X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

তীব্র গরমে রাজধানীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ

জাকিয়া আহমেদ
২৬ মে ২০১৭, ২০:২৪আপডেট : ২৬ মে ২০১৭, ২০:৩৩

রাজধানীর মহাখালীর বিশেষায়িত হাসপাতাল আইসিডিডিআরবি’তে চিকিৎসা নিচ্ছেন যায়রিার রোগী

নারায়ণগঞ্জ থেকে রাজধানীর মহাখালীর বিশেষায়িত হাসপাতাল আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআরবি) নয় মাস বয়সী শিশু রুহুল আমীনকে নিয়ে এসেছেন বাবা মোহাম্মদ বাদশা মিয়া। ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন সেবা নিতে ছুটছেন চিকিৎসকদের পরার্মশ অনুযায়ী। শুধু বাদশা মিয়াই নন, পুরো হাসপাতাল জুড়ে একই চিত্র। গত এক সপ্তাহ ধরেই হাসপাতালে চলছে এই অবস্থা।
রোগীর চাপ সামলাতে হাসপাতালটিতে চিকিৎসকদের ডিউটি রোস্টারেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে চিকিৎসকরা সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত হাসপাতালে ডিউটি করলেও রোগীর ভীড় সামলাতে এখন রাত ৯টা পর্যন্ত হাসপাতালে অবস্থান নিচ্ছেন। আর সকালে হাসপাতালে প্রবেশের নির্ধারিত সময় সাড়ে আটটা হলেও চিকিৎসকরা আসছেন সকাল সাড়ে ছয়টায়।

ডায়রিয়ার এ পরিস্থিতি নিয়ে আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালের ডায়রিয়াল ডিজিজ ইউনিট প্রধান ডা. আজহারুল ইসলাম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বছরে দুইবার মার্চ-এপ্রিল যায়রিয়ার  প্রি মৌসুম এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসের শেষ পর্যন্ত সময়কে পোস্ট মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এ সময় রোগীর চাপ বেশি থাকে। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার (২৪ মে) দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় রোগী ভর্তি হয়েছেন ৫৫২ জন। গত মাসে (এপ্রিল) ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ৬৫৪ জন। চলতি মাসে এই সংখ্যা হয়তো ছাড়িয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

হাসপাতালে গিয়ে জানা গেল, আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ৩০০ হলেও রোগীর চাপের কারণে হাসপাতালে আরও ৫০ বেড বাড়ানো হয়েছে। আইসিডিডিআরবি এর রেজিস্ট্রেশন খাতা থেকে জানা যায়, গত ১৭ মে রোগী ছিল ৪০৭ জন, ১৮ মে ছিল ৪৬৫ জন, ১৯ মে ছিল ৪৫৩ জন, ২০ মে ছিল ৫৩৭ জন, ২১ মে ছিল ৫৩২ জন এবং গত সোমবার (২২ মে) নতুন ভর্তি হয়েছেন ৫৫২ জন। আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে

অন্যদিকে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে জানা যায়, শুধু গরমের কারণে রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। গরমের আগে ঢামেক বর্হিবিভাগে গড়ে  এক হাজার ১০০ থেকে এক জাহার ২০০ রোগী এলেও বর্তমানে রোগীর সংখ্যা দেড় হাজারের উপরে গেছে। এছাড়া রোগী বেড়েছে রাজধানীর শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালসহ প্রতিটি হাসপাতালে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানা যায়, দেশের ২০টি জেলায় ডায়রিয়ার আক্রমণ রযেছে বেড়েছে। গত ২২ মে সারাদেশে মোট ৯৫৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। গত এক সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছে তিন হাজার ৭৬৪ জন। আর গত একমাসে আক্রান্ত হয়েছে ১৬ হাজার ৪৯৩ জন। এছাড়া ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২২ মে পর্যন্ত সারাদেশে এক লাখ ৪১ হাজার ৪০৩ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ পর্যন্ত এ বছরে ডায়রিয়ায় মারা গেছেন তিন জন।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) নয় মাসের কন্যা শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বাদশা মিয়া বলেন, ‘হাসপাতালে আসার দু’দিন আগে থেকে ছেলের পাতলা পায়খানা আর বমি হচ্ছিলো। স্যালাইন খাওয়ালেও প্রচণ্ড গরমের কারণে কোনও উন্নতি হয়নি। শেষে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।’

আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালে কথা হয় রাজধানীর মানিকনগরের মোস্তফা রহমানের সঙ্গে। তিনি হাসপাতালে এসেছেন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত সাত মাসের শিশু আলভি রহমানকে নিয়ে। যাত্রাবাড়ীর আকলিমা বেগমও এসেছেন নয় বছরের শিশু কন্যা জান্নাতুল ফেরদৌসকে নিয়ে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর বাড্ডা, তেজগাঁও এবং যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী বেশি। পানিতে সমস্যা, পরিবেশগত অন্যান্য সমস্যা এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে এসব এলাকায় গরমে রোগের প্রকোপ বেড়েছে।

আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ডা. আজহারুল ইসলাম খান বলেন, ‘আক্রান্ত এলাকাগুলোতে হয়তো ১০০ জন মানুষের জন্য একটি পানির লাইন থাকলেও সেখান থেকে অবৈধভাবে পানি নিচ্ছেন এক হাজার জন। এসব কারণে পানির পাইপ পাতলা হয়ে যায় এবং পাশেই থাকা সুয়্যারেজ লাইন থেকে সহজেই জীবানু সে পানিতে মিশে যায়।

আগে যে পানিতে জিবানু ছিল, সে পানি একবার পান করলে জীবানু শরীরকে আক্রমণ করতে পারতো না। কিন্তু এখন প্রচণ্ড গরমের কারণে মানুষ বেশি পানি খাচ্ছে বলেই জীবানু আক্রমণ করতে পারছে।

এসময় ডায়রিয়া আক্রমণের কারণ সর্ম্পকে প্রসঙ্গে কথা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা.সানিয়া তহমিনার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গরমের এ সময় ডায়রিয়ার জীবানু পূর্ণমাত্রায় জন্ম ও বিস্তার লাভ করে। একারণে আক্রমণও হয় বেশি।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়রিয়া জন্ডিস, টাইফয়েডসহ অন্য পানিবাহিত রোগগুলোও ছড়ায় এ সময় বেশি ছড়ায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে প্রথমেই স্যালাইন খেতে হবে। কেউ যদি স্যালাইন না খেতে পারেন, আর তাতে প্রস্রাব কমে যায়, তাহলে তার কিডনি বিকল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেক্ষেত্রে রোগীকে শরীরে স্যালাইন নিতে হবে। ডায়রিয়ার সঙ্গে কারও যদি জ্বর, ব্যথা থাকে তাহলে তাকে এন্টিবায়োটিক দিতে হবে।’

ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘পায়খানার সঙ্গে যদি রক্ত যায়, তহলে বুঝতে হবে, রক্ত আমাশয় হয়েছে। সঙ্গে যাদের বমি হবে, তাদের হাসপাতালে নিতে হবে।’

/এসএমএ/

আরও পড়ুন

চিকিৎসক-সমাজের সঙ্গে বেঈমানি করেছে সেন্ট্রাল হাসপাতাল: বিএমএ’র মহাসচিব

চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ, দুর্ভোগে রোগীরা

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইসরায়েলি হামলায় হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতার মৃত্যু: যুক্তরাষ্ট্র
ইসরায়েলি হামলায় হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতার মৃত্যু: যুক্তরাষ্ট্র
ম্যারেজ কাউন্সেলিং সম্পর্কে যা কিছু জানা জরুরি
ম্যারেজ কাউন্সেলিং সম্পর্কে যা কিছু জানা জরুরি
নিজ বাড়ির সামনে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
নিজ বাড়ির সামনে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
কয়রায় সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউন ভিক্টোরিয়া
কয়রায় সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউন ভিক্টোরিয়া
সর্বাধিক পঠিত
লিটনের বাদ পড়া নিয়ে যা বললেন হাথুরুসিংহে
লিটনের বাদ পড়া নিয়ে যা বললেন হাথুরুসিংহে
পদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
একীভূত হলো দুই ব্যাংকপদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই