X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘গ্রিক দেবীর পরনে কি শাড়ি ছিল!’

উদিসা ইসলাম ও চৌধুরী আকবর হোসেন
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২২:৩১আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৯:৫৩

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে স্থাপিত গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্যটি ‘গ্রিক দেবী থেমিসের অনুরূপ’ উল্লেখ করে তা অপসারণের দাবি তুলেছে হেফাজতে ইসলামসহ বেশ কয়েকটি ইসলামি দল। আর সেটির নির্মাতা মৃণাল হক পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, ‘গ্রিক দেবীরা কি শাড়ি পরতো?’ তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যা করা হয়েছে সবটাই হাইকোর্ট কর্তৃপক্ষের চাহিদা মতো করা। আমি ন্যায় বিচারের প্রতীক স্থাপনের কাজ করেছি মাত্র।’

তার এই ব্যাখ্যারও  জবাব হাজির করেছেন হেফাজতের আমির আহমদ শফির প্রেস সেক্রেটারি মাওলানা মুনির আহমদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গ্রিক দেবী থেমিসের অনুরূপতো বানানো হয়েছেই। এটাকে আবার শাড়ি পরিয়ে বাঙালিয়ানা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাতে অদূর ভবিষ্যতে এটা আমাদের বাংলাদেশি ঐতিহ্য হিসেবে স্থান পায়।’

এদিকে শুরুতে  ভাস্কর্যটির অপসারণের দাবি নমনীয় থাকলেও এখন তা হুমকিতে রূপ নিয়েছে। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে হেফাজত বলেছে, ৯৫ শতাংশ মুসলমানের দেশে মসজিদের নগরী ঢাকাকে মূর্তি/ভাস্কর্যের নগরীতে পরিণত করার ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই বাস্তবায়িত হতে দেওয়া হবে না। এই স্মারকলিপিকে মূল্যায়ন করা না হলে,  শাপলা চত্বরের মতো আরেকটি জনসমুদ্রের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

মৃণাল হক বলেন, ‘এসব ব্যাখ্যা হাজির করলে আমার পাল্টা কিছু বলার  নেই। আমি একা নিজ উদ্যোগে দেশজুড়ে তিন চারশ ভাস্কর্য বানিয়েছি। এরজন্য আমি কোথাও কিছু দাবি করিনি। আদালত এই কাজটি যেভাবে চেয়েছে, সেভাবে করে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই আদল বিশ্বজুড়ে ন্যায়বিচারের প্রতীক। বিদেশে বেশিরভাগ নারীরূপী ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে গাউন ও মেক্সি পরা দেখা যায়। আমাদের দেশে নারীদের পোশাক শাড়ি বলে সেটিই ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে ধর্মীয় ব্যাখ্যা আসছে কীভাবে।’

হেফাজতের আপত্তির জায়গা কোনটি, তা স্পষ্ট করতে বললে সংগঠনটির নেতা মুনির আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের আপত্তি হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্ট হচ্ছে জাতীয় গুরত্বপূর্ণ স্থান। এটা বিশেষ কোনও ব্যক্তি বা ধর্মাবলম্বীদের জন্য নয়।সেখানে একটি মূর্তি বসানো হয়েছে। বলা হচ্ছে- এটা ন্যায় বিচারের প্রতীক। সেই মূর্তি হচ্ছে গ্রিক দেবী থেমিসের অনুরূপ। আমাদের জাতীয় সত্ত্বা, ইসলাম, ঐতিহ্যে ন্যায় বিচারের অনেক কিছু আছে।’

ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখা যায়, পশ্চিমা দেশগুলোর প্রায় সব আদালতের সামনে যে ভাস্কর্য রয়েছে, তা  দেখতে একইরকম। লেডি জাস্টিস বা জাস্টিসিয়া নামের এই ভাস্কর্য সেসব দেশে ন্যয়বিচারের প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।

বিভিন্ন দেশে গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সুপ্রিম কোর্টে স্থাপিত ভাস্কর্যকে হেফাজতিরা মূর্তি বা প্রতিমা বলছে, যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক নির্জলা মিথ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। এই ভাস্কর্য জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বহু দেশের উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। এর সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। যে ইরানে ইসলামি হুকুমত ও শরিয়া আদালত বিদ্যমান রয়েছে,সেখানেও উচ্চতর আদালতের দেয়ালে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ন্যায়বিচারের প্রতীক ‘জাস্টিসিয়া’ ভাস্কর্য খোদাই করা রয়েছে।’

আদালতে কোনও নির্দিষ্ট ধর্মবর্ণের কারও বিচার হয় এমন নয় উল্লেখ করে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইসলামে ভাস্কর্য অবৈধ বলা হয় নাই। এই ভাস্কর্যটি উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে বিধায় এর সকল সিদ্ধান্ত প্রধান বিচারপতির এবং তার সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হবে ।’

গত মঙ্গলবার হেফাজতের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান বিচারপতির বরাবর একটি স্মারকলিপি দেয়। এ বিষয়ে আদালত কর্তৃপক্ষ কী ভাবছে, জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল  সৈয়দ  আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এবিষয়ে কোনও নির্দেশনা এখনও আমার কাছে আসেনি। মঙ্গলবার আমরা হেফাজতের স্মরকলিপি পেয়েছি।’

পরিকল্পনায় যা ছিল সে অনুযায়ী ভাস্কর্যটির নির্মাণ শেষ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মৃণাল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শেষ বললে শেষ। নাহলে করার আছে অনেক কিছু। আমি এসব নিয়ে আর কথা বলতে চাই না।’ নানাবিধ হুমকি আসে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কখনও আমার নিরাপত্তার কথা কেউ ভাবেনি, বলেনি। আমি বাংলার অলিগলিতে ৩০০/৪০০ জায়গায় ভাস্কর্য নির্মাণ করেছি। আমার অন্য কোনও চাওয়া ছিল না।’

/ইউআই/ এপিএইচ/

 আরও পড়ুন: 

ইসলামী ব্যাংকের মালিক কে?

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি