X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ষোড়ষ সংশোধনীর আপিল শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের তুমুল যুক্তি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৩ মে ২০১৭, ১৬:২৬আপডেট : ২৪ মে ২০১৭, ০৪:৫০




বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দিয়ে সংবিধানের আনীত ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানিতে মঙ্গলবার (২৩ মে) পঞ্চম দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। যুক্তি উপস্থাপনের এক পর্যায়ে সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি চাইলে একজন বিচারপতিকে অপসারণ করতে পারেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের এমন মন্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেন ও ক্ষুব্ধ হন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। পরে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে এজলাস থেকে উঠে চলে যান। যদিও ততক্ষণে আপিল বিভাগের নির্ধারিত সময়ও শেষ হয়ে যায়।

মঙ্গলবার (২৩ মে) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে এ ঘটনা ঘটে।

সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে প্রথমেই আপিল বিভাগ বলেন, ‘অধস্তন বিচার বিভাগ কবজা করে নিয়ে নিচ্ছেন। এখন চাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টকে কজ্বায় নিতে। আদালত তো পঙ্গু হয়ে গেছে। ১১৬-এর বিষয়ে আমাদের অভিমত কী ছিল? আপনি তো স্বাধীন বিচার বিভাগ চান।’ এর জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘অবশ্যই চাই।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘তাহলে অধস্তন বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের হাতে থাকলে কী করে হবে।’ জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটা অন্য কথা।’ আদালত তখন বলেন, ‘৮০ শতাংশ বিচারক অধস্তন আদালতে। ওখানে কার্যত সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণ নেই। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বললে এটাও আলোচনায় আসবে।’



অ্যাটর্নি জেনারেল এসময় বলেন, ‘আপনি তো ভাস্কর্য করেছেন। এটা নিয়েও তো ইস্যু হয়ে গেছে।’ আদালত জবাবে বলেন, ‘আপনি এটার সঙ্গে ওটা টানবেন না। সুপ্রিমকোর্ট, অধস্তন আদালত পঙ্গু হয়ে গেছে। এ কারণে বলতে বাধ্য হচ্ছি।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘বিচারপতি মোস্তফা কামালের চেতনার সঙ্গে আমাদের কিছু পার্থক ছিল। তিনি মাজদার হোসেনরের মামলায় রায় দিয়ে গেছেন। ১১৬ তো ভিন্ন বিষয়।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘একটা জেলায় পাঁচ মাস জেলা ও দায়রা জজ নেই। বিচার বিভাগ কী রকম কার্যকর হচ্ছে? এখন বিচার বিভাগ কার্যকর হচ্ছে কিনা, জেলা জজ না থাকলে বিচার বিভাগ কার্যকর হবে কিনা। আপনার জবাব হলো— এটা আইন মন্ত্রণালয়ের বিষয়। উচ্চ আদালতের বিষয়টি সংসদে নিয়ে গেলেন। তাহলে আর কী থাকলো?’
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘আমেরিকার সংবিধান নিয়ে কথা বলছেন আপনি জানেন, সেখানের সংবিধান কতবার টাচ হয়েছে?’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সেখানে সংযুক্ত হয়েছে। আমাদেরও দোষ আছে। আমরা মূল সংবিধান সংশোধন করেছি। তা না করে সংযুক্ত করা যেত।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা ইঙ্গিত দিচ্ছি, উইথ দ্য পিপল। এর মানে কী? উইথ দ্য পিপল থাকলে তার প্রতিফলন থাকতে হবে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সংবিধান তৈরি করা হলো। বিচার বিভাগ বলতে পারে না সংবিধানের এই ব্যবস্থা ঠিক না। সংশোধনী সম্পর্কে বলতে পারে।’
প্রধান বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনীর বিল নিয়ে কথা বলার আহ্বান জানালে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ে কিছু কিছু মন্তব্য রুঢ় হয়ে গেছে। এগুলো বাদ দেবেন।’
তখন বিচারপতি ওয়াহহাব মিয়া বলেন, ‘আপনি কী বললেন? আপনি বললেন, রায় দেবেন আইনের বিধান দেখে। আমরা কি তা মাথায় না রেখেই রায় দেবো? সবসময় সংবিধান বাঁচিয়ে রেখেই রায় দেওয়া হয়। প্রতিটি বাক্য, সেমিকলন আলোচনা করেই রায় দেই।’
বিলটি কোথায়— প্রধান বিচারপতি জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘পেপারবুকে আছে। বিলে বলা হয়েছে, ৯৬ অনুচ্ছেরে অধিকতর সংশোধন সমীচীন।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এখানে তো প্রস্তাবনা দেখা যাচ্ছে না।’ অ্যাটর্নি জেনারেল এর জবাবে বলেন, ‘এরইমধ্যে সংবিধান ছাপা হয়ে গেছে। সামরিক আইন দিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বিধান আনা হলো।’
সংবিধানের ১১১ ও ১১২ অনুচ্ছেদের প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা সংবিধান মাথায় রেখেই রায় দেবো। একটি গণতান্ত্রিক সভ্য দেশে ১১১ ও ১১২-এর শর্তগুলো থাকা উচিত। একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের অনেক কিছু চিন্তা করে রায় দিতে হয়। মানবাধিকার, সংবিধান, আইনের শাসন— এসব কিছু বিবেচনায় নিতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা সামরিক আইনের কথা বলছেন? এখনও ১৯৮২ সালের আইন রয়ে গেছে। আমরা বিচারকরা চিন্তাভাবনা করি, রাষ্ট্রের কাজে যেন ব্যাঘাত না ঘটে। বিচার বিভাগ সবসময় অন্যায় আইনগুলো সহ্য করে যাচ্ছি।’
অ্যাটর্নি জেনারেল এসময় বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, ১৯৭২-এর মূল চেতনায় ফিরে যেতে সংবিধানের সংশোধনী আনা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর সঙ্গে যুক্ত করতে পারলে ভাল হতো। কিন্তু সেখানে মিস হওয়ায় দেশের স্বার্থে ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়েছে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘খুবই দুঃখজনক একটি অধ্যায় আছে। উচ্চশিক্ষিত নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বাধ্য হলেন বিদায় নিতে। সামান্যতম নিরপেক্ষতা দেখিয়েছিলেন।’ এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল বিল পড়া শুরু করেন। মাঝে বিরতি দিয়ে সাড়ে ১১টায় আবার শুরু হয় যুক্তিতর্ক।
এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল হাইকোর্টের রায়ের সংসদ সদস্যদের নিয়ে করা মন্তব্যের বিষয়টি আলোচনায় আনলে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপত্তিকর মন্তব্য থাকলে সেটা বিবেচনা করা হবে। মন্ত্রী সাহেবরা অনেক কথা বলেন, যা আমরা হজম করছি। আমি প্রধান বিচারপতি হিসেবে যা বলি তা বিচার বিভাগের জন্যই বলি। আপনারা মন্ত্রীর কথা হজম করতে পারবেন তো? আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিচার বিভাগ স্বাধীন। বিচারকদের বেতন বেড়েছে।’ এটা হলেই কি বিচার বিভাগ স্বাধীন হয়ে যায়?’ মন্ত্রীদের উদ্দেশে প্রধানম বিচারপতি বলেন, ‘আপনাদের বেড়েছে এক বছর আগে। আমাদের বেড়েছে এক বছর পর।’ অ্যাটর্নি জেনারেল এসময় বিচার বিভাগের সঙ্গেই থাকবেন বলে জানান। পরে আবার লিখিত বক্তব্য পড়তে শুরু করেন তিনি।
১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল। এ প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘১৯৭২-এর চিন্তা চেতনা থেকে ২০১৭ সালের চিন্তা-চেতনা পেছনে থাকবে না। সামনের দিকে তাকাতে হবে। সমাজের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সংবিধানও পরিবর্তন হবে। এটা ব্যালান্স করতে হবে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল এসময় বলেন, ‘এটা সামরিক আইন জারির মাধ্যমে হয়েছে। সেই সামরিক আইনের কলঙ্ক মুছে দিতেই ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়েছে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ওই সময়ে তো অনেক কিছু হয়েছে, যা এখন আপনারা সংরক্ষণ করছেন।’ অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘ভালো কিছু থাকতে পারে। ডাকাতেরও কিছু ভালো গুণ থাকতে পারে। তাই বলে ডাকাতকে তো আর ভালো বলা যাবে না।’ প্রধান বিচারপতি এসময় জানতে চান, ‘৭০ অনুচ্ছেদ কেন রেখেছেন?’ জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এর একটি ইতিহাস আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হার্শ ট্রেডিং হচ্ছে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘তাদের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না? তাহলে বিচারকদের ক্ষেত্রে হার্শ ট্রেডিং হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন কি? আপনারা নিজ দলের সদস্যদের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না।’
অ্যাটর্নি জেনারেল জবাবে বলেন, ‘এটা বলা ঠিক না।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এটাই ঠিক। ৭২-এর সংবিধানের পর আইন কেন করেননি? পরিস্থিতি বুঝতে হবে। আপনারা কেন সংসদের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না? আপনারা সংসদ সদস্যদের ওপর আস্থা রাখতে না পারলে বিচারকদের ক্ষেত্রে কিভাবে আস্থা রাখা যায়? দেড় বছর ধরে বিচারক নিয়োগ হচ্ছে না।’
আদালতের কার্যক্রম শেষে এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেন, ‘আইন না থাকলেও রাষ্ট্রপতি বিচারপতি অপসারণ করতে পারবেন— এ পয়েন্টে আমরা একমাত্র উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিই পরবর্তী সময়ে মার্শাল ল’র প্রধান অ্যাডমেনিস্ট্রেটর হয়ে যান। তিনি সংবিধান সাসপেন্ড (অপসারণ) করেছেন এবং শপথ ভঙ্গ করেছেন। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে এখানে ভারসাম্য আনা হয়েছে। ভবিষ্যতে একই ঘটনা ঘটবে না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। সুতরাং আমার কথা হলো ভারসাম্য থাকতেই হবে।’
অন্যদিকে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর মামলায় বেশ কয়েকদিন থেকে পূর্ণাঙ্গ সময় ধরেই শুনানি চলছে। শুনানির প্রথম দিকেই আজকে লার্নেড অ্যাটর্নি জেনারেল তার লিখিত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছিলেন। তার এই যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সর্বশেষ সময় যখন সোয়া ১টা বেজে গেছে, ওই সময় নরমালি কোর্ট নেমে যাওয়ার কথা। ওই সময়েই তার লিখিত যুক্তিতর্কে একটি মন্তব্য উছে আসে। তাতে বলা হয়, সংসদ সদস্যদের ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে— বিচারকের এমন মন্তব্য প্রমাণিত না হলে রাষ্ট্রপতির তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এরকম লিখিত যুক্তিতর্কের প্রশ্নে প্রধান বিচারপতি জানতে চেয়েছেন, এটা কিভাবে সম্ভব যে বিচারককে রাষ্ট্রপতি ইচ্ছ করলেই অপসারণ করতে পারেন।’
মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘এই আলোচনার সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা তার বক্তব্য, বিচারকরা অন্য অভিমত পোষণ করতে পারেন। সেটা মামলার রায়ে প্রতিফলিত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘লিখিত যুক্তিতর্কে অ্যাটর্নি জেনারেল অনেক কিছুই বলেছেন। তিনি বলেছেন মূলত বিচারকের রায় নিয়ে। আসলে আমরা যখন আপিল করি, তখন কিন্তু হাইকোর্ট ডিভিশনের রায়ের বিরুদ্ধে বলতে পারি যে সেখানে কোনও আইনগত ভুল হয়েছে কিনা। আদালত এতে বারবার আপত্তি জানান। আসলে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তিনি এটা বলতে পারেন না। পরে তিনি কিছু কিছু ভাষার ব্যবহার ও আপত্তিকর কিছু বক্তব্য লিখিত যুক্তিতর্কে সংশোধন করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’
