রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফিয়া জাহিন চৈতির মৃত্যুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ‘ক্যান্সারে মৃত্যু হয়েছে’ জানালেও তার ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা হয়েছে, ‘মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গু’। এদিকে ডেথ সার্টিফিকেট ও মেডিক্যাল রিপোর্টের মধ্যে অমিল থাকার অভিযোগ তুলেছে ঢাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগ কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, একদিন আগের রিপোর্টে যদি ‘ডেঙ্গু নেগেটিভ’ হয়ে থাকে, তাহলে ডেথ সার্টিফিকেটে কেন ‘ডেঙ্গু’ লেখা হলো?
প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আফিয়া জাহিন চৈতি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ১৭ মে গ্রিনরোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই দিন তাকে ডেঙ্গুর চিকিৎসা না দিয়ে ক্যান্সারের চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। পরদিন ১৮ মে চৈতি মারা যান। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার সহপাঠীরা এসে ওই হাসপাতালে ভাঙচুর করেন। তখন থেকেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমকে বলে আসছে চৈতি ক্যান্সারে মারা গেছে।
চৈতির ডেথ সার্টিফিকেট ও মেডিক্যাল রিপোর্ট থেকে জানা যায়, গত ১৮ মে সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেটে তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে প্রথমেই লেখা হয় ‘ডেঙ্গু জ্বর’ এবং পরের বাক্যে বলা হয়েছে ‘এএমএল (একুউট মাইলোব্লাস্টিক লিউকোমিয়া), তবে এএমএল-এর বিষয়ে ব্র্যাকেটে লেখা হয়েছে ‘নট কনফার্মড’। অথচ মাত্র এক দিন আগের (১৭ মে) আরেকটি রিপোর্টে বলা হয় ‘ডেঙ্গু নেগেটিভ।’ তাহলে ডেথ সার্টিফিকেটে কিভাবে মৃত্যুর কারণ ‘ডেঙ্গু’ লেখা হলো, এ প্রশ্ন তুলেছেন চৈতির শিক্ষক, সহপাঠী ও স্বজনরা।
১৭ মে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. জাহানারা বেগম মোনা স্বাক্ষরিত একটি রিপোর্টে দেখা যায়, ‘চৈতি নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত’,আরেকটি রিপোর্টে বলা হয় চৈতির ‘একুউট মাইলোব্লাস্টিক লিউকোমিয়া।’
চৈতি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। এই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড.আনোয়ারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘রিপোর্টে যদি ‘একুউট মাইলোব্লাস্টিক লিউকোমিয়া’ বলা হয়ে থাকে, তাহলে ডেথ সার্টিফিকেটে সেটাকে ‘নট কনর্ফামড’ লেখা হলো কেন। আবার একদিন আগের রিপোর্টে যদি ‘ডেঙ্গু নেগেটিভ’ হয়ে থাকে, তাহলে ডেথ সার্টিফিকেটে কেন ‘ডেঙ্গু’ লেখা হলো।’’
তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে জানলাম চৈতির ‘নিউমোনিয়া’, পরে জানলাম ‘ক্যান্সার’, শেষে জানলাম ‘ডেঙ্গু’। যদিও প্রথম দিনের রিপোর্টে ‘ডেঙ্গু নেগেটিভ’ বলা হয়েছিল। কিন্তু ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা রয়েছে ‘ডেঙ্গু’, আর ক্যান্সার সম্পর্কে বলা হয়েছে ‘কনফার্ম নয়’।’’
অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম ঘটনার পরপরই সেন্ট্রাল হাসপাতালের একজন নারী চিকিৎসকের ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মৃত চৈতিকে নিয়ে ফেসবুকে তিনি নোংরা ভাষায় একটি পোস্ট দিয়েছেন, যা চৈতির পরিবারকে চরম বিব্রত এবং অপমানিত করেছে।’
সেন্ট্রাল হাসপাতালে মারা যাবার পরপরই গত ১৮ মে চৈতির ভাই নাফিউল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘চৈতি আইসিইউতে থাকা অবস্থায় আইসিইউ’র চিকিৎসক ডা. ইউসুফ রাশেদ আমাদের বলেছেন, ‘চৈতি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।’ এমনকি প্লাটিলেট কমে যাবার পরও তাকে শুরুতেই আইসিইউতে না নিয়ে ওয়ার্ডে রাখা ভুল ছিল বলেও তিনি (ইউসুফ রাশেদ ) মন্তব্য করেছিলেন।’’
ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা ‘ডেঙ্গু’ অথচ মৃত্যুর পরপর ক্যান্সার বলা হলো কেন, জানতে চাইলে সেন্ট্রাল হাসপাতালের উপপরিচালক ডা.মুনসুর আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি একটি ভুল বোঝাবুঝি ছিল। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না।’ এরপর ‘কেস হ্যাজ বিন ডিসমিসড’ বলে ফোন কেটে দেন ডা. মুনসুর আলী।
/জেএ/এপিএইচ/
আরও পড়ুন-
রাষ্ট্রপতির কাছে দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ
লঞ্চডুবিতে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত রবিবার
সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলায় জামিন মেলেনি মেয়র মিরুর