X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

এক মাসেই মিলবে উচ্চমাধ্যমিক সমমানের সনদ!

রশিদ আল রুহানী
২৪ মে ২০১৭, ০২:২৪আপডেট : ২৪ মে ২০১৭, ১৯:৫৬

জিইডি কোর্সের লোভনীয় বিজ্ঞাপন মাধ্যমিক শেষ করে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে সময় লাগে প্রায় দুই বছর। ১২শ নম্বরের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় এই ডিগ্রি পেতে। কিন্তু মাত্র এক মাস সময় নিয়ে চারটি বিষয় পড়েই পাওয়া যায় এই উচ্চমাধ্যমিক সমমানের সনদ! এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের ঠিক পরের এক মাসে কোর্সটি কমপ্লিট করে তার পরের মাসেই ভর্তি হওয়া যায় দেশের নামিদামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুধু দেশেরই নয়, পৃথিবীর সব দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়েই রয়েছে এই ডিগ্রি নিয়ে স্নাতকে ভর্তির সুযোগ। বাংলা বা ইংরেজি মিডিয়ামসহ যেকোনও ব্যাকগ্রাউন্ডের এবং যেকোনও বয়সের শিক্ষার্থীর জন্যই উন্মুক্ত এই কোর্সটি।
ওপরের তথ্যগুলো বিস্মিত করার মতো হলেও জিইডি সেন্টার ইনকরপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই সুযোগটিই করে দিচ্ছে। তাদের কোর্সটির নাম জেনারেল এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট, সংক্ষেপে জিইডি কোর্স। খোদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অনুমোদন দিয়েছে এই কোর্সের! যদিও এই প্রতিবেদকের কাছে কোর্সটি চালু থাকা নিয়ে রীতিমতো শঙ্কা ও হতাশা প্রকাশ করেছেন সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তারা। কোর্সটি অনতিবিলম্বে বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, জিইডি সেন্টার নামে ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে জিইডি কোর্স সম্পর্কে তথ্য প্রচার করে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হচ্ছে। জিইডি সেন্টার ইনকরপোরেশনের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক বিজ্ঞাপন দিয়ে বলা হয়েছে, এই প্রোগ্রামে দুর্বল ও সবল— সবাই ভর্তি হতে পারেন। চাকরিজীবীরা নিজেদের সুবিধামতো সময়ে ক্লাস করতে পারবেন। এছাড়া, যারা অল্প সময়ে টার্গেট স্কোর পেতে চান, তাদের জন্যও এই কোর্স কার্যকরী। কোর্সে ভর্তি থেকে শুরু করে সার্টিফিকেট হাতে পাওয়া পর্যন্ত মোট খরচ মাত্র ৪৫ হাজার টাকা।
সোমবার (২২ মে) রাজধানীর ধানমন্ডিতে জিইডি সেন্টার ইনকরপোরেশনের অফিসে গিয়ে দেখা যায়, ধানমন্ডি ২৭-এর মীনা বাজারের পেছনে একটি ভবনের নিচ তলায় দুই কক্ষের একটি ফ্ল্যাটে ক্লাস করছেন এই কোর্সে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা। ছোট আকারের দু’টি রুমে ঠাসাঠাসি করে বসানো হয়েছে চেয়ার, রুমের চারদিকের জানালা বন্ধ। ক্লাস করছেন মাত্র পাঁচ জন শিক্ষার্থী।
জিইডি সেন্টারের ক্লাসরুম ওই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ-লেভেল পরীক্ষায় কৃতকার্য না হতে পেরে মাত্র এক সপ্তাহ আহে তারা ভর্তি হয়েছেন এখানে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আগেএই কোর্সের সন্ধান পেলে এ-লেভেলে ভর্তিই হতাম না। মাত্র চার মাসে এই কোর্সটি শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া গেলে কষ্ট করে এ-লেভেল পড়ার তো কোনও দরকার নেই।’
এদিকে জিইডি কোর্সের কো-অর্ডিনেটর আল আমীনের কাছে কোর্সটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এই কোর্সটি ২০১০ সালে ইউজিসি অনুমোদন দিয়েছে। এখান থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী পাশ করে দেশে-বিদেশে লেখাপড়া ও চাকরি করছেন।’
কখন কিভাবে ভর্তি হওয়া যায়, জানতে চাইলে আল আমীন বলেন, ‘এসএসসি পাশ করার পর যে কেউ ইচ্ছা করলেই ভর্তি হতে পারেন। কেউ ২০ বছর আগে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে থাকলেও আবারও এই কোর্স করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন। আবার কেউ আজ এসএসসি পাস করে আগামীকালই এখানে ভর্তি হয়ে এক মাসের মধ্যে কোর্স শেষ করে পরের মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন।’
আল আমীন জানান, কোর্সের শেষ দিকে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। পরীক্ষাও হয় অনলাইনে। আমেরিকান একটি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় পরীক্ষা, সার্টিফিকেটও তারাই দেয়।
জিইডি সেন্টারের বিজ্ঞাপন জিইডি কোর্সের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলে এই কোর্সের কো-অর্ডিনেটর বলেন, ‘এই কোর্সে চারটি বিষয় পড়ানো হয়— ইংরেজি সাহিত্য, আমেরিকার ইতিহাস, সাধারণ বিজ্ঞান ও গণিত। সবই ইংরেজিতে, তবে খুব সহজভাবে লেখা। কারণ, সাধারণত একটু কম মেধাবীদের জন্য কোর্সটি প্রণয়ন করা।’ সম্প্রতি এই কোর্সের সিলেবাস আরও সহজ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জানা যায়, ভিয়েতনামে যুদ্ধের কারণে সেখানকার হাজার হাজার মানুষ লেখাপড়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। তাদের আবারও পড়ালেখার পথে ফিরিয়ে আনতে কোর্সটি চালু করা হয়। ওই যুদ্ধের সময়ই মূলত কোর্সটি আমেরিকায় চালু হয়। ২০১০ সালে ইউজিসির অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশে কোর্সটি চালু করে জিইডি সেন্টার।
এদিকে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপ-পরিচালক জেসমীন পারভীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১০ সালের দিকে ইউজিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান এই কোর্সটি অনুমোদন দেন। তখন আমি ছুটিতে ছিলাম। ছুটি থেকে ফিরে এসে কোর্সটির অনুমোদন দেওয়ার কথা জানতে পারি। কিন্তু কোর্সটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একদমই চালু থাকার কথা নয়। কারণ ওরা যেসব বিষয় পড়ায় তা দেশের শিক্ষা কারিকুলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এছাড়া মাত্র চার মাসের একটি কোর্স কখনই দুই বছরের উচ্চমাধ্যমিক সমমানের হতে পারে না।’
ইউজিসির চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানের কাছে কোসর্টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি রীতিমতো আতঙ্ক প্রকাশ করেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশে কোর্সটি চালু হওয়ার কথা নয়। কারণ এটা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কোসর্টি কিভাবে অনুমোদন পেয়েছে, তা আমার জানা নেই।’ খোঁজ-খবর নিয়ে এই কোর্সটি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান আব্দুল মান্নান।

আরও পড়ুন-

এবার এইচএসসির একশ’ উত্তরপত্র মিললো রাবির হলে

প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পাচ্ছেন ১৬ হাজার সহকারী শিক্ষক

/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা