X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিটিজেন চার্টার: ‘সতর্ক’ পুলিশও অসতর্ক

উদিসা ইসলাম
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২২:২৮আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৭:৪৬

 

শাহবাগ থানা বিভিন্ন থানায় পুলিশের দায়িত্ব পালন বিষয়ে নির্দেশনা সংবলিত সিটিজেন চার্টার থাকলেও ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) থেকে শুরু করে কনস্টেবল, কেইউ এই বিষয়ে সতর্ক নন। তারা মুখে নিজেদের ‘সতর্ক’ দাবি করলেও বাস্তবচিত্র ভিন্ন। প্রকৃতপক্ষে এর কোনও কার্যকর ভূমিকা নেই। যদিও বিশ্লেষক ও পুলিশের বড় কর্মকর্তারা বলছেন, সিটিজেন চার্টার জরুরি জিনিস, প্রতিনিয়ত আপডেট ও পালন করা দুই-ই জরুরি।

পুলিশের জবাবদিহিতা অন্য যেকোনও পেশার থেকে বেশি বলে দাবি করলেও বেশিরভাগ সদস্যই তাদের কাজের সাধারণ নির্দেশনা সম্পর্কেই ধারণা রাখেন না। একইভাবে এ বিষয়ে নাগরিকদেরও কোনও ধারণা নেই। সবই চলছে, যে থানা যেভাবে চালায়, এই নীতিতে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সিটিজেন চার্টার নামে প্রতিটি অধিদফতর-দফতরের একটি বিশেষ নাগরিক অধিকার রক্ষার নির্দেশনা থাকলেও সেটি কেবল মুখের বিষয়ই রয়ে গেছে পুলিশের ক্ষেত্রে।

রাজধানীর সাতটি থানায় ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ পুলিশ সদস্যই সিটিজেন চার্টার সম্পর্কে জানেন না।  থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, তারা চার্টারের কথা অক্ষরে অক্ষরেই পালন করেন। যদিও থানার পুলিশ সদস্যদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘স্যারেরা জানেন’ বলে আর কিছু বলতে পারেনি।

রাজধানীর তেজগাঁও, শেরেবাংলানগর, মোহাম্মদপুর, দারুসসালাম, শাহবাগ, ভাসানটেক, কাফরুল থানায় গিয়ে এ সম্পর্কে জানা বোঝা পুলিশ সদস্য হাতে গোনা মিললেও তারা নিজেদের আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে সতর্ক দাবি করছেন। চার্টার কী, কোথায় ঝোলানো থাকা দরকার, নেই কেন এসব প্রশ্নে তাদের জবাব, হয় ‘স্যারেরা জানেন’, নাহলে ‘আমরা আগের চেয়ে সতর্ক’। এই বাড়াবাড়ি রকমের ‘সতর্ক’ শব্দের ব্যবহারের মধ্যে ‘পা পিছলে’ যাওয়ার গল্পও কম শোনা যায় না। এখনও থানায় নারীদের সামনে পেলে আপত্তিকর কথা বলার বিষয়ে অফিসিয়ালি নিষেধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। পুলিশ রিফর্ম প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্তরা বলছেন, পুলিশকে নারীবান্ধব করার চেষ্টা ষোলো আনা করা হয়েছে। সবটা সফল হওয়া সম্ভব হয়নি।

কোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোয় কার কী ধরনের সেবা,  কোন ধরনের সেবায় কী পরিমাণ খরচ হবে, যথাযথভাবে সেবা না পেলে তার প্রতিকারের জন্য জনগণ কোথায়, কিভাবে অভিযোগ করবে, সিটিজেন চার্টারে তার বিস্তারিত বিবরণ থাকে। পুলিশের  জন্য নির্ধারিত চার্টারে বলা আছে, সব থানায় মেট্রেপলিটন এলাকার জন্য কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার, সংশ্লিষ্ট জয়েন্ট কমিশনার, ডিসি, এডিসি ও জোনাল এসি;   জেলার জন্য পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, এএসপি (হেডকোয়ার্টার্স), সংশ্লিষ্ট সার্কেল এএসপি এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার টেলিফোন নম্বর প্রকাশ্য স্থানে প্রদর্শিত হবে।