যুক্তিতর্ক একটি পর্যায়ে বিচার বিভাগের জন্য, আইনজীবীদের জন্য, বিচারকদের জন্য বিব্রতকর হয়ে উঠে উল্লেখ করে মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘যখন অ্যাটর্নি জেনারেল লিখিতভাবে আদালতের কাছে প্রশ্ন উত্থাপন করেন যে, একজন বিচারক একটা রায় দিয়েছেন, সেই রায়ের কারণে বিচারক ব্যক্তিগতভাবে আক্রান্ত হতে পারেন না। একজন বিচারক রায় দিলে, আমরা রায়ের বিরুদ্ধে বলি, রায়কে বাতিল করার জন্য বলি। বিচারকের রায়ের আপিলের সুযোগ থাকে। আপিলে তার রায় নাও টিকতে পারে। একজন বিচারক রায় দিলে সেটা তার ব্যক্তিগত দায় না। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেলের লিখিত যুক্তিতর্কে সেই ব্যক্তিগত দায় বর্ণনা করে এমনভাবে মন্তব্য করা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি যেন ব্যবস্থা নেন। রাষ্ট্রপতির ব্যবস্থা নেওয়াতো আপিল বিভাগের বিষয় না।’
রিটকারী আইনজীবী আরও বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল যে বক্তব্যগুলো উপস্থাপন করছিলেন, আমার দৃষ্টিতে তাতে তেমন কোনও জরালো যুক্তি নেই। এ কারণে আদালত বারবার প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। অ্যাটর্নি বলেছেন, ৭২-এর সংবিধানে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে থাকায় তারা ওই সংবিধানে ফেরত গিয়েছেন। আদালত তখন পাল্টা জানতে চান, আর্টিক্যাল ১৬০তে কেন ফিরে যাওয়া হচ্ছে না। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ইস্যুতে কেন ফিরে যাওয়া হচ্ছে না। অ্যাটর্নি এসব প্রশ্নের উত্তর দেননি। পরে বিচারকদের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হচ্ছে না। তখন আদালত নিম্ন আদালতগুলো সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্বে চলতে পারছে না বলে উল্লেখ করেন। জেলা জজ নিয়োগ না দিতে পারার কথা বলেন। অনেক জায়গায় বিচারকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার স্বাধীনতা না থাকার কথাও বলেন। আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে জানতে চান, এসব বিষয় তিনি জানেন কিনা।’
মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল মার্শাল ল না চাওয়ার কথা বলেন। তিনি পঞ্চদশ সংশোধনীতে বিচারকদের অপসারণে ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে রাখতে সংসদে বিল পাসের কথা বলেন। জবাবে আদালত বলেছেন, এখনও মার্শল ল-এর আইন রেখে দেননি, ফ্যামিলি অর্ডার অ্যান্ড অ্যাক্ট রেখে দেননি যেটা মার্শল ল-এর সময় হয়েছিল। আপনারাই তো মার্শল ল আইন রেখে দিচ্ছেন। এক জায়গায় রাখবেন, অন্য জায়গায় বলছেন রাখবেন না। এই বক্তব্য কেন?’
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। এর আগে, গত ৮ মে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শুরু হয়। ৯ মে শুনানি শেষে ২১ মে পর্যন্ত তা মুলতবি করেছিলেন আপিল বিভাগ। পরে ২১ মে রবিবার থেকে ধারাবাহিকভাবে শুনানি চলছে। এসময় ষোড়শ সংশোধনীর আপিল শুনানিতে নিয়োগ দেওয়া অ্যামিক্যাস কিউরিরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ষোড়শ সংশোধনীর আপিল শুনানিতে ১২ অ্যামিক্যাস কিউরি নিয়োগ দেন আপিল বিভাগ। এই ১২ আইনজীবী হলেন— বিচারপতি টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, এম আই ফরুকী, ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল, এ জে মোহাম্মদ আলী এ এফ হাসান আরিফ ও আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া।
গত বছরের ১১ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ। গত বছরের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি তুলে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে বিচারকের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়, যেটি ১৯৭২ সালের সংবিধানেও ছিল।
সংবিধানে এই সংশোধনী হওয়ায় মৌল কাঠামোতে পরিবর্তন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করবে— এমন যুক্তিতে ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। ওই রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর রুল জারি করেন।
/এমটি/ ইউআই /এপিএইচ/টিআর/

আরও পড়ুন: দুর্নীতি মামলায় খালেদাকে ১ জুন হাজিরার নির্দেশ

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’