X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১
আশকোনায় অভিযান

মাত্র ৬ ঘণ্টায় নারী জঙ্গিদের বুঝিয়ে আত্মসমর্পণ করায় পুলিশ

আমানুর রহমান রনি
২৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ০২:৫৪আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ০২:৫৭

জঙ্গি আস্তানা ঘিরে থাকার পর আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়
দীর্ঘ সময় ধরে জঙ্গিবাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হলেও মাত্র ৬ ঘণ্টার চেষ্টাতেই দুই নারী জঙ্গিকে আত্মসমর্পণ করাতে সফল হয়েছে পুলিশ। জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করাতে পুলিশের সর্বোচ্চ চেষ্টার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। তবে নারী জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করাতে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ‘অতিরিক্ত ঝুঁকি’ নিয়েছেন এবং এর ফলে জঙ্গিরা বড় ধরনের হামলা চালাতে পারত। অভিযানে সফলতার পাশাপাশি ‘পদ্ধতিগত ঝুঁকি’ নিয়ে পুলিশের মধ্যে চলছে আলোচনা। সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে।

গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার বিকাল পর্যন্ত রাজধানীর দক্ষিণখান থানাধীন পূর্ব আশকোনার ৫০ নম্বর বাসায় প্রায় ১৬ ঘণ্টা অভিযান চালায় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)-এর স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ। রাতভর বাড়িটিকে ঘেরাও করে রাখা হয়। সকাল ১০টার দিকে জেবুন্নাহার শীলা ও তৃষামনি নামে দুই নারী জঙ্গি তাদের শিশুসন্তানসহ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। অভিযানের সময় সুইসাইডাল ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটায় আত্মঘাতী নারী জঙ্গি শাকিরা। বাংলাদেশে এই প্রথম কোনও নারী জঙ্গি সুইসাইডাল ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটালো। জঙ্গি আস্তানা থেকে দুটি সুইসাইডাল ভেস্ট উদ্ধার করা হয় এবং উদ্ধার করা ১৯টি গ্রেনেড নিষ্ক্রিয় করে বোম ডিস্পোজাল টিম।

আশকোনার ঘটনায় দক্ষিণ খান থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। মামলাটি বর্তমানে সিটিটিসি তদন্ত করছে। মামলায় আটজনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৩-৪ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

জঙ্গি আস্তানার জানালার কাঁচের কাছে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন পুলিশ কর্মকর্তারা

অভিযানে অংশ নেওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘জঙ্গিদের আত্মসমর্পনের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। সেই চেষ্টার মাধ্যমেই দুই নারীকে আত্মসমর্পণ করানো গেছে। দীর্ঘ সময় ধরে তারা জঙ্গিবাদের আদর্শে ছিল। মাত্র ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় তাদের দুজনকে বুঝিয়ে আত্মসমর্পণ করানো গেছে। তবে সেখানে পদ্ধতিগত ঝুঁকি ছিল। সেই ঝুঁকি নিয়েই কাজ করা হয়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথমে হ্যান্ডমাইকের মাধ্যমে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। কয়েক দফায় তাদের সঙ্গে হাতে-হাতে চিরকুট বিনিময় করে আত্মসমর্পণের কথা বলা হয়। এমনকি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা আস্তানার জানালার পাশে গিয়ে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের বিষয়ে আলোচনা করেন। পরবর্তীতে দুই নারীর স্বজন ও সেনাবাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও তাদের সঙ্গে নারী জঙ্গিদের বুঝানোর চেষ্টা করেন। এরপর দুই নারী আত্মসমর্পণের জন্য রাজি হন। তারা বের হয়ে আসেন।’

নারী জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের বিষয়ে সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, শুরু থেকেই বাড়ির ভেতরে থাকা জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। প্রথমে তারা আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এরইমধ্যে মিরপুরের রূপনগরের অভিযানে নিহত জঙ্গি মেজর জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শিলার মা ও ভাইকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায় পুলিশ। শিলার মা হ্যান্ড মাইকে মেয়েকে বেরিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানাতে থাকেন। বেশ কিছুক্ষণ অনুরোধ জানানোর পর বেলা ১১টার দিকে আস্তানা থেকে শিশু সন্তান নিয়ে বেরিয়ে আসে শিলা। তার সঙ্গে পলাতক আরেক জঙ্গি মুসার স্ত্রী তৃষাও তার শিশু সন্তান নিয়ে বেরিয়ে আসে। বেরিয়ে আসার পর তাদের কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও একটি চাকু উদ্ধার করেন সিটিটিসির সদস্যরা।

নারী জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করাতে  কর্মকর্তারা ‘অতিরিক্ত ঝুঁকি’ নিয়েছেন বলে আলোচনা চলছে পুলিশের মধ্যেই। তাদের মতে, আস্তানার জানালার এপাশে-ওপাশে দাঁড়িয়ে জঙ্গিদের সঙ্গে কথা বলা ছিলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির। যে আলোচনায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নিয়েছিলেন। এ সময় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকতাদের ওপর জঙ্গিরা যেকোনও ধরণের হামলা চালাতে পারত। এ ধরণের কিছু ঘটলে তা নিয়ে বেশি সমালোচনা হতো দেশে। তবে অপারেশন সফল হওয়ায় বিষয়টি শুধু এখন পুলিশের মধ্যেই আলোচনায় রয়েছে।

জানালার পাশে দাঁড়িয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়

পুলিশ জানিয়েছে, আস্তানার ভেতরে যে পরিমাণ বিস্ফোরক ছিল তা দিয়ে যেকোনও ধরণের হামলা চালাতে পারত জঙ্গিরা।  যে নারী আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে, সেও যদি জানালার পাশে এসে কোনও গ্রেনেড নিক্ষেপ করত তাহলে পুলিশের অনেকেই আহত হতেন। বাস্তবে হামলার ঘটনা না ঘটলেও একাধিক কর্মকর্তারা উপলব্ধি করছেন, পুলিশের এমন ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হয়নি। কারণ গুলশানের হলি আর্টিজানের একটি গ্রেনেডে দুই পুলিশ নিহত হয়েছিলেন ও আহত হয়েছিলেন অন্তত ৩০ জন। সেই একই ধরনের ২০টি গ্রেনেড ছিল আশকোনার জঙ্গি আস্তানায়। জঙ্গিরা জানালা দিয়ে যেকোনও একটি বিস্ফোরণ ঘটালে সিটিটিসি ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনেকেই আহত হতেন। এমনকি এর চেয়েও বড়কিছু ঘটতে পারত বলে মনে করছেন পুলিশের অনেকেই।

প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। পুলিশ জঙ্গিদের ধাওয়া করে বেকারির ভেতরে প্রবেশ করলে জঙ্গিরা একটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) মো. রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি মো. সালাহ উদ্দিন খান নিহত হন। আশকোনার জঙ্গি আস্তানায় আত্মঘাতী গ্রুপ থাকায় এমন হামলার আশঙ্কা আরও বেশি ছিল। অভিযানের সময় সুইসাইডাল ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয় শারিকা ওরফে তাহিরা নামে এক নারী জঙ্গি। পরবর্তীতে পুলিশের গোলাগুলিতে আফিফ কাদেরী আদর নিহত হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ‘বোম ডিস্পোজাল ইউনিটের পরিদর্শক শফিক আহমেদ জঙ্গি আস্তানায় চিরকুট নিয়ে গিয়েছিলেন। এটাও ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ জঙ্গিরা সবসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেই টার্গেট করে এবং পুলিশের ওপর হামলার জন্যই পরিকল্পনা করে। তাদের সামনে এভাবে যাওয়া ছিল ঝুঁকিপূর্ণ।’

/এআরআর/এএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইরান-সমর্থিত ইরাকি সেনা ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ, নিহত ১
ইরান-সমর্থিত ইরাকি সেনা ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ, নিহত ১
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধ
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধ
দ্বিতীয় বিয়ের চার দিন পর বৃদ্ধকে হত্যা, দুই ছেলে পলাতক
দ্বিতীয় বিয়ের চার দিন পর বৃদ্ধকে হত্যা, দুই ছেলে পলাতক
লখনউ ও চেন্নাইয়ের অধিনায়ককে ১২ লাখ রুপি জরিমানা 
লখনউ ও চেন্নাইয়ের অধিনায়ককে ১২ লাখ রুপি জরিমানা 
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা