X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

সাততলা বস্তি আটকে রেখেছে পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স!

জাকিয়া আহমেদ
২৩ মার্চ ২০১৭, ০৯:২৩আপডেট : ২৩ মার্চ ২০১৭, ১২:১৯

সাততলা বস্তি আটকে রেখেছে পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স! সরকারি জায়গা দখল করে তোলা হয়েছে ঘরবাড়ি। সেখান থেকে প্রতি মাসে আয় হচ্ছে প্রায় ২ কোটি টাকা। এর ভাগ কেবল বাড়িওয়ালারা পাচ্ছেন না, অনেক উচ্চপর্যায়ের নেতার পকেটেও মাসে মাসে চলে যায়। তাহলে কীভাবে এই জায়গা খালি করবে সরকার? স্বাস্থ্য অধিদফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো এই প্রশ্ন।
অথচ অটিজম ইনস্টিটিউট, ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ কার্যালয়সহ আরও গুরুত্বপূর্ণ ভবনের নকশা চূড়ান্ত হয়ে আছে। জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে একটি পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স তৈরির পরিকল্পনাও আছে সরকারের।

এর আগে দফায় দফায় কয়েকবার এ বস্তি উচ্ছেদের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে অবৈধ দখলে থাকা স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ জমি উচ্ছেদের লক্ষ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য, ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সম্পৃক্ত করার জন্য সবশেষ গত ৬ মার্চ নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বেদখলকৃত জমি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন করা যায় তা সুপারিশ আকারে পেশ করার জন্য স্বাস্থ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেন তিনি।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মহাখালীতে এক হাজার শয্যা বিশিষ্ট একটি ক্যানসার হাসপাতাল, অটিজম ইনস্টিটিউটসহ কয়েকটি নতুন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শুরু করতে সব অবৈধ-দখল উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্যই মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ জমি দখল পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু করা হবে।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর মহাখালীতে সাতটি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় নির্মাণের পরিকল্পনা ও ভবনের নকশা চূড়ান্ত হলেও জমি দখলে না থাকায় ছয় মাস ধরে চেষ্টার পরও কাজ শুরু করতে পারছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইপিআই ভবন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সেন্টার ফর মেডিক্যাল বায়োটেকনোলজি ভবন, জাতীয় ব্লাড সেন্টার ভবন, সেবা পরিদফতরের প্রধান কার্যালয় এবং অটিস্টিক একাডেমি ভবন।

গত ২০ মার্চ সরেজমিন ঘুরে বস্তিবাসী এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৪০ বছরের পুরনো মহাখালীর এই সাততলা বস্তি রাজধানীর অন্যতম মাদক স্পট হিসেবে পরিচিত। বস্তিটি সবসময়ই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের দখলে থাকে। এখানে আছে ১০ হাজার ঘর। প্রতিটির ভাড়া প্রায় ২-৩ হাজার টাকা। এর বাইরে রয়েছে বিভিন্ন রকম দোকান, বাজার, রিকশা গ্যারেজ এবং এই এলাকায় চলা ইজিবাইকের স্ট্যান্ড।

এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ‘জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের নতুন ভবন নির্মাণের নির্ধারিত স্থান’ লেখা সাইনবোর্ডের জায়গায় রাখা হয়েছে রিকশা, স্কুল ভ্যান। ভেতরে গরু চরছে। বহিরাগতরা ভেতরে মাদকসেবন করছে। সবাই সবকিছু দেখলেও বলার কেউ নেই। কারণ সবাই জানেন এর সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালীরা জড়িত। সরকারও তাদের সঙ্গে পেরে উঠবে না বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, মহাখালীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রায় ৭০ একর জমির মধ্যে জাতীয় জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের জমি ৪৭ দশমিক ৮৮ একর এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের ৩৫ একর জমি আছে। অটিস্টিক ভবনের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৩ একর জমি। এই জমি থেকে ৮ একর জমি দখল করে গড়ে উঠেছে বস্তি। এখানে আরও আছে জাতীয় জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি প্রতিষ্ঠান, নিপসম, বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন, আইসিডিডিআরবিসহ ১১টি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। সাততলা বস্তির শেষপ্রান্তে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল। হাসপাতালের সামনে-পেছনে বস্তি।

২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর মহাখালীর সাততলা বস্তি উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বেদখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধারের ব্যাপারে সিদ্ধান্তও হয়। কিন্তু আদালতের হস্তক্ষেপে জায়গাটি দখলে নিতে পারেনি অধিদফতর। তাই সাততলা বস্তির পরিধি বেড়েই চলেছে। এর আগে ২০০৩ সালে মন্ত্রণালয়ে ‘সাততলা বস্তি’ উচ্ছেদের জন্য নোটিশ জারি করলে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বস্তিবাসীর পক্ষ থেকে রিট করা হয় হাইর্কোটে। রিটের শুনানি শেষে বস্তি উচ্ছেদসংক্রান্ত নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত করেন হাইকোর্ট। আবার ২০১০ সালেও একবার উচ্ছেদের চেষ্টা চালায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। এভাবেই বারবার থমকে গেছে বস্তি উচ্ছেদের কাজ।

এ জমিতে নিজেদের ভবন নিয়ে আশাবাদী ছিলেন বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ডা. এসকে রায়। কিন্তু এতদিনেও বস্তি উচ্ছেদ না হওয়ায় হতাশা দেখা গেলো তার মধ্যে। ভবনের চূড়ান্ত নকশা দেখিয়ে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্য থাকা সত্ত্বেও সাতরাস্তার ওপর ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ হয়েছে। তাহলে এত জনগুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো যেখানে তৈরি হবে সেই জায়গা কেন খালি করা যাচ্ছে না? এখানকার প্রভাবশালী কারা?’

ডা. এসকে রায় বাংলা ট্রিবিউনকে আরও বলেন, ‘এর আগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক বেশকিছু জায়গা খালি করলেও নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেননি। ফলে আবার দোকানপাট উঠে ফিরে গেছে আগের অবস্থানে। কোনোভাবেই এই জায়গা খালি করা যাচ্ছে না। শুনতে পাই উদ্যোগ এবং মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতার অভাবে এই বস্তি উচ্ছেদ হচ্ছে না, আমাদের অফিসও হচ্ছে না।’

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বস্তি উচ্ছেদ করতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছি। কারণ সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ আটকে আছে কেবল ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছে না বলে। এবার একটি কমিটি করা হয়েছে, দেখা যাক কতোটুকু কী হয়।’

/জেএ/জেএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
দুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টিদুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন