রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদরা যদি সত্যিকার অর্থে চান তাহলে যে কোনও মুহূর্তে দুর্নীতি রোধ করা যায়। তবে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। আর ঘুষ লেনদেনকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) রাজধানীর বিএফডিসিতে ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার এসব কথা বলেন।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম এ সবুর।
ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্টের গ্রান্ড ফিনালে অনুষ্ঠানে দুর্নীতিবিরোধী এ ছায়া সংসদে ‘রাজনৈতিক সচেতনতা নাকি জনসচেতনতা দুর্নীতি রোধ করতে পারে’ এ নিয়ে বিতার্কিকরা তর্কযুদ্ধে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম দুদকের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদক সার্বিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি জনসচেতনতার ওপরেও জোর দিচ্ছে দুদক।
দুর্নীতি প্রতিরোধকে দ্বিতীয়যুদ্ধ হিসেবে উল্লেখ করে দুদক কমিশনার বলেন,‘দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সবাই মিলে যুদ্ধ ঘোষণা করলে দুর্নীতিবাজরা পালিয়ে যাবে। ঘুষ লেনদেনকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও জনসচেতনতা দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া পৃথিবীর কোনও দেশেই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের নজির নেই। দুর্নীতি দমনে কঠিন আইন প্রণয়নসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনের ক্ষেত্রে দুর্নীতিবিরোধী পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তাদের যদি শাস্তি দেওয়া না যায় তাহলে দুর্নীতি দমন কার্যক্রম সফল হবে না। দুর্নীতিকে জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম এবং প্রধান সমস্যা হলো দুর্নীতি। এই দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব হলে সুশাসন ও আইনের শাসন নিশ্চিত করা সম্ভব। সরকারসহ সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি ঠিকই কিন্তু দুর্নীতির দুষ্টচক্র থেকে এখনও বেরিয়ে আসতে পারছি না। তাই ভবিষ্যতে যারা দেশের নেতৃত্ব দেবে তাদের সচেতন করা এবং সৎ ও সুনাগরিক হিসেবে তৈরি করার জন্যই আমরা এ ধরনের আয়োজন করে থাকি।’
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম এ সবুর বলেন, ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং জনসচেতনতা একটি অপরটির পরিপূরক। রাজনীতিবিদরাই দেশ গঠনে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা জনগণের প্রতিনিধি। তাই তাদের জনগণের কথা বলা উচিত। কিন্তু আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখেছি ব্যাংকিং সেক্টরে বড় বড় দুর্নীতির সঠিক কোনও বিচার হয়নি।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল ও এটিএন বাংলার উপদেষ্টা নওয়াজীশ আলী খান।
বাছাইয়ের মাধ্যমে দেশের ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয় বছরব্যাপী এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, রানার আপ ইবাইস ইউনিভার্সিটি ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
অনুষ্ঠান শেষে বিতার্কিকদের ট্রফি, ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও নগদ অর্থ পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়। চ্যাম্পিয়ন দল এক লাখ টাকা, রানার আপ ৫০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারী দলকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
/এসএমএ/টিএন/