X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

কানাডিয়ান উগ্রপন্থী সালমান কি ঢাকায়?

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৬ জুন ২০১৭, ২২:৩০আপডেট : ০৬ জুন ২০১৭, ২৩:১৯

 

সালমান হোসেইন উগ্রপন্থায় উস্কানিদাতা হিসেবে অভিযুক্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক সালমান হোসেন ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে দাবি করেছে দেশটির সংবাদমাধ্যম ডেইলি ন্যাশনাল পোস্ট। তবে সালমানের দেশে অবস্থানের বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। সালমান কবে এবং কখন দেশে প্রবেশ করেছে,তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। একই সঙ্গে তার অবস্থান জানার চেষ্টাও চলছে।

রবিবার (৪ জুন) কানাডার ডেইলি ন্যাশনাল পোস্ট ‘ইহুদি গণহত্যার উস্কানিদাতা’ হিসেবে সেদেশে অভিযুক্ত ফেরারি আসামি সালমান হোসেন বাংলাদেশে পালিয়ে আছে বলে খবর প্রকাশ করে।ওই খবরে বলা হয়, কানাডার অন্টারিও’র প্রাদেশিক পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে সে। সালমানকে গ্রেফতারের জন্য ইন্টারপোল থেকেও নোটিশ জারি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি (গোপনীয়) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন,‘সালমানের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা তার অবস্থান জানার চেষ্টা করছি।’

ইন্টারপোলের নোটিশে দেখা যায়, সালমানের আসল নাম সালমান আন-নূর হোসাইন।তার জন্ম ১৯৮৫ সালের ৩ জানুয়ারি। বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া সালমান কানাডার নাগরিকত্ব পেয়েছিল। তবে তার পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সালমানের উগ্রপন্থার বিষয়ে তারাও জানতে পেরেছেন। তাকে খোঁজা হচ্ছে। সে বাংলাদেশেরে কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সালমান হোসেন কানাডার ন্যাশনাল পোস্ট জানিয়েছে, রবিবার বাংলাদেশি এক ফটোগ্রাফারের ক্যামেরায় ধরা পড়েন ৩২ বছর বয়সী সালমান। ছবিতে ঢাকার গুলশান এলাকার একটি কফিশপের সামনে তাকে দেখা যায়। বাংলাদেশি লাইসেন্স প্লেট সম্বলিত একটি রূপালি রংয়ের টয়োটা করোলা গাড়িতে করে সেখানে উপস্থিত হয় সে। এছাড়া সম্প্রতি তোলা আরও কয়েকটি ছবিতে তাকে ঢাকার বিলাসবহুল  লেকশোর বনানী হোটেলের জিম ও রেস্টুরেন্টে তাকে দেখা গেছে। উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় করোলা গাড়ির পেছনেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে তাকে। 

ন্যাশনাল পোস্টের তথ্য অনুযায়ী, ইহুদিদের বিরুদ্ধে ইন্টারনেটে বিদ্বেষ ছড়ানো এবং ইহুদিদের গণহারে হত্যার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য প্রচারের পর ২০১০ সালের ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সালমানকে বহিষ্কার করা হয়। কানাডার পুলিশ নতুন তদন্ত শুরুর আগেই সালমান কানাডা ছেড়ে পালিয়ে যায়।

কানাডায় সালমানের বিরুদ্ধে গণহত্যায় উস্কানি মামলার তদন্ত করেছেন অন্টারিও প্রাদেশিক পুলিশের স্টাফ সার্জেন্ট পিটার লিওঁ। সালমানই কানাডার প্রথম ব্যক্তি, যাকে গণহত্যায় উস্কানির জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। ন্যাশনাল পোস্টকে পিটার লিওঁ জানান, ‘সালমানকে এখনও পুলিশ খুঁজে বেড়াচ্ছে’।

সালমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয় ২০১০ সালের জুলাই মাসে। সে সময় অন্টারিও প্রাদেশিক পুলিশ বলেছিল, সালমানকে বিচারের মুখোমুখি করতে তারা সাধ্যমতো চেষ্টা চালাবে। তবে সাত বছর পেরিয়ে গেলেও তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। ন্যাশনাল পোস্ট জানায়, সালমানকে কানাডায় ফিরিয়ে নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করতে দেশটির সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে কানাডা সরকারের আসামি হস্তান্তর বিষয়ে কোনও চুক্তি নেই বলে উল্লেখ করেছে সংবাদমাধ্যমটি। 

সালমানের বাংলাদেশে সম্ভাব্য অবস্থানের ব্যাপারে অটোয়ায় বসবাসকারী একজন বাংলাদেশি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ন্যাশনাল পোস্ট। নাম প্রকাশ না করে ওই কর্মকর্তা পত্রিকাটিকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই। কেউ যদি বিদেশে ফেরারি আসামি হয়ে থাকেন, তবে তা আমাদের সরকারকে জানানো প্রয়োজন।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার সব ধরনের ‘উগ্রপন্থা, সন্ত্রাস এবং আন্তঃদেশীয় অপরাধের’ বিরুদ্ধে বলেও ন্যাশনাল পোস্টকে আশ্বস্ত করেন ওই কর্মকর্তা।

কানাডা সরকারের পক্ষ থেকে সালমানকে ফিরিয়ে নেওয়ার তৎপরতা কী সে ব্যাপারে জানতে চাইলে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের (আরসিএমপি) সার্জেন্ট হ্যারল্ড প্লেইদেরার ন্যাশনাল পোস্টকে বলেন, ‘ইন্টারপোলের সদস্য দেশগুলো নিজেরাই ঠিক করে নিজেদের সীমান্তের অভ্যন্তরে কোনও রেড নোটিশকে তারা কতটা আইনি গুরুত্ব দেবে। ফলে রেড নোটিশ জারি হলেই যে আসামিকে গ্রেফতার, কিংবা ফিরিয়ে আনা যাবে এমন নিশ্চয়তা নেই।’   

ন্যাশনাল পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযোগ দায়েরের কিছুদিন আগে সালমান কানাডা ছেড়ে পালিয়ে যায়। তবে সে কোথায় ছিল তার প্রমাণ ইন্টারনেটে রেখে দিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বরে ইউটিউবে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়- সালমান ছাগল জবাইয়ের দৃশ্য দেখছে।

ইউটিউবে ওই ভিডিও’র পাশে একটি পোস্ট দেওয়া হয়।ওই পোস্টে লেখা হয়,’বিশ্বের যেখানেই ইহুদি,তাদের সহযোগী বা দাসদের পাওয়া যাবে,সেখানেই তাদের এভাবে নিধন করা দরকার। দায়েশ (আইএস-এর আরেক নাম) তোমরা কি ইসরাইল ও ইহুদিদের লক্ষ্যবস্তু করার দায়িত্বের কথা ভুলে গেছ?’

একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীকে উদ্ধৃত করে ন্যাশনাল পোস্ট লিখেছে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সালমান ১২টিরও বেশি নামে অনলাইনে তৎপরতা চালাতো। সালমান ক্রেডিট কার্ড হ্যাকিং-এর সঙ্গেও জড়িত বলে দাবি করেন ওই ফেসবুক ব্যাবহারকারী। তিনি আরও জানান, তিনি সালমানের বিষয়ে বিস্তারিত না জেনেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বন্ধু হয়েছিলেন।

নিজের নাম প্রকাশ না করে ওই ব্যক্তি ন্যাশনাল পোস্টকে আরও বলেন, সালমান মালয়েশিয়া যেতে চেয়েছিল। সালমানের দেওয়া ঢাকার একটি ফোন নম্বরও ওই ফেসবুক ব্যবহারকারী ন্যাশনাল পোস্টকে দিয়েছেন। সংবাদপত্রটির পক্ষে একজন সাংবাদিক ওই নম্বরে ফোন করে নিজের পরিচয় দিলে ওই প্রান্ত থেকে ইংরেজিতে বলা হয়, তিনি ভুল লোককে ফোন করেছেন এবং তারপর ফোন কেটে দেওয়া হয়। টেক্সট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে প্রশ্ন করা হলেও উত্তর মেলেনি।

/এনএল/এফইউ/ এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা