X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

চিকিৎসক কেবল প্রেসক্রিপশন লেখেন, কথা শোনেন না!

জাকিয়া আহমেদ
১০ মার্চ ২০১৭, ১৬:৪২আপডেট : ১০ মার্চ ২০১৭, ১৭:৫৬

প্রেসক্রিপশন দেশের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে রোগীকে সময় না দেওয়ার অভিযোগটা পুরনো। সন্ধ্যা থেকে রাত দেড়টা, দুইটা পর্যন্ত তারা রোগী দেখেন। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই তারা রোগীর সব কথা না শুনেই প্রেসক্রিপশন লেখা শেষ করে হাতে ধরিয়ে দেন। অনেক চিকিৎসকই আবার রোগীর কথা শোনার জন্য রেখেছেন সহকারী! তারাই রোগীর সঙ্গে কথা বলে প্রেসক্রিপশনে রোগের বিবরণ লিখে দেন। চিকিৎসক সেটা দেখে লিখে দেন ওষুধ। রোগী ও তার স্বজনরা বলছেন, চিকিৎসক যদি রোগীর সমস্যার কথা না-ই শোনেন, তবে তিনি রোগ-ই বা ধরবেন কী করে, আর চিকিৎসা-ই বা করবেন কী করে! চিকিৎসকদের এমন চিকিৎসা পদ্ধতিতে স্বস্তি না পেয়েই রোগী ছুটে বেড়ান এক চিকিৎসকের কাছ থেকে অন্য চিকিৎসকের কাছে। জ্যেষ্ঠ্য চিকিৎসকরাও বলছেন, এসব অভিযোগ অমূলক নয়। আর এই সমস্যা দূর করতে কেবল চিকিৎসকদের নয়, বদলাতে হবে চিকিৎসা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকেই।
চিকিৎসকের মনোযোগ না পাওয়ার অভিযোগ বাংলা ট্রিবিউনের কাছে করলেন তৌফিক। অসুস্থ মাকে নিয়ে তিনি একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গিয়েছেন। তার প্রত্যাশা ছিল, চিকিৎসক রোগীকে সময় দেবেন, ধৈর্য নিয়ে কথা শুনবেন, ঠিকমতো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দেবেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে সেই প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় তিনি একের পর এক চিকিৎসক বদলেছেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেক চিকিৎসক কোনও কথা না শুনেই অহেতুক পরীক্ষা করাতে দেন। চিকিৎসা করাতে এসে বরং আমাদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয় এবং মানসিক কষ্টেও ভুগতে হয়।’
তৌফিক বলেন, ‘প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে মায়ের বাম হাত, মাথার বাম পাশ ও বুকের বাম পাশে ব্যাথা করায় তাকে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখাই। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ইসিজি করান। ইসিজি রিপোর্ট ভালো নয় বলে এনজিওগ্রাম করাতে বলেন। এর বেশি তিনি আর কিছুই বলেননি। এরপর যাই ইব্রাহিম কর্ডিয়াক হাসপাতালে। সেখানেও একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ আগের ইসিজি রিপোর্ট দেখে কিছু না বলে প্রেসক্রিপশন লিখতে শুরু করেন। কোনও প্রশ্নের জবাব না দিয়ে প্রেসক্রিপশন লেখা শেষে তিনি বলেন, ‘বাইরে কাগজটা দেখান, ওরা বলে দেবে কী করতে হবে।’ বলেই তিনি মাথা নেড়ে কলিংবেল চাপ দিয়ে অ্যাটেনডেন্টকে ডাকেন পরবর্তী রোগী পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য।’
পরে তৌফিক তার মাকে নিয়ে ব্যক্তিগত পরিচয়ের সূত্র ধরে দেখান আরেক বেসরকারি হাসপাতালের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে। তৌফিক বলেন, ‘তিনি আগের রিপোর্ট দেখার আগেই জানতে চাইলেন রোগীর সমস্যা কী কী। মায়ের সমস্যাগুলো হৃদরোগের সমস্যা বলে মনে হচ্ছে না জানিয়ে তিনি ইটিটি করার পরামর্শ দেন। ইটিটির রিপোর্ট দেখে তিনি জানান, হার্টে ব্লক নেই। এনজিওগ্রামেরও কোনও প্রয়োজন নেই। চিকিৎসকের এ কথাতেই মা অর্ধেক সুস্থ হয়ে গেলেন।’
তৌফিকের মতো অভিযোগ জহুরা চৌধুরীরও। প্রায় সাত বছর ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন বিভাগের এক অধ্যাপককে দেখান তিনি। তার অভিযোগ, ওই চিকিৎসক কোনও রোগীর কথাই ঠিকমতো শোনেন না। তাই তিনি অন্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ওই চিকিৎসক সময় নিয়ে রোগীর প্রতিটি সমস্যার কথা শোনেন এবং তারপরই তিনি প্রেসক্রিপশন করেন। জহুরা চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একজন চিকিৎসক যখন মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শোনেন, তখনই মনে হয় রোগ অর্ধেক সেরে গেল। ওষুধ, পরীক্ষা এগুলো তখন গৌণ হয়ে যায়।’
রুহুল (ছদ্মনাম) নামের আরেকজন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনেক রোগীর চাপ, এটা আমরা বুঝি। কিন্তু রোগমুক্তির আশাতেই চিকিৎসকের কাছে রোগীরা যান। সময়ের অভাবে রোগীর সঙ্গে খুব বেশি কথা বলা হয়তো সম্ভব হয় না। কিন্তু তবুও প্রতিটি রোগীর কাছেই অন্তত তার সব সমস্যার কথা শুনে তারপর তার চিকিৎসার দিকে গেলে রোগী মানসিকভাবে ভালো বোধ করেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চিকিৎসকরা এখন রোগীর প্রতি মানবিক হওয়ার চেয়ে অর্থ উপার্জনেই বেশি মনোযোগী। চিকিৎসা সেবারও বাণিজ্যিকীকরণ হয়ে গেছে। ‘চিকিৎসা’র সঙ্গে ‘সেবা’ কথাটি যুক্ত, এটি আমরা ভুলে যাচ্ছি।’
বিএসএমএমইউয়ের বেসিক চিকিৎসা অনুষদের ডিন ডা. ইকবাল আর্সলান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চিকিৎসক হওয়ার আগে একজন চিকিৎসককে প্রকৃত মানুষ হতে হয়। কারণ, রোগী সৃষ্টিকর্তার পরই আস্থা রাখেন চিকিৎসকের ওপর। তাই রোগীদের সম্মান দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে, তাকে সময় দিতে হবে।’
রোগীদের সময় না দেওয়া, রোগীর কথা শেষ না করেই প্রেসক্রিপশন লিখতে শুরু করা, নানা ধরনের টেস্ট দেওয়ার অভিযোগ দেশে অনেক দিনের বলে মত দিলেন বিএসএমএমইউয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসব অভিযোগ অনেক দিনের। এই সমস্যার সমাধানে চিকিৎসকসহ সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে।’

আরও পড়ুন-

প্রেসক্রিপশন পড়ার উপযোগী করে লেখার নির্দেশ

যেমন ছিল তেমনই আছে প্রেসক্রিপশন!

/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেফারকে কাস্ট করেছে ফারুকীপুত্র ইলহাম!
জেফারকে কাস্ট করেছে ফারুকীপুত্র ইলহাম!
‘জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হবে’
‘জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হবে’
জাবি ছাত্রলীগের সেই ৩ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ 
জাবি ছাত্রলীগের সেই ৩ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ 
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৮
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৮
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়