X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১
বাংলা ট্রিবিউনকে একান্ত সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

গণতন্ত্র হত্যার চেষ্টা হলে নিরাপত্তা বাহিনী চুপ থাকবে না

জামাল উদ্দিন
১৯ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:৫৯আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০১৭, ১৬:১৭

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বিএনপি-জামায়াত জোট গণতন্ত্র হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, ‘সুযোগ পেলেই এই জোট নাশকতা চালিয়ে দেশকে অকার্যকর করে দিতে চায়। দেশের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব নিরাপত্তা বাহিনীর। তাই কেউ নাশকতার চেষ্টা কিংবা গণতন্ত্র হত্যার চেষ্টা করলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও চুপচাপ বসে থাকবেন না। কারণ তারা দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষার শপথ নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনীকে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবহারের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বুধবার বিকালে নিজ কার্যালয়ে বসে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের তৃতীয় দফায় সরকার গঠনের তিন বছর পূর্তি প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন ২০১৪ সালে তৃতীয় বারের মতো সরকার গঠন করি, তখন প্রথমেই খেয়াল করেছি, বিএনপি-জামায়াত জোট আগুনসন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশকে অচল করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে এই জোট রাস্তা কেটে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক-প্রবাহ লাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে। তবে দেশের জনগণ, নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিএনপি-জামায়াতের এই নাশকতার বিরুদ্ধে সেদিন ঘুরে দাঁড়িয়েছিল।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আগুনসন্ত্রাস চালিয়েও যখন বিএনপি-জামায়াত জোট সফল হলো না, তখন তারা বিদেশি নাগরিক তাভেল্লা সিজার ও ওসি কুনিওকে হত্যা করেছে। ওসি কুনিও ছিলেন একজন নিরীহ জাপানি। তিনি বাংলাদেশে এসে বাঙালিই হয়ে গিয়েছিলেন। ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তাকেও হত্যা করা হলো। এরপর ধর্মগুরু ও পুরোহিতকে হত্যা করা হলো। বান্দরবানে বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মগুরুকে হত্যা করা হলো। পাবনা ও দিনাজপুরে খ্রিস্টান ফাদারকে হত্যার প্রচেষ্টা দেখলাম। রাজশাহীতে শিয়া মসজিদের মুয়াজ্জিনকে হত্যার দৃশ্য দেখলাম। আমরা দেখলাম মসজিদে গিয়ে বোমা হামলা ও গুলির দৃশ্যও।’

এক প্রশ্নে জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রাম নেভাল মসজিদে বোমা হামলার ষড়যন্ত্রের রহস্য উন্মোচন করেছিল আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী। এ সবই ছিল, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও সব মানুষের ভেতর একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য। যেন একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। কিন্তু আমাদের ধর্মপ্রাণ মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী—সব নাগরিক ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই হীন প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করে দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আর্চ বিশপ থেকে শুরু করে আমাদের মাওলানা ফরীদ উদদীন মাসঊদসহ সবাই এক কথাই বলেছে, কোনও ধর্মেই হত্যার স্থান নেই। সন্ত্রাসের জায়গা নেই। যারা ধর্মের নামে এগুলো চালাচ্ছে, তারাই অধর্মের কাজ করছে।’

দেশে একের পর এক জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ টেনে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘হলি আর্টিজানের মতো জায়গায় নৃশংস ঘটনা ঘটেছে। শোলাকিয়ার মাঠে বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা-প্রচেষ্টা হয়েছে। সেখানে যদি জঙ্গিরা বোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে পারতো, তাহলে কত হাজার মানুষ যে পদদলিত হয়ে মারা যেতো, তা একমাত্র আল্লাহই জানেন! আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সাহসিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে সেদিন ওই জঙ্গিদের ধরতে পেরেছিলেন। যারা ঘটনা ঘটাতে চেয়েছিল, তারা সফল হয়নি। আমাদের গোয়েন্দারা একের পর এক জঙ্গিদের অবস্থান চিহ্নিত করে অভিযান চালিয়ে তাদের ধরতে সক্ষম হয়েছেন। এ সময় যারা পুলিশের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল, তাদের অনেকেই নিহত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন ইমাম, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, সাংবাদিক ও পেশাজীবীসহ জনগণকে ঘুরে দাঁড়ানোর ডাক দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই আহ্বানে সবাই সাড়া দিয়েছিল। পাড়ায় পাড়ায় সন্ত্রাস নির্মূল ও জঙ্গি প্রতিরোধ কমিটি হয়েছে। এসব কমিটি ও নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টায় জঙ্গিবাদ নির্মূলে আমরা সফল হয়েছি।’

গাইবান্ধা-১ আসনের এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড বিএনপি-জামায়াত জোটের ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে। বিষয়টির তদন্ত চলছে। তাই আপাতত এ বিষয়ে কিছু বলব না।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিপথগামিতা তদন্তের জন্য আলাদা সংস্থার প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যারা নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্বে রয়েছেন, তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণ করেননি। নারায়ণগঞ্জের মতো ঘটনায় র‌্যাব বলেনি যে, তাদের লোকগুলো নির্দোষ। যে যতখানি দোষ করেছে, তার ততটুকু সাজা হয়েছে। আমরা মনে করি, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কাজটি ঠিকভাবেই করেছে। যারা অপরাধী, তাদের আইনের হাতে তুলে দিয়েছে।’

কাউন্টার টেররিজম ইউনিট প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের আরও সম্প্রসারণ হবে। এখন আমরা ডিএমপির তত্ত্বাধানে এটি গঠন করেছি। এটিকেই জাতীয় পর্যায়ে সম্প্রসারিত করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে আমাদের।’

 আরও পড়ুন: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুই বিভাগ

/এমএনএইচ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি: প্রধানমন্ত্রী
খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি: প্রধানমন্ত্রী
মননের প্রথম আইএম নর্ম, হাতছানি জিএম নর্মের
মননের প্রথম আইএম নর্ম, হাতছানি জিএম নর্মের
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার হুমকি আব্বাসের
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার হুমকি আব্বাসের
টি-টোয়েন্টির পাওয়ার প্লেতে ১২৫ রান করে হায়দরাবাদের বিশ্ব রেকর্ড!
টি-টোয়েন্টির পাওয়ার প্লেতে ১২৫ রান করে হায়দরাবাদের বিশ্ব রেকর্ড!
সর্বাধিক পঠিত
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও