X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোগীদের অসহায়ত্ব দেখলে মন খারাপ হয়ে যায়: ডা. রায়হানা আউয়াল

জাকিয়া আহমেদ
০৮ মার্চ ২০১৭, ১৮:২৪আপডেট : ০৮ মার্চ ২০১৭, ২২:০৩

দেশের প্রথম নারী প্লাস্টিক সার্জন অধ্যাপক ডা. রায়হানা আউয়াল কাজের ক্ষেত্রে পাওয়া না পাওয়ার হিসাব কখনও করিনি। আমি খুব অল্পতে সন্তুষ্ট  থাকি। কোনও রোগী যদি আমাকে একটা ভালো কথা বলে যান, সেটাই আমার পাওয়া। তবে অনেক রোগী একসঙ্গে এলে তাদের আর্তনাদ ও অসহায়ত্ব দেখে মন খারাপ হয়ে যায়।এ কথাগুলো বললেন, দেশের ইতিহাসে  প্রথম নারী প্লাস্টিক সার্জন অধ্যাপক ডা.রায়হানা আউয়াল।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে (ঢামেক) প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে এমএস কোর্স চালু হয় ২০০৩ সালে । প্রথম বছর ওই বিভাগে শিক্ষার্থী ছিলেন মাত্র চার জন। তাদেরই একজন প্লাস্টিক সার্জন অধ্যাপক ডা.রায়হানা আউয়াল। বর্তমানে তিনি ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রেড ইউনিটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সহকর্মীদের কাছে তিনি ‘সুমি আপা’ নামেই বেশি পরিচিত।

সম্প্রতি অধ্যাপক ডা. রায়হানা আউয়ালের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘কিছু না ভেবেই প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে ঝাঁপ দিয়েছিলাম। এখন মনে হয় আমি ভুল করিনি। তবে কষ্ট লাগে যখন দেখি, চিকিৎসাধীন মৃত রোগীর পাশে বসে স্বজনেরা কাঁদছেন। কারণ ওই সময়ই নিজের  আত্মীয় স্বজনের কথা মনে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি যে একজন নারী, সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারি না। আইসিইউ, এইচডিইউসহ প্রতিটি ফ্লোরে যখন মা-বাবার পাশে শিশুরা অসহায় মুখ করে বসে থাকে,তখন মনে হয় কেন চিকিৎসক হতে গেলাম?’

দেশের প্রথম এই নারী  প্লাস্টিক সার্জন বলেন, ‘আমি কখনও প্রচার চাইনি। এমনিতেই পরিবারকে সময় কম দেওয়া হয়। হাসপাতালের নির্ধারিত সময় ও প্রাইভেট প্রাকটিসের বাইরে জরুরি মুহূর্তে হাসপাতাল থেকে কল পেলেই চলে আসি। তাই প্রচার হলে আরও মানুষ আমাকে চিনবে। তখন রোগী বেড়ে যাবে। কিন্তু বেশি প্রচার করে বেশি রোগী পেতে চাইনা।’

তিনি বলেন, ‘প্রথম নারী প্লাস্টিক সার্জন হলেও নামের আগে ‘নারী’ শব্দটি ব্যবহার করতে চাই না। কারণ প্লাস্টিক সার্জন পুরুষ নাকি নারী সেটা সামনে আনার দরকার নাই। আমি একজন সার্জন হিসেবেই কাজ করি। আমার সহকর্মীরা কখনও আমাকে নারী প্লাস্টিক সার্জন হিসেবে দেখেন না। আমিও সেটা কখনও অনুভব করি না। প্রতিটি জায়গায় আমি আমার মতো করে কাজ করতে পেরেছি। আমি যে একজন নারী সেটা আমাকে কখনও ভাবতে হয়নি,কোনও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হইনি। আমাকে যা করতে বলা হয়েছে আমি সেটাই করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সব জায়গাতেই মেয়েরা আগে ঘর সামলে পরে বাইরের কাজ করে। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, মেয়েরা কাজের প্রতি অনেক মনোযোগী থাকে। তারা কাজ ফেলে চলে যায় না। এগুলো কোনও নারীবাদী কথা না। জীবন থেকে নেওয়া।’

পেশা হিসেবে প্লাস্টিক সার্জারির কাজ কেন বেছে নিলেন? এ প্রশ্নের জবাবে রায়হানা আউয়াল বলেন, ‘আমি প্রথমে জেনারেল সার্জন নিয়ে পড়াশুনা করলেও ইন্টার্নশিপ করার সময় প্লাস্টিক সার্জারির প্রতি আগ্রহ জন্মে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে শিক্ষকরাও আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। ফলে ভবিষ্যতে কি হবে না হবে তা ভাবিনি। কোনও কিছু না ভেবেই এ পেশায় এসেছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘এফসিপিএস ও এফআরসিএস করে দেশে আসার পর গ্রামে জেনারেল সার্জন হিসেবে পোস্টিং হয়েছিল। কিন্তু সেখানে সাপোর্টিভ কোনও সুবিধা না থাকায়, শিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে প্লাস্টিক সার্জারিতে ফিরে আসি।’

রায়হানা আউয়াল বলেন, ‘১৯৯৪ সালে ঢামেক হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে যোগ দেই। তখন আমার প্রথম সন্তানের বয়স ছিলোমাত্র আট  মাস। ওইটুকু বাচ্চাকে রেখেই ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়েছে। তখন আমার মা ও শ্বাশুড়ি একমাস করে আমার বাসায় থাকতেন। তাদের সহযোগিতা ছাড়া আমার পক্ষে এভাবে কাজ করা সম্ভব হতো না। আর এখন রাতে যে কোনও প্রয়োজনে স্বামী নিজেই আমাকে হাসপাতালে দিয়ে যান।’

তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে প্রথম ঢামেকে বার্ন ইউনিটের অধ্যাপক হয়েছি। তার আগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে কাজ করেছি। যদিও এখন এ দুই ইউনিট এক করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি অধ্যাপক ডা. শাফকাত হোসেন খন্দকারের অধীনে কাজ শিখেছি। তিনিই আমাদের আইডল। একজন প্লাস্টিক সার্জন হতে  যে গুণাবলী থাকার প্রয়োজন, তা আমরা তার কাছ থেকেই শিখেছি। আমি যে বয়সে অধ্যাপক হয়েছি, সে বয়সে সাধারণত বাংলাদেশে অধ্যাপক হওয়ার ঘটনা ঘটে না। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।’

/জেএ/এসএনএইচ/এপিএইচ/

আরও পড়ুন: ‘নারীদের সুরক্ষায় এ রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে’

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা