চরম ঝুঁকি নিয়েই সিলেটের ‘জঙ্গি আস্তানা’ আতিয়া মহল থেকে বাসিন্দাদের বের করে আনেন সেনা-কমান্ডোরা। ভবনটির প্রবেশ পথ ও সিঁড়িসহ বিভিন্ন স্থানে আইইডিসহ বিস্ফোরক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখে জঙ্গিরা। অভিযানের সময় সেনা-কমান্ডোরাও প্রচুর এক্সপ্লোসিভ ফায়ার করেছেন। এ কারণে পুরো ভবন ও আশে-পাশের এলাকা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এরইমধ্যে কমান্ডোরা চরম ঝুঁকি নিয়ে নারী-শিশুসহ ভবনের ৭৮জন বাসিন্দাকে নিরাপদে বের করে আনেন। রবিবার বিকেল ৫টার পর পাঠানপাড়া মসজিদে প্রেস বিফিংকালে অভিযান তদারককারী কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান এই তথ্য জানান।
অভিযান তদারককারী কর্মকর্তা বলেন, ‘চরম ঝুঁকির মধ্যে আতিয়া মহল থেকে ৭৮ জন বাসিন্দাকে নিরাপদে বের করা গেছে। বাসিন্দাদের যখন বের করে আনা হয়, তখন প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি ছিল। এটাও কমান্ডোদের জন্য আল্লাহর বিশেষ রহমত হিসেবে কাজ করেছে। কারণ, ঝড়বৃষ্টির মধ্যে কাজ করায় জঙ্গিরা বুঝতে পারেনি। সেনা-কমান্ডোরা ভালো টেকনিক অ্যাপ্লাই করেছিলেন। তারা নিচ দিয়ে না গিয়ে পাশের বিল্ডিং থেকে মই লাগিয়ে পাঁচতলা ভবনের ছাদের ওপর নেমেছেন। এরপর একে-একে দোতলা পর্যন্ত যেসব বাসিন্দা ছিলেন, তাদের বের করে আনা হয়েছে। পরে মনে হয়েছে কমান্ডোদের এই টেকনিক মোকাবিলা করার জন্য জঙ্গিরা প্রস্তুত ছিল না। বাসিন্দাদের বের করে আনার পর কমান্ডোরা জঙ্গিদের দিকে গ্যাস শেল নিক্ষেপ করেছেন। তখন জঙ্গিদের ভেতরে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছিল। তারা দৌড়াদৌড়ি শুরু করে।’ তিনি বলেন, ‘অভিযানকালে ভবনের ভেতরে একটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। এই গ্রেনেডই তুলে নিয়ে জঙ্গিরা কমান্ডোদের দিকে পাল্টা ছুড়ে মারে। এরপর আতিয়া মহলের ওপর তলা থেকে নিচতলায় নেমে আসার পর দুই জঙ্গিকে গুলি করা হয়। এতে এক জঙ্গি তার গায়ে জড়ানো সুইসাইড ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মারা যায়। অন্যজন গুলিবিদ্ধ হয়েই মারা যায়। তবে লাশ দু’টি ভেতরেই রয়েছে। দু’জনই পুরুষ। ভেতরে এক বা একাধিক জঙ্গি রয়েছে, এটা নিশ্চিত। তবে কয়জন পুরুষ, কয়জন মহিলা আছে, তা বাইরে থেকে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’
জঙ্গিদের কাছে স্মল আর্মস ও শক্তিশালী এক্সপ্লোসিভ আছে উল্লেখ করে ব্রিগেডিয়ার জেনালের ফখরুল আহসান বলেন, ‘তারা বেশ ওয়েল ইকুইপড। সবার শরীরে সুইসাইডাল ভেস্ট লাগানো আছে। সুযোগ পেলেই জঙ্গিরা স্মল আর্মস দিয়ে ফায়ার করছে। এরইমধ্যে চরম ঝুঁকি নিয়ে সেনা কমান্ডোরা নারী ও শিশুদের বের করে নিয়ে আসছেন।’ আইএসপিআর-এর পাঠানো ছবিতেও দেখা যায় নারী ও শিশুদের উদ্ধারের দৃশ্য।
উল্লেখ্য, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় আতিয়া মহলের নিচ তলায় জঙ্গিদের অবস্থানের খবর জানতে পারে পুলিশ। শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে আতিয়া মহল বাড়ির ভেতর থেকে বাইরের দিকে গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। এরপর ‘আতিয়া মহল’ ঘিরে রাখে পুলিশ। জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পরিচালনার জন্য শুক্রবার বিকেলে সোয়াত টিম ও রাত সাড়ে ৭টার দিকে সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আর অভিযানে নেতৃত্ব দিতে রাত চারটার দিকে সিলেটে ঘটনাস্থলে পৌঁছান সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। শনিবার ভোরে আতিয়া মহলে অভিযান শুরু করে সোয়াত ও সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো বাহিনী।
আরও পড়ুন: আতিয়া মহলে ২ জঙ্গি নিহত, অভিযান চলবে
/এমএনএইচ/