X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভিডিও ফুটেজ ধরেই উদ্ধার হয় সুমাইয়া (ভিডিও)

রাফসান জানি
২৭ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:৩১আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০১৭, ১৯:৪৯

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে অপহৃত শিশু সুমাইয়াকে ২৪ দিন নিখোঁজ থাকার পর উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুরুতে কে বা কারা অপহরণ করেছে এমন তথ্য না থাকলেও রাস্তার পাশে একটি সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়।

মা-বাবার সান্নিধ্যে সুমাইয়া (ছবি: নাসিরুল ইসলাম) গত ৩ এপ্রিল নিখোঁজ হওয়ার পর ২৬ এপ্রিল দিবাগত রাতে কদমতলী থেকে সুমাইয়াকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত সাবিনা আক্তার বৃষ্টি (২৮) নামের এক তরুণী ও তার বাবা সিরাজুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে বৃষ্টির আরও তিন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কে অপহরণ করেছে শুরুতে তা বোঝা না গেলেও একটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়ার পর অপহরণকারীকে চিহ্নিত করা হয়। পুলিশ জানতে পারে, শিশুটিকে বোরকা পরা এক মহিলা নিয়ে গেছে। সুমাইয়া ও তার বাবা-মা যে বাড়িতে থাকেন সেখানেই আগে থাকতো সে। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সারাক্ষণ ঝগড়া এবং জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে না পারায় বাড়িওয়ালা তাদের বের করে দেয়।
লালবাগ জোনের ডিসি ইব্রাহিম খান জানান, বাড়িটির মালিক হাসনাহেনার সঙ্গে মাঝে মধ্যে দেখা করতে যেতো বৃষ্টি। ঘটনার দিন ৩ এপ্রিলও বাড়িওয়ালীর কাছে গিয়েছিল সে। কিন্তু তাকে না পেয়ে সুমাইয়ার মায়ের সঙ্গে কথা হয় তার। কিছুক্ষণ পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় বৃষ্টি। তবে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বাড়ির সামনে সুমাইয়াকে পেয়ে তাকে হাত ধরে কথা বলতে বলতে নিয়ে যায় সে।
মেয়েকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ৪ এপ্রিল কামরাঙ্গীরচর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার বাবা জাকির হোসেন। একই সঙ্গে সব এলাকায় পোস্টারিং ও মাইকিং করেন তিনি। এক পর্যায়ে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয় শিশু সুমাইয়াকে নিয়ে গেছে বৃষ্টি। সেই ফুটেজের সূত্র ধরে আরও কয়েকটি ফুটেজ পুলিশের হাতে আসে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে শুরু হয় তদন্ত।

ফুটেজে অপহরণকারী বৃষ্টিকে চিহ্নিত করার পর তার সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হয়। তবে বাড়িওয়ালী বা প্রতিবেশীদের কাছে খুব বেশি তথ্য না পেলেও হাল ছাড়েনি পুলিশ। এর মধ্যে থানায় মামলা দায়ের করেন নিখোঁজ শিশুর বাবা।

গ্রেফতারকৃত দুই আসামি সাবিনা আক্তার বৃষ্টি ও সিরাজুল ইসলাম (ছবি: নাসিরুল ইসলাম) তদন্তে কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ, বিভিন্ন গোয়েন্দাসহ লালবাগ জোনের কর্মকর্তারা একযোগে কাজ শুরু করেন বলে জানান লালবাগ জোনের ডেপুটি কমিশনার ইব্রাহিম খান। তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছিলাম। আমাদের পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সব শাখা এ নিয়ে তৎপর ছিল।’

প্রথমে সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে তদন্ত শুরু হলেও একপর্যায়ে পুলিশের হাতে আসে একটি মোবাইল নম্বর। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ওই মোবাইল নম্বরের লোকেশন কদমতলী চিহ্নিত করতে সক্ষম হন তদন্ত সংস্থার লোকজন। এলাকা চিহ্নিত হলেও নির্দিষ্ট বাড়ির ঠিকানা না পাওয়ায় পুরো এলাকা ঘিরে ব্লক রেইড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান লালবাগ জোনের ডেপুটি কমিশনার।

মায়ের কোলে সুমাইয়া (ছবি: নাসিরুল ইসলাম) ২৬ এপ্রিল গভীর রাতে শুরু হয় ব্লক রেইড। বাড়ি বাড়ি তল্লাশির একপর্যায়ে অপহৃত শিশু সুমাইয়াকে সুস্থ অবস্থায় অপহরণকারী বৃষ্টির বাবা সিরাজুল ইসলামের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে গ্রেফতার হন অপহরণকারী তরুণী ও তার বাবা। পরে বৃষ্টির আরও তিন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে পুলিশকে বৃষ্টি জানায়, তার বাবার বাসায় শিশু সুমাইয়াকে রেখেছিল সে। প্রতিবেশীদের জানায়, এটা তার বান্ধবীর মেয়ে। তবে শিশুটির কান্নাকাটি বা চিৎকার-চেঁচামেচির কোনও শব্দ কানে আসেনি বলে জানিয়েছেন আশেপাশের লোকজন।
উদ্ধারের পর শিশু সুমাইয়া ও তার মা-বাবাকে বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে নিয়ে আসা হয় রাজধানীর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন লালবাগ জোনের ডিসি ইব্রাহিম খান ও সুমাইয়ার বাবা জাকির হোসেন।
ডিসি ইব্রাহিম খান বলেন, ‘কী কারণে সুমাইয়াকে অপহরণ করা হয়েছে তা আমরা এখনও নিশ্চিত নই। তাকে কেন নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেই প্রসঙ্গে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা চলছে। তবে মাঝে মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যাতায়াত করতো বৃষ্টি। তার কোনও সন্তান নেই। তাকে ১১ বছর বয়সে তার মা অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছিল বলেও আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে।’
কী কারণে সুমাইয়াকে অপহরণ করা হয়েছিল তার উত্তর দিতে পারেননি মা-বাবাও। বরং তাদের প্রশ্ন, ‘কেন আমাদের বুক খালি করতে চাইলো তারা? বৃষ্টি কিংবা তার পরিবারের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক, লেনদেন কিংবা শত্রুতা তো ছিল না।’
উপস্থিত সাংবাদিকদের সুমাইয়া জানায়, অপহৃত হওয়ার পর সে মায়ের কাছে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু তাকে আসতে দেওয়া হয়নি। তার ভাষ্য, ‘বাসায় আমার মা ঘুমাইতেছিল, তারপর আমারে নিয়া গেছিল। আমি কইছি মার কাছে আমু, কিন্তু আমারে নিয়া যায় নাই।’
ডিসি ইব্রাহিম খান ও সুমাইয়ার বাবা উভয়ে জানান, নিখোঁজ হওয়ার পর কেউ টাকা বা মুক্তিপণ চেয়ে ফোন করেনি। এ কারণে আপাতত অপহরণ হিসেবে ঘটনাটির তদন্ত চলবে বলে জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
সুমাইয়ার বাবা জাকির হোসেন বলেন, ‘৩ এপ্রিল ছিল সোমবার। ওইদিন আমার মেয়ে নিখোঁজ হয়। তাকে সারা শহরে খুঁজেছি। কিন্তু কেউ কোনও খোঁজ দিতে পারেনি। আমি আমার সন্তান ফিরে পেয়েছি। আমার মতো এভাবে যেন কারও বুক ভাঙার পরিস্থিতি না হয়। পুলিশ, সাংবাদিকসহ সবার কাছে আমি খুবই কৃতজ্ঞ।’


/আরজে/জেএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা