X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

৩০ শিশু-কিশোরের স্বপ্ন বদলে দিলো বিমান

চৌধুরী আকবর হোসেন
২৭ মে ২০১৭, ১৭:৩৮আপডেট : ২৭ মে ২০১৭, ১৯:৩১

মিরপুর ও তেজগাঁও শিশু পরিবারের সুবিধা বঞ্চিত ৩০ শিশু-কিশোরের উড়োজাহাজে ভ্রমণ, ছবি-সাজ্জাদ হোসেন ঢাকা থেকে সিলেটগামী বিজি ১৬০৫ ফ্লাইটে ১১৫ জন যাত্রীর মধ্যে ৩০ জনই শিশু-কিশোর। এরা কেউ উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান নয়। অনাথ, সুবিধা বঞ্চিত। সমাজ সেবা অধিদফতর পরিচালিত সরকারি শিশু পরিবারের (নিবাস) সদস্য এরা। তবু এরাই ছিল ফ্লাইটের বিশেষ যাত্রী। শনিবার  ভোর সাড়ে চারটায় এরা যখন উড়োজাহাজে ওঠে, তখন ককপিট থেকে ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইউম স্বাগত জানান তাদের।
শনিবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আয়োজনে মিরপুর ও তেজগাঁও শিশু পরিবারের সুবিধা বঞ্চিত ৩০ জন শিশু-কিশোরের উড়োজাহাজে ভ্রমণ ও ঈদ উপহার বিতরণ করা হয়। উড়োজাহাজে ভ্রমণ শিশুদের বিনোদন হলেও শেষ পর্যন্ত শুধু বিনোদন থাকেনি। এই ভ্রমণ তাদের স্বপ্ন বদলে দিয়েছে, বদলে দিয়েছে জীবনের লক্ষ্যও।

সিলেট যাওয়ার সময় বিমানে চড়ে পুলকিত হয়ে উঠে শিশু-কিশোররা। মিরপুর শিশু পরিবারের আট ধরে থাকা ষষ্ঠ শ্রেণির এই ছাত্র মো. সোহেল রানা জানায়, ‘আমি কোনও দিন ভাবতে পারিনি, বিমানে চড়বো। যেদিন থেকে আমি শুনেছি বিমান চড়বো, সেদিন থেকে অপেক্ষা করেছি। আমার কাছে স্বপ্নের মতো হয়েছে।’

বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের জানালা দিয়ে মেঘের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে মেহেদী হাসান। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া এই ছাত্র জানায়,‘উড়োজাহাজের উপরেও মেঘ, নিচেও মেঘ, আর আমি এর মধ্যে উড়োজাহাজে রয়েছি। বড় হয়ে কী করবে জানতে চাইলে মেহেদী হাসান জানায়,আমি পাইলট হবো।’ মেহেদীর আগেও পাইলট হওয়ার স্বপ্ন ছিলো না। লেখা পড়া শেষ করে চাকরি করার স্বপ্ন ছিল তার।

সিলেটে ওসামানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইটটি অবতরণের পর পাইলট নওশাদ আতাউল কাইউম ককপিট থেকে এসে শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন, ছবি তুলেন। পাইলট নওশাদ আতাউল কাইউমকে কাছে পেয়ে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন আরও জেগে বসে শিশুদের মনে। পাইলট নওশাদ আতাউল কাইউমের সঙ্গে ককপিটে ফার্স্ট অফিসার মুনজারিন। তিনিও শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন। তাকে দেখেও কিশোরীদের মনেও পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দানাবাঁধে।

নওশাদ আতাউল কাইউম বলেন, ‘সব শিশুর মধ্যে প্রতিভা রয়েছে, এটি জাগিয়ে তুলতে হয়। আজকে আমার জন্য একটি বিশেষ দিন। একসঙ্গে ত্রিশজন শিশুকে নিয়ে ফ্লাই করেছি। এমন সুযোগ আগে কখনও হয়নি।’

সুবিধা বঞ্চিত ৩০ শিশু-কিশোরের উড়োজাহাজে ভ্রমণ ছবি-সাজ্জাদ হোসেন সিলেটে শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা পর্যটন মোটেল, লাক্কাতুয়া চা বাগান ও হজরত শাহ জালাল (রা.) মাজার পরির্দশন করে। সিলেটে ভ্রমণ শেষে ফের বিজি ০০২ ফ্লাইটে ঢাকায় ফেরে শিশু-কিশোররা। ফিরতি ফ্লাইটেও ককপিট থেকে ক্যাপ্টেন বলেন উঠেন, ‘আজকের ফ্লাইটি বিশেষ ফ্লাইট। আমাদের সঙ্গে রয়েছে মিরপুর ও তেজগাঁওয়ের শিশুরা।’

অভাব অনটনের কারণে পরিবারকে ছেড়ে ছয় বছর ধরে মিরপুরের শিশু পরিবারের রয়েছেন মো. ইসমাইল। শিশু পরিবারে বেড়ে উঠা ইসমাইল উড়োজাহাজে চড়ে উচ্ছ্বাসিত। ইসমাইল বলেন, ‘জীবনে কোনও দিন উড়োজাহাজে ওঠার সুযোগ হতো কিনা আমি জানি না। তবে আজকে আমার স্বপ্ন সত্য হয়েছে।’

তেজগাঁও শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্ববধায়ক ঝর্ণা জাহিন বলেন, ‘আমাদের শিশু পরিবারের উপর দিয়ে উড়োজাহাজ উড়ে যায়। ছোট শিশুরা রুম থেকে ছুটে উড়োজাহাজ দেখে। আমি কোনও দিন ভাবতে পারিনি, আমার বাচ্চাদের বিমানে চড়াতে পারবো। আজ এ ভ্রমণে তাদের স্বপ্ন বদলে গেছে। অনেক মেয়ে আমার কাছে এসে বলছে তারা পাইলট, কেবিন ক্রু হতে চায়। আমি তাদের স্বপ্ন বদলে যেতে দেখে আনন্দিত।’

নবম শ্রেণির ছাত্রী তাহমিনা রচনা বলেন, ‘আজকের দিনটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন।’

শিশু পরিবারের এক কিশোরীর হাতে ঈদ উপহার তুলে দিচ্ছেন বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঢাকায় ফিরে বিমানে প্রধান কার্যালয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের ঈদের পোষাক তুলে দেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ। তিনি শিশুদের সঙ্গে কথাও বলেন। শিশুদের উদ্দেশ্যে মোসাদ্দিক বলেন, ‘আমরা চাই তোমরা সফল হও, তোমরা নিজেরাই নিজেদের খরচে বিমানে চড়ার সক্ষমতা অর্জন করো।’

এ আয়োজন প্রসঙ্গে বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ‘সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে বিমান বাংলাদেশ সুবিধাবঞ্চিত ৩০জন শিশু-কিশোরদের জন্য ব্যতিক্রম এই আয়োজন করেছে। বিমানের রয়েছে মজবুত ও স্থায়ী সামাজিক দায়বদ্ধতা বোধ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বিমান সামাজিক উন্নয়নে অংশিদারিত্ব রেখেছে প্রতিষ্ঠান শুরুর পর থেকেই।’

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, ‘শিশুদের নিয়ে আয়োজন নিছক বিমান ভ্রমণ নয়, এটা তাদের জন্য অনুপ্রেরণা। জীবনের সফল ও সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমরা তাদের অনুপ্রাণিত করছি। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স শুধুমাত্র একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নয়, বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সেতুবন্ধনেরও প্রতীক।

সরকারি শিশু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ আরও বলেন, ‘আমরা সামাজিক দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি- শিশুদের অধিকার, সুস্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবেশ সুরক্ষার ওপর। আমরা বিশ্বাস করি- শিশুরাই আগামীর ভবিষৎ। তাদের উন্নয়ন ছাড়া কোনও  অগ্রযাত্রা সফল হবে না। মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি সেই মুনাফার একটা অংশ বৃহত্তর সমাজের কল্যাণে ব্যয় করা জন্য ‘কর্পোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি’র আওতায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। যা দেশের উন্নয়নকে মজবুত ও টেকসই করতে সহায়ক।’

/এসএমএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫
হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫
ন্যাটোর কোনও দেশ আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার: পুতিন
ন্যাটোর কোনও দেশ আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার: পুতিন
বাস-সিএনজির সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ৩ জন নিহত
বাস-সিএনজির সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ৩ জন নিহত
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’
বিএনপির নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’