কর্মীদের মাঠে নামিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন হেফাজতে ইসলামের ঢাকার শীর্ষ নেতারা। হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে আলাদত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করায় কর্মসূচি ঘোষণা করে মাঠে নামেননি তারা। এ কারণে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শুক্রবার (১০ মার্চ) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজ শেষে হেফাজতে ইসলামের নামে বেশ কয়েকজনকে স্লোগান দিতে দেখা গেলেও এসময় উপস্থিত ছিলেন না সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কোনও নেতা।
জানা গেছে, হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী বুধবার (৮ মার্চ) এক বিবৃতিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ‘মূর্তি’ অপসারণ ও নেতাদের গ্রেফতারি পরোয়ানা বাতিলের দাবিতে শুক্রবার (১০ মার্চ) দুপুরে দেশব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন।
শুক্রবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জুমার নাম শেষে বেশকিছু লোকজন জড়ো হয়ে হেফাজতের নামে স্লোগান দিতে শুরু করেন। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ‘মূর্তি’ অপসারণের দাবিও তোলেন তারা। তবে তাদের বিক্ষোভ মিছিল করতে দেয়নি পুলিশ। আর হেফাজতের কেন্দ্রীয় কোনও নেতাও উপস্থিত ছিলেন না এসময়। এছাড়া, গত কয়েক শুক্রবার জুমার নামাজের পর ব্যানারসহ রাস্তায় নামলেও এদিন তাদের সঙ্গে কোনও ব্যানার দেখা যায়নি।
হেফাজতের নামে জুমার নামাজের শেষে এই বিক্ষোভের চেষ্টা করা হলে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাদের। এর মধ্যে একজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পল্টন থানায় নেওয়া হয়।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কারও সঙ্গে কথা বলা ছাড়াই কিছু লোক রাস্তায় নামার চেষ্টা করছিল। সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। আমি এখনও (রাত সাড়ে ৭টা) বাইরে আছি। এখনও তার সঙ্গে আমার কথা হয়নি।’
এ প্রসঙ্গে সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (রমনা জোন) এস এস শিবলী নোমান বলেন, ‘আজকে (শুক্রবার) বায়তুল মোকাররম এলাকায় কোনও সংগঠন মিছিল বা সমাবেশের অনুমতি নেয়নি। হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতারাও কোনও কর্মসূচির তথ্য পুলিশকে জানায়নি।’
হেফাজত সূত্রে গেছে, হেফাজতে ইসলামের ঢাকার কিছু নেতাদের বিরুদ্ধে আলাদত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করায় ঢাকায় কর্মসূচি পালন করা হয়নি। চার বছর আগে শাহবাগে অবস্থিত গণজাগরণ মঞ্চ উৎখাতের চেষ্টায় বোমা ফাটিয়ে ত্রাস সৃষ্টির মামলায় হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন নেতাসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
রবিবার (৫ মার্চ) বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাটিতে ২৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে পলাতক ২৫ জন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন— হেফাজতে ইসলামের উপদেষ্টা আব্দুল লতিফ নেজামী, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য মওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন নায়েবে আমির শাহ আহমেদুল্লাহ আশরাফ, মুফতি ফয়জুল্লাহ।
হেফাজত আমিরের প্রেসসচিব মাওলানা মুনির আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আল্লামা আহমদ শফী সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে অবিলম্বে মূর্তি অপসারণ ও নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শুক্রবার (১০ মার্চ) বাদ জুমা দেশব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। তবে ঢাকার হেফাজত কোনও কর্মসূচি পালন করেছে কিনা, আমার জানা নেই। এ বিষয়ে ঢাকার হেফাজত বলতে পারবে।’
কর্মসূচির বিষয়ে জানতে আত্মগোপনে থাকা ঢাকার হেফাজতের নেতাদের একাধিকবার চেষ্টা করেও টেলিফোনে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ‘গ্রিক দেবীর মূর্তি’ অপসারণ না করলে ঢাকা ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচির হুমকি দিয়েছে কেন্দ্রীয় হেফাজতে ইসলাম। শুক্রবার (১০ মার্চ) চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের উত্তর গেট চত্বরে জুম্মার নামাজের পর বিক্ষোভ সমাবেশে এই ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
হেফাজতে ইসলাম চট্টগ্রাম মহানগর শাখার পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপনের প্রতিবাদে এবং ওই মূর্তি অপসারণ ও হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন-
‘মূর্তি’ না সরালে ঢাকা ঘেরাও: হেফাজত
হয় সরকার থাকবে, না হয় ‘মূর্তি’ থাকবে: শফি
/সিএ/আরজে/টিআর/