত ৯ মাসে মলম পার্টিসংক্রান্ত অপরাধ তালিকায় রয়েছে মাত্র তিনটি। যদিও বাংলা ট্রিবিউনের অনুসন্ধানে কেবল আগাওগাঁও থেকে মিরপুর ১৪ পর্যন্ত এলাকায় গত দুই ঈদে কমপক্ষে দশটি ঘটনার কথা জানা গেছে।

প্রতিদিন মলম পার্টির হাতে ছিনতাইয়ের অসংখ্য ঘটনা ঘটছে অথচ মহানগরীর সব থানা মিলে গত ৯ মাসে মাত্র তিনটি অপরাধের কথা নথিভুক্ত হয়েছে কেন এ প্রশ্নের উত্তরে ডিএমপি’র দায়িত্বশীল একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ‘ভুক্তভোগীরা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) না করার কারণে তাদের কাছে এসবের হিসাব থাকে না। তবে ভুক্তভোগীরা বলছেন, পুলিশের কাছে গিয়ে যথেষ্ট সহায়তা না পাওয়া ও হয়রানির ভয় থাকায় তারা জিডি করতে থানায় যাননি। এই দুই তথ্য বিচার করে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, নিরাপত্তা একটি বোধ, পুলিশের কাছে গেলে আপনি নিরাপদ এবং সহায়তা পাবেন এটুকু আশ্বস্ত হতে না পারলে থানায় যাবেন না। সেটাই স্বাভাবিক।

কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিকদার মোহাম্মদ শামীম হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের কাছে যদি কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেন সেটা না নেওয়ার কোন কারণ নেই। ছিনতাই বা মলমের ঘটনায় হারানো জিনিস ফেরত না পাওয়ায় ভুক্তভোগীরা আসেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাস্তা থেকে ব্যাগ ছিনতাইয়ের পর সেটা পাওয়া খুব সহজ না। কিন্তু তার জিনিসগুলো যে হারিয়েছে সেটার ডক্যুমেন্টের জন্যও থানাকে অবহিত করা সংশ্লিষ্ট নাগরিকের কর্তব্য।

অপরাধ বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যক্তি যদি ভরসা না পায়, যদি তার হারানো জিনিস ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে  এটা বুঝতে না পারে তাহলে সে এই জিডি করাটাকে হয়রানিই মনে করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের এটা মনে করার কারণ হচ্ছে পুলিশ দৃশ্যত এমন কোনও দৃষ্টান্ত সচরাচর দেখাতে পারে না। এমনকি টেলিফোন সেট খুঁজে পাওয়ার কোড নম্বর থাকার পরও সেই কাজটি সহজে গুরুত্ব দিয়ে করার নজির না থাকার কারণেই এই অপরাধগুলোর সংখ্যা অজানা থেকে যাচ্ছে।’

/ইউআই/টিএন/আপ-এআরএল/

আরও পড়ুন: 

রাজনৈতিক জীবনের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি পেয়েছি: ওবায়দুল কাদের

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
দুই জনপ্রতিনিধির নাম বলে সাভারে সাংবাদিকের ওপর কেমিক্যাল নিক্ষেপ
দুই জনপ্রতিনিধির নাম বলে সাভারে সাংবাদিকের ওপর কেমিক্যাল নিক্ষেপ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
গরমে পুড়ছে খুলনা বিভাগ
গরমে পুড়ছে খুলনা বিভাগ
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি