বনানীতে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনাটি ভিডিও করেছিল ধর্ষকরা। এরপর ভিডিও প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিল তারা। এতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল বলেও মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
তরুণীদের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, সাদমান সফিক তাদের পূর্ব পরিচিত। প্রায় দুই বছর থেকে তার সঙ্গে পরিচয় রয়েছে। ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে গুলশান-২ নম্বরের ৬২ নম্বর রোডের ২ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদের সঙ্গে পরিচয় হয় তাদের। এরপর জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে গত ২৮ মার্চ সাফাত আহমেদ তার গাড়ি পাঠিয়ে ড্রাইভার ও বডিগার্ডের মাধ্যমে তরুণীদের বাসা থেকে বনানীর রেইনট্রি হোটেলের ছাদে নিয়ে যাওয়া হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, সেখানে অনেক লোক থাকবে এবং অনুষ্ঠানটি হবে হোটেলের ছাদে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর কোনও ভদ্র লোককে আমরা দেখতে পাইনি। সাফাত, নাঈম ও সফিক ছাড়াও সেখানে আরও দু’জন মেয়ে ছিল। তাদের ওই হোটেলে নিয়ে যাওয়ার পর আগে থেকে সেখানে থাকা অন্য দু’টো মেয়েকে সাফাত ও নাঈম বার বার নিচে নিয়ে যাচ্ছিল। সেখানকার পরিবেশ ভালো না লাগায় আমরা চলে যেতে চাচ্ছিলাম।
এজাহারে আরও বলা হয়, এক পর্যায়ে তাদের দু’জনকে একটি কক্ষে নিয়ে জোরপূর্বক মদ্যপান করিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়। এ সময় সাফাত তার ড্রাইভার বিল্লালকে ধর্ষণের ভিডিও করতে নির্দেশ দেয়। তখন ড্রাইভার বিল্লাল ধর্ষণের দৃশ্য ভিডিও করে। পরবর্তীতে সাফাত তার দেহরক্ষীকে তরুণীদের বাসায় পাঠিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ও ভয়ভীতি দেখায়। তাদের হুমকি ও লোকলজ্জার ভয়ে এক পর্যায়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা। যে কারণে মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
শনিবার বিকালে তরুণীরা বনানী থানায় হাজির হয়ে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হচ্ছেন, সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সফিক, ড্রাইভার বিল্লাল, সাফাত আহমেদের বডিগার্ড (অজ্ঞাত) নাম উল্লেখ করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান জোনের এডিসি আব্দুল আহাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ধর্ষণ ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। তবে এখনও কোনও আসামি ধরা পড়েনি।’ রেইনট্রি হোটেলের ওই দিনকার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হোটেল কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ একমাসের ফুটেজ সংরক্ষণ করে থাকে। তাই ধর্ষণের ঘটনার কোনও ফুটেজ পাওয়া যায়নি।’
রেইনট্রি হোটেলের এক কর্মকর্তা নাম-পরিচয় প্রকাশ না করে বলেন, তাদের একটা কক্ষ ভাড়া নিয়েছিল ধর্ষকদের ওই গ্রুপটি। এর বাইরে আর কোনও কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি বলেন, যা বলার পুলিশকেই বলব।
মামলা দায়েরের পর শনিবার রাতেই দুই তরুণীকে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখান থেকে আজ রবিবার দুপুরে তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিয়ে যাওয়া হয়। এরআগে তরুণীদের ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদকে প্রধান করে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- ডা. মমতাজ আরা, ডা. নিলুফার ইয়াসমিন, ডা. কবিতা সাহা ও ডা. কবির সোহেল।
ধর্ষণের বিষয়ে ডা. সোহেল মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভিকটিমদের মাক্রোবায়োলজি, রেডিওলজিক্যাল এবং ডিএনএ প্রোফাইলিং পরীক্ষার জন্য রাখা হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে প্রতিবেদন পেতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগতে পারে। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে ঘটনাটি বেশ কিছুদিন আগের হওয়ায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া কঠিন হবে।’
/এসএমএন/এনএল /জেএ/জেইউ/ এপিএইচ/