থানাগুলো ঘুরে এমন কোনও বোর্ড নজরে আসেনি। এ বিষয়ে ভাসানটেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা গতকাল (১১ফেব্রুয়ারি ২০১৭) মিটিং করে এই বোর্ড ঝোলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি, হয়ে যাবে। সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী কেউ কাজের নির্দেশনাগুলো বলতে না পারার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার খোঁজ নিতে হবে। এটা জানার তো কথা, কেন বলতে পারছে না, সেটি আমি কথা বলে দেখব।’

শাহবাগ থানার ভেতরে বিভিন্ন নির্দেশনা সংবলিত চার্ট

শাহবাগ থানা, ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে তিনটা। ডিউটি অফিসারের রুমে ঢুকতেই চোখে পড়ে সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে থানার আচরণ নিয়ে কিছু লেখা। কিন্তু সিটিজেন চার্টারের কোনও কপি ঝোলানো নেই। দেয়ালে ঝুলছে ‘জিডি করতে টাকা লাগে না’, ‘কেউ টাকা চাইলে কোন নম্বরে ফোন করা লাগবে’, সেই নম্বর ও তথ্য।

শাহবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জাফর আলী বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশের মতো জবাবদিহি আর কোনও পেশায় নেই।’ তিনিও ‘সতর্ক’ শব্দটি ব্যবহার করে বলেন, ‘আমরা অনেক বেশি সতর্ক। সিটিজেন চার্টার বিষয়ে সহযোগিতা আসা নাগরিকদের জানানোর কোনও পদক্ষেপ আছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডিউটি অফিসারের ঘরে চার্টার ঝোলানো আছে।’

ডিউটি অফিসারের ঘরে গিয়ে দেখা যায় কিছু হেল্প ডেস্কের নির্দেশনা ঝোলানো আছে, তাতে ধুলাময়লা। সেখান থেকে একটি লাইন জানতে চাইলে মান্নান বলেন, ‘আমরা এগুলো পালন করি। সিটিজেন চার্টারের কোনও একটি নির্দেশনা বলতে পারেন কিনা,  জানতে চেয়ে সেখানে উপস্থিত একাধিক পুলিশ সদস্যকে প্রশ্ন করেও উত্তর পাওয়া যায়নি। থানায় বড় কর্তাদের নম্বর লিখে রাখার কথা সেটি নেই কেন, এমন প্রশ্নে তিনি কোনও জবাব দেননি।

চার্টার অনুযায়ী, শিশু/কিশোর অপরাধী সংক্রান্ত বিষয়ে ‘শিশু আইন, ১৯৭৪’-এর বিধান অনুসরণ করা হবে। তারা যেন কোনোভাবেই বয়স্ক অপরাধীর সংস্পর্শে না আসতে পারে, তা নিশ্চিত করা হবে। এ জন্য দেশের সব থানায় পর্যায়ক্রমে কিশোর হাজতখানার ব্যবস্থা করা হবে। যদিও রাজধানীর ৪৯টি থানাতেই এখন পর্যন্ত এটি নিশ্চিত করা যায়নি।

পুলিশকে এত ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরও কেন নারীবান্ধব করা সম্ভব হচ্ছে না? জানতে চাইলে পুলিশ রিফর্ম প্রকল্পের অন্যতম উদ্যোক্তা ফৌজিয়া খন্দকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কিছু পরিবর্তন তো এসেছেই। তবে, যাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, তাদের পক্ষ থেকে অধীনস্তদের শেখানোর যে দায়িত্ব, সেটি তারা পালন করছেন না।’

 আরও পড়ুন: গাড়ির ধাক্কায় সাংবাদিক মামুনুর রশীদ আহত

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আজকের আবহাওয়া: ঢাকাসহ ৩ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
আজকের আবহাওয়া: ঢাকাসহ ৩ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী
ইউরোপা লিগ থেকে বিদায়ের ভালো দিক দেখছেন লিভারপুল কোচ
ইউরোপা লিগ থেকে বিদায়ের ভালো দিক দেখছেন লিভারপুল কোচ
রাশিয়ায় বোমারু বিমান বিধ্বস্ত
রাশিয়ায় বোমারু বিমান বিধ্বস্ত
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন