X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

ধর্ষণের ঘটনা আগে থেকেই জানতো পুলিশ!

জামাল উদ্দিন ও এস এম নূরুজ্জামান
২৬ মে ২০১৭, ১৬:২২আপডেট : ২৬ মে ২০১৭, ১৬:২৮

বনানীর রেইনট্রি হোটেল পরিদর্শন শেষে বেরিয়ে আসছেন ধর্ষণ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা

বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনা মামলা হওয়ার আগে থেকেই জানতো পুলিশ। দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হন ২৮ মার্চ। এরপর আসামিরা তাদের সঙ্গে কয়েকদফা সমঝোতার চেষ্টা করে। ঘটনার পরপরই একজন সংসদ সদস্যের ছেলের মাধ্যমে বিষয়টি সমঝোতা করতে রেগনাম সেন্টারে অবস্থিত পিকাসো রেস্টুরেন্টে বৈঠক করেছিল তারা। ওই বৈঠকে প্রধান তিন আসামি সাফাত আহমেদ, সাদমান সাকিফ ও নাঈম আশরাফ ওরফে হালিম ছাড়াও একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর ধর্ষণের শিকার  দুই শিক্ষার্থীকে এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি নিয়ে উচ্চ-বাচ্চ্য না করারও হুমকি দেওয়া হয়েছিল। আসামিদের হুমকি ও ব্ল্যাকমেইলের সব তথ্যই জানতো বনানী থানা পুলিশ ও একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা। দুই শিক্ষার্থীর স্বজন ও মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে ।

মামলা রেকর্ড ও তদন্ত নিয়ে পুলিশের অনিয়ম খুঁজতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে তারা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মানস কুমার পোদ্দার,বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরমান আলী ও ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবদুল মতিনের কাছে পৃথক পৃথক অভিযোগের ব্যাখ্যা তলব করার প্রস্তুতি নিয়েছে ডিএমপি সদর দফতর।

তদন্তে সংশ্লিষ্টরা জানান, বনানী থানায় ধর্ষণের মামলা করতে গিয়ে নাজেহালের শিকার হয়েছিলেন দুই শিক্ষার্থী। তাদের গালি-গালাজ করেছিলেন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরমান আলী। মামলা হওয়ার কয়েকদিন আগেই দুই শিক্ষার্থীর বিষয়ে ওসি ফরমান আলীর কাছে তথ্য দিয়েছিলেন সাফাতের সাবেক স্ত্রী। তাকেও খারাপ চরিত্রের বলে উল্লেখ করেছিলেন  ফরমান আলী। মামলা না নিয়ে উল্টো দুই শিক্ষার্থীর চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি।

ধর্ষণের শিকার দুই শিক্ষার্থী পরে  ডিএমপির সদর দফতরের একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ কয়েক ব্যক্তির সহায়তা নিয়ে মামলা দায়ের করতে গিয়েছিলেন। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বনানী থানার ওসি ফরমান আলী।

সূত্রমতে,অভিযোগের তথ্য আগে পেয়েও ধর্ষণে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের পালানোর সুযোগ করে দিয়েছিলেন থানার কর্মকর্তারা। ভিকটিমদের তথ্য নিয়ে বনানী থানার পুলিশ আসামিদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা  নিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। মামলা দায়ের হওয়ার পরও  প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ নিজ বাসায় অবস্থান করেন। কিন্তু বনানী থানা পুলিশ তাকে খুঁজে পাননি। এসব অভিযোগের কারণেই তদন্তকাজে স্বচ্ছতা আনার জন্য ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর পুলিশের পক্ষ থেকে যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল, সেখানে ব্যত্যয় খুঁজে পেয়েছে তদন্ত কমিটি। ৬ মে মামলা হওয়ার আগে থেকেই বিষয়টি বনানী থানা পুলিশ জানতো বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে কমিটি।

ধর্ষণের ঘটনার পর ৩৭ দিনে শিক্ষার্থীদের একাধিকবার ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা করা হয়। ভীত-সন্ত্রস্ত তরুণীরা পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের কাছে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। ততোদিনে গুলশান জোনের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তারাও এসব জেনে ছিলেন।

ধর্ষণের পর এক মাস সাত দিনের ঘটনাপ্রবাহ কেমন ছিল, সেই ৩৭ দিনে মামলার বাদী-বিবাদী এবং বনানী থানা পুলিশের কর্মকাণ্ড,  তদন্তে যুক্ত করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মামলার তদারকি কর্মকর্তা ও  ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার ও ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের উপ-পুলিশ কমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা কেবলই ফ্যাক্ট ইন ইস্যুতে তদন্ত করছি। ধর্ষণের পর ও মামলা রেকর্ড হওয়ার মাঝে এক মাস সাত দিনে কী কী ঘটেছিল সেটি তদন্তের বিষয় নয়। পুলিশ আগে থেকেই বিষয়টি জানতো কিনা, তাও এ মুহূর্তে বলতে পারব না ‘

অনিয়ম খুঁজতে পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে ওসি ফরমান আলী তার লিখিত বক্তব্যে দায়িত্বে অবহেলাজনিত সকল কর্মকাণ্ডের দায়ভার দেন তখনকার ভারপ্রাপ্ত উপ কমিশনার মানস কুমার পোদ্দারের ওপর। এবিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মানস কুমার পোদ্দার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘আমি কিছুই বলতে পারবো না। আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে কিনা তাও জানিনা।’ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাওয়ার কোনও তথ্য পাননি বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বনানী থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবদুল মতিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলা হওয়ার দুই দিন আগে আমরা জানতে পারি। ৪ মে রাত ৯টার দিকে পিয়াসা ও দুই শিক্ষার্থী থানায় এসেছিলেন। তারা ওসির রুমে বসেই কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাদের মধ্যে কী কথা হয়েছিল সেটি বলতে পারবো না। তারও আগে কেউ জানতো কিনা বলতে পারবো না।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বনানী থানায় ধর্ষণের মামলা রুজু ও তদন্তে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তার লিখিত জবানবন্দি গ্রহণের পর বিচার-বিশ্লেষণ এবং পর্যালোচনা করা হয়। সবার সাক্ষ্য গ্রহণের পর তদন্ত কমিটির কাছে যাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার তথ্য আছে,কেবল তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হয়। এক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে ব্যাখ্যা পাওয়ার পরই শাস্তির পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

/এপিএইচ/



সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দেশের অর্থনীতিতে বিরাট সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে নৌ মন্ত্রণালয়: প্রতিমন্ত্রী
দেশের অর্থনীতিতে বিরাট সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে নৌ মন্ত্রণালয়: প্রতিমন্ত্রী
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মানববন্ধন স্থগিত
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মানববন্ধন স্থগিত
জলাবদ্ধতা নিরসনে কাউন্সিলরদের মাঠে থাকার নির্দেশ মেয়র তাপসের
জলাবদ্ধতা নিরসনে কাউন্সিলরদের মাঠে থাকার নির্দেশ মেয়র তাপসের
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
সর্বাধিক পঠিত
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার