রাজধানীর বিমানবন্দর সংলগ্ন গোলচত্বরের পুলিশ বক্সের সামনে ‘আত্মঘাতী’ বিস্ফোরণে নিহত তরুণের পরিচয় মিলেছে। তার নাম আয়াদ হাসান। তবে শতভাগ নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষা চান স্বজনরা। গত বছরের ৯ আগস্ট সে মিরপুরের বাসা থেকে খালাতো ভাই রাফিদ আল হাসানের সঙ্গে ঘর ছাড়ে।
রবিবার (২৬ মার্চ) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে চেহারা দেখে প্রাথমিকভাবে আয়াদের লাশ শনাক্ত করেন চাচাতো ভাই সাগর। পুলিশের উত্তরা বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিমানবন্দর থানার ওসি নূরে আজম মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিহত তরুণের পরিচয় শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য কাজ করছি আমরা।’
যোগাযোগ করা হলে রবিবার দুপুরে আয়াদের খালা রাফিদের মা নীলুফার ইয়াসমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চেহারার মিল থাকলেও আমরা শতভাগ নিশ্চিত হতে চাই। এজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এটা মিলিয়ে দেখতে কয়েক মাস সময় লাগবে বলে তারা আমাদের জানিয়েছেন। আমরা সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাই।’
নীলুফার ইয়াসমিন শিল্পী বাংলা ট্রিবিউনকে আরও বলেন, ‘বিমানবন্দরে নিহত তরুণের সঙ্গে আয়াদের চেহারার কিছুটা মিল রয়েছে। প্রথম দেখায় চেহারার মিল দেখা গেলেও আমরা শতভাগ নিশ্চিত নই সে আয়াদ কিনা। কারণ আয়াদের দাঁত উঁচু ছিল না। নিহত তরুণের সামনের দাঁত কিছুটা উঁচু দেখা যায়।’
এদিকে আয়াদের মা মুনমুন আহমেদ অনেকটা ভেঙে পড়েছেন জানিয়েছেন নীলুফার ইয়াসমিন। ‘আমরা বুঝতে পারছি না কে বা কারা আমাদের দুই বোনের দুই ছেলেকে এত উদ্বুদ্ধ করে বাসা থেকে এভাবে নিয়ে যেতে পারলো? কারা তাদের এমন আত্মঘাতী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে? এই মাস্টারমাইন্ডদের এখনও ধরা যাচ্ছে না কেন?’ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনিও।
জানা গেছে, আয়াদের বাবা মৃত আলী হাসান। বাসা ছেড়ে যাওয়ার আগে পরিবারের সঙ্গে পূর্ব মণিপুরের ১৩০৭/২ নম্বর বাসার পঞ্চম তলা ছিল তার ঠিকানা। তারও আগে মা-বাবার সঙ্গে সৌদি আরবে থাকতো সে। সৌদি আরবের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়েছে এই যুবক। বাবা হারানোর পর সে ঢাকায় প্রাইভেটে এ-লেভেল করে।
গত বছরের ৯ আগস্ট দুই খালাতো ভাই রাফিদ আল হাসান ও আয়াদ হাসান বাসায় চিরকুট লিখে একসঙ্গে ঘর ছাড়ে। এ ঘটনায় আয়াদের মা মুনমুন আহমেদ ওইদিনই রাজধানীর মিরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং ৬৩৭) করেন। এর তদন্তে পুলিশ এই দুই তরুণের আগের কার্যক্রম ও চলাফেরা বিশ্লেষণ করে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রমাণ পায়।
দুই তরুণের পরিবারের সদস্যরা তখন এই প্রতিবেদকে জানিয়েছিল, বাসা থেকে বের হওয়ার সময় রাফিদ ও আয়াদ তাদের পাসপোর্টও নিয়েছে। যাওয়ার আগে ‘আমরা আমাদের পথ খুঁজে পেয়েছি’ বলে বাসায় একটি চিরকুট রেখে নগদ লক্ষাধিক টাকাও নিয়ে যায় তারা।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ মার্চ বিমানবন্দর সড়কের পুলিশ বক্সের সামনে এক তরুণ আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত হয়। বিস্ফোরণে তার কোমরের একাংশ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ছেলেটি কোমরে বিস্ফোরক ভেস্ট পড়েছিল।
ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক সূত্র জানিয়েছে, নিহতের পিঠের দিকে ও হাতে কস্টেপ দিয়ে লাগানো বৈদ্যুতিক তার পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাতে থাকা সুইচ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে এ তরুণ। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে এমন আরও অন্তত ২৫-৩০ জন তরুণ জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হয়ে স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়েছে। জঙ্গিদের শীর্ষ নেতারা যাদের আত্মঘাতী হামলা চালানো বা আত্মঘাতী হওয়ার জন্য ‘মোটিভেটেড’ করে রেখেছে। ভ্রান্ত পথে পা বাড়ানো এই তরুণরাই বেহেশতে যাওয়ার লোভে পড়ে নিজেরা আত্মঘাতী হচ্ছে।
/জেএইচ/