বৃষ্টির পর দ্রুত পানি অপসারণের জন্য রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি)। প্রতিটি টিমে ১০ জনের অধিক সদস্য রয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলর বা করপোরেশনের একজন পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক এই টিমের নেতৃত্ব দেবেন। কথা ছিল বৃষ্টির পর জলাবদ্ধতা হলেই তারা মাঠে নেমে ড্রেন ও ম্যানহোলগুলোর ঢাকনা খুলে দেবেন। একই সঙ্গে বিকল্প কোনও ব্যবস্থা নিতে হলে তাও নেবেন।
কিন্তু সোমবারের (১৯ জুন) টানা বৃষ্টির পর নগরজুড়ে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিলেও সংস্থা দুটির এই টিমের কোনও সদস্যকে মাঠে দেখা যায়নি। নগরীর প্রতিটি অলিগলিতে পানি থৈ থৈ করছে। পাশাপাশি রজধানীর নিম্নাঞ্চলগুলোতে জলাবদ্ধতার চিত্র আরও ভয়াবহ। স্থানীয় এলাকাবাসী ও আশপাশের দোকানিরা তাদের প্রয়োজনে কিছু কিছু ড্রেন ও ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে দিলেও দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের দেখা মেলেনি।
নগরবাসীর অভিযোগ, বৃষ্টিতে দুই সিটির অধিকাংশ এলাকা ডুবে গেলেও সিটি করপোরেশনের কোনও তদারকি তারা দেখতে পান না। দুর্যোগের মুহূর্তে কাউকে ফোন করলেও পাওয়া যায় না। বরং কর্মকর্তারা উল্টো জলাবদ্ধতার জন্য নগরবাসীকেই দায়ী করেন এবং এ লক্ষ্যে কাজ করার আহ্বান জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রবিবারের টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর মৌচাক, মালিবাগ, রাজারবাগ, রামপুরা, বাড্ডা সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের উন্নয়ন কাজের কারণে জলজটে ভোগান্তির মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া কারওয়ান বাজার, বেগুনবাড়ি, পান্থপথের বিভিন্ন অংশ, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, কালশী, বসুন্ধরা, নতুন বাজার, কুড়িল, পুরনো ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোড, যাত্রাবাড়ী মোড়, জুরাইন, শহীদনগর, মধুবাগে ভয়াবহ জলজট দেখা দিয়েছে। অলিতে গলিতে জমেছে হাঁটুপানি।
তবে অন্যান্য বছর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শান্তিনগরে হাটুপানি দেখা গেলেও এবছর তা থেকে মুক্তি পাচ্ছে নগরবাসী। এই এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসরে ড্রেন নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ করেছে ডিএসসিসি। শান্তিনগরে এখন তেমন জলাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে যায় না। অপরদিকে উত্তর সিটি করপোরেশনের কিছু ভিআইপি এলাকা ছাড়া অধিকাংশ এলাকার অবস্থা নাজুক। এমন কোনও সড়ক বাকি নেই, যেখানে হাটুপানি সৃষ্টি হয়নি। সংস্থাটির প্রধান সড়কগুলোর কিছুটা উন্নতি হলেও অগিগলির চিত্র ভয়াবহ।
সরেজমিনে দেখা যায়, মিরপুর ১০ নম্বর, শেওড়াপাড়ায় কম হলেও কাজীপাড়ায় তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।
খিলক্ষেত-লেকসিটি সড়কের বটতলা এলাকা পুরোটাই হাঁটু পানির নিচে ডুবে আছে। ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হকের মোহাম্মদী গার্মেন্টসের সামনের সড়কে পানি জমে আছে। রিকশা ও অটো ভাড়া বেড়েছে চার থেকে পাঁচগুণ। প্রাইভেট কার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলের অবস্থা নেই, জলাবদ্ধতার মধ্যে থমকে থাকে।
জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে দক্ষিণ সিটির অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে তৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে মেয়র সাঈদ খোকন প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করে দিয়েছেন। এই টিমে ১০ জন করে সদস্য রয়েছেন। আমরা সকালেই সব টিমকে নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি। তারা মাঠে নেমে গেছেন। দ্রুত পানি মেনে যাবে।’
এই কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী সরেজমিনে কাউকেই মাঠে পাওয়া যায়নি। দুপুরের দিকে বৃষ্টি থেমে গেলেও বিকাল অবধি প্রায় প্রতিটি এলাকায় জলাবদ্ধতা ছিল। সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সংস্থার এই টিমের কোনও কর্মীকে মাঠে দেখা যায়নি। বেশকিছু এলাকায় জলজট নিরসনে স্থানীয়দের কাজ করতে দেখা গেছে।
এদিকে সামান্য বৃষ্টি হলেই কারওয়ান বাজরের টিসিবি ভবনের সামনে কোমর সমান পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএনসিসি অঞ্চল-৫ এর নির্বাহী কর্মকর্তা (কারওয়ান বাজার) এমএম অজিয়র রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আসলে এটা নিয়ে আমাদের কিছুই করার নেই। হাতির ঝিলের কারণেই এমনটা হয়েছে। হাতির ঝিলের এই (কারওয়ান বাজার) অংশে যেভাবে কাজ হওয়ার কথা, তা বিজিএমইএ ভবনের কারণে হয়নি। ভবনটি ভেঙে ফেলা হলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এর পরেও আমরা সাময়িকভাবে চেষ্টা করছি কিভাবে সমাধান করা যায়।’
/এসএস/ এপিএইচ/
আরও পড়ুন: পানি পার ২০ টাকা