X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

চিকিৎসক-সমাজের সঙ্গে বেঈমানি করেছে সেন্ট্রাল হাসপাতাল: বিএমএ’র মহাসচিব

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৫ মে ২০১৭, ১৮:০৯আপডেট : ২৫ মে ২০১৭, ২১:২৯

আফিয়া জাহিন চৈতি, ছবি- অনলাইন থেকে সংগৃহীত

ভুল চিকিৎসায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। সংগঠনটির মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেছেন, ‘গোটা চিকিৎসক-সমাজের সঙ্গে বেঈমানি করেছে সেন্ট্রাল হাসপাতাল। এই প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করেন, চেম্বার করেন তারাও ওই প্রতিষ্ঠানকে বয়কট করুন। এরপরও  যদি আপনারা সেখানে কাজ করেন, চেম্বার করেন, তবে তা নিজ দায়িত্বে করবেন। আপনাদের নামের তালিকা করা থাকবে। বিএমএ কখনও আপনাদের পাশে থাকবে না। আপনাদের কোনও দায়দায়িত্ব নেবে না।’

সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় ঢাবি শিক্ষার্থী আফিয়া জাহিন চৈতির মৃত্যুর ঘটনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে তিনি একথা বলেন।

গত ১৮ মে ঢাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আফিয়া জাহিন চৈতি সেন্ট্রাল হাসপাতালে মারা যান। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে তার সহপাঠীরা এসে ওই হাসপাতালে ভাঙচুর করেন। এর প্রতিবাদে বিএমএ ২১ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত কর্মসূচি দেয়। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (২৫ মে) মানববন্ধন করে সংগঠনটি। এর মধ্যে গতকাল বুধবার (২৪ মে) সেন্ট্রাল হাসপাতাল ও ঢাবি কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়। সমঝোতা অনুযায়ী, হাসপাতালে ভাঙচুরসহ অন্যান্য ঘটনায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কোনও ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেবে না। অন্যদিকে, ঢাবির পক্ষ থেকেও সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নেওয়া হবে। চৈতির মৃত্যুর ঘটনার পর বিএমএ সেন্ট্রাল হাসপাতালের পাশে থেকে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করলেও বিএমএকে অবহিত না করেই ঢাবি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করায় মানববন্ধনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএমএ মহাসচিব। 

চিকিৎসক সমাজের উদ্দেশে ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিএমএ আপনাদের রাস্তায় নামিয়ে সরে যাবে না। বেঈমানি করবে না। বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। বিএমএ চিকিৎসকবান্ধব প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান চিকিৎসকদের জন্যই কাজ করবে। কর্মস্থলে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।’

বয়কটের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সেন্ট্রাল হাসপাতালে যে ঘটনা ঘটেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে ওই হাসপাতালটির প্রতি এবং এখানে কর্মরত চিকিৎসকদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে বিএমএ তাদের নির্ধারিত কর্মসূচি দেয়। কিন্তু সেন্ট্রাল হাসপাতাল তাদের ব্যবসার ও মুনাফার প্রয়োজনে গত সোমবার (২২ মে) ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা এজাহার প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজাহারের সঙ্গে সেদিনের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ তারা থানায় দিয়েছিল। কিন্তু এখন তারা মামলা প্রত্যাহার করছে। আমাদের সঙ্গে কথা না বলে তারা মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখনও বলি, তারা যে এজাহার দিয়েছে তা মামলা হিসেবে চলুক। একইসঙ্গে অবহেলায় ছাত্রী মৃত্যুর অভিযোগে ঢাবির করা মামলাও চলুক। আমরা সত্যের সন্ধান চাই।’

তিনি বলেন, ‘সেন্ট্রাল হাসপাতাল অপরাধ করে থাকলে তাদের সাজা চাই। আর যদি তারা অপরাধ না করে থাকে, তবে যারা অভিযোগ এনেছেন তাদের ব্যাপারে আদালত কী বলেন, সেটাও দেখতে চাই। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর ভবিষ্যতে না ঘটে এবং কেউ এমন ঘটনা ফলাও করে প্রচার না করে এ বিষয়েও আদালতের নির্দেশনা চাই।’

ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সেন্ট্রাল হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ নির্দেশনা চাই। কোনও এজাহার বা মামলা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। আমরা সত্য উদঘাটন ও এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা চাই।’

আফিয়া জাহিন চৈতির মৃত্যু ঘটনায় সেন্ট্রাল হাসপাতালের গঠিত নিজস্ব তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল বৃহস্পতিবার। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চৈতির মুত্যুর পর ঢাবির দায়ের করা মামলার জামিনপ্রাপ্ত আসামি সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আবুল কাশেম বলেন, ‘আমি কোনও মন্তব্য করতে পারব না।’ এরপর হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মতিওর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু ডা. মতিওর রহমানের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বিষয়টি  ডা. কাশেমকে জানালে তিনিও স্বীকার করেন যে, ডা. মতিওর ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। 

আফিয়া জাহিন চৈতি ছিলেন ঢাবির প্রাণিবদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী। এ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আনোয়ারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আফিয়া জাহিন চৈতিকে আমরা আর ফেরত পাবো না। তার মারা যাওয়ার পর যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, সেজন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করেছি। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আফিয়ার পরিবারের পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। সেন্ট্রাল হাসপাতালের ৯ চিকিৎসককে আসামি করে দায়ের করা মামলাও প্রত্যাহার করা হবে।’

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আফিয়া জাহিন চৈতি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ১৭ মে গ্রিনরোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই দিন তাকে ডেঙ্গুর চিকিৎসা না দিয়ে ক্যান্সারের চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। পরদিন ১৮ মে চৈতি মারা যান। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার সহপাঠীরা এসে ওই হাসপাতালে ভাঙচুর করেন। তখন থেকেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমকে বলে আসছে চৈতি ক্যান্সারে মারা গেছে। যদিও সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে দেওয়া তার ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা হয়েছে, ‘মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গু’। 

/জেএ/এমএ/ এপিএইচ/

আরও পড়ুন: ডেথ সার্টিফিকেটে চৈতির মৃত্যুর কারণ ‘ডেঙ্গু’

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
কুমিল্লা মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালকে ২ লাখ টাকা জরিমানা
কুমিল্লা মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালকে ২ লাখ টাকা জরিমানা
ফটোকপি দোকানের কর্মচারী, জেলে, রাজমিস্ত্রি তৈরি করতো জাল টাকা
ফটোকপি দোকানের কর্মচারী, জেলে, রাজমিস্ত্রি তৈরি করতো জাল টাকা
রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর নিরাপত্তা জোরদার করছে কিয়েভ
রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর নিরাপত্তা জোরদার করছে কিয়েভ
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের