X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

হিমোফিলিয়া রোগীদের কথা মনে থাকে না কারও

জাকিয়া আহমেদ
১৭ এপ্রিল ২০১৭, ২৩:৫৪আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০১৭, ২৩:৫৪

হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা প্রতি বছরের ১৭ এপ্রিল পালন করা হয় বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস। হিমোফিলিয়া রোগীরা সমাজে অবহেলিত বিবেচনায় এবারের বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে— ‘তাদের কথা শুনুন।’ সাধারণ মানুষের মধ্যে এই রোগ নিয়ে সচেতনতার অভাবে রোগটি সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্ব হিমোফিলিয়া ফেডারেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ১০ হাজার ৬৪০ জন হিমোফিলিয়া রোগী আছেন। তবে দেশে হিমোফিলিয়া রোগীদের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি ১০ হাজার মানুষের মধ্যে একজন কিংবা প্রতি লাখে ২০ জন মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সেই হিসাবে দেশে হিমোফিলিয়া রোগীর সংখ্যা ১৬ থেকে ২০ হাজারের মতো। তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ রোগী হিমোফিলিয়া-এ এবং বাকি ২০ শতাংশ রোগী হিমোফিলিয়া-বি রোগে আক্রান্ত।

হিমোফিলিয়া একটি বংশগত রক্তরোগ। চিকিৎসা দিয়ে সম্পূর্ণ নিরাময় করা না গেলেও এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এই রোগে রক্ত একবার ক্ষরণ শুরু হলে সেটি আর বন্ধ হয় না। রক্তের ফ্যাক্টর এইট এবং ফ্যাক্টর নাইন কমে গলে রক্তের জমাট বাঁধার ক্ষমতা কমে যায়। শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার যেসব উপকরণ রয়েছে সেগুলো চিকিৎসকের পরামর্শে ইনজেকশনের মাধ্যমে গ্রহণ করেই রোগীকে বেঁচে থাকতে হয়।

হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত এমনই একজন ৪৫ বছরের আখতারুজ্জামান আজাদ। আড়াই বছর বয়স থেকে তিনি এ রোগ বহন করছেন। সম্প্রতি চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন, তার হাঁটু রিপ্লেসমেন্ট করতে হবে। তাই আজাদ এখন দৌড়াচ্ছেন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘বংশ ও রক্তজনিত এই রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে সঠিক ধারণা নেই। অবহেলা, অবজ্ঞা, দয়া-দাক্ষিণ্য আর করুণার দৃষ্টিতেই এসব রোগীদের দেখা হয় সমাজে। এ ধরনের রোগীরা সমাজে অসহায়, তাদের কথা মনে থাকে না কারও, এই রোগ একটি সামাজিক অভিশাপ।’

হিমোফিলিয়া রোগী এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। ফলে তাদের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়, যা সবার পক্ষে বহন করা কষ্টসাধ্য। তাই এসব রোগীদের স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা প্রদান, তাদের জন্য সরকারি অনুদান এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ সামাজিক সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন যাতে তারা সমাজে কোনও অপ্রীতিকর অবস্থার সম্মুখীন না হন।’

হিমোফিলিয়া রোগীদের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান হিমোফিলিয়ান হেলথ কেয়ার ট্রাস্টের ট্রাস্টি ডা.লেলিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বংশে হিমোফিলিয়া থাকলে পরিবারের সদস্যদের জিনগত পরীক্ষা, স্ক্রিনিং করা প্রয়োজন যেন অনাগত সন্তান এ রোগে আক্রান্ত না হয়। আর গর্ভধারণের পূর্বেই মা রোগটি বহন করছেন কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে।’
তবে নারীদের তুলনায় পুরুষরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয় জানিয়ে ডা.লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘জন্মের পরপরই এ রোগের উপসর্গ বোঝা যায় না। যখন একজন শিশুর হামাগুড়ি দেওয়ার সময় হয় তখন তার হাঁটুতে চাপ পড়ে এবং রক্তক্ষরণ হয়ে হাঁটু ফুলে যায়। তবে রোগটি বেশিরভাগ সময় ধরা পড়ে দাঁত দিয়ে রক্তপাতের মাধ্যমে। হতে পারে তা ত্বকের নিচে কিংবা খাদ্যনালীতে। এ রোগ হলে মস্তিষ্কেও রক্তক্ষরণ হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট ফুলে একসময় পঙ্গু হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।’
এ রোগীদের জন্য একটি বিশেষায়িত কেয়ার সেন্টার করার আহ্বান জানিয়েছেন হিমোফিলিয়ান হেলথ কেয়ার ট্রাস্টের ট্রাস্টি। যেখানে ফিজিওথেরাপি দিয়ে শরীরের জয়েন্টগুলোকে ভালো রাখা হবে। প্রয়োজনে রক্ত পরিসঞ্চালন, ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজম এবং কম দামে রক্তের ফ্যাক্টর এইট এবং নাইন দেওয়া যাবে। তখন ডে-কেয়ার ভিত্তিতে রক্তের পরিসঞ্চালন করতে পারবে এবং সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দিয়ে ফ্যাক্টর এইট এবং ফ্যাক্টর নাইন বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে।
অন্যদিকে ডা.লেলিন চৌধুরী মনে করেন, হিমোফিলিয়া রোগীদের বিশেষ পরিচয়পত্র (আইডেন্টিটি কার্ড) দেওয়া প্রয়োজন, যেন গণপরিহনসহ যেসব জায়গায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কষ্ট করতে হয় সেসব স্থানে তারা অগ্রাধিকার পায়। যেসব কাজে আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা থাকে সেগুলো থেকে তাদের বিরত থাকতে হবে। এসব রোগীদের জন্য তাদের উপযোগী কাজের ব্যবস্থাও সরকারের পক্ষ থেকে করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে জাতীয় স্বাস্থ্য বাজেটে এসব রোগীদের জন্য পৃথক বরাদ্দ রাখতে হবে।’
/জেএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন ৫ জুন
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন ৫ জুন
সোনার দাম ভ‌রিতে কমলো ৩ হাজার টাকা
সোনার দাম ভ‌রিতে কমলো ৩ হাজার টাকা
অস্ত্র লুটের ঘটনায় বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতাসহ আরও ৭ জন কারাগারে
অস্ত্র লুটের ঘটনায় বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতাসহ আরও ৭ জন কারাগারে
তিন গোলে জেতার আশা করেননি পুলিশের রোমানিয়ান কোচ
তিন গোলে জেতার আশা করেননি পুলিশের রোমানিয়ান কোচ
সর্বাধিক পঠিত
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী 
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী 
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