এএসপি মিজানুর রহমানের শরীরে ‘সায়ানোসিস’ ছিল। কোনও ব্যক্তিকে শ্বাসরোধ করা হলে তার শরীরে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। ফলে তার শরীর নীল হয়ে যায়। এটাকে সায়ানোসিস বলে, এই অভিমত চিকিৎসকদের। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বলেছেন, নিহত মিজানের গলার চারপাশে কালো দাগ ছিল। সায়ানোসিস ছিল। এসব আলামত থাকায় তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হতে পারে বলে একাধিক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করে এ মন্তব্য করেন ।
এদিকে এএসপি মিজানুর রহমান তালুকদারের মৃত্যু নিঃসন্দেহে হত্যাকাণ্ড বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহিদুল হক। বৃহস্পতিবার গুলশানের পুলিশ প্লাজা মার্কেটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনে এসে তিনি এ কথা বলেন।
উল্লেখ্য, বুধবার (২১ জুন) রাজধানীর রূপনগর থানাধীন মিরপুর বেড়িবাঁধের বোটক্লাব এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে এএসপি মিজানুর রহমান তালুকদারের (৫০) লাশ উদ্ধার করা হয়। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয়রা একটি ঝোপে তার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে ডিএমপির রূপনগর ও সাভার থানা পুলিশ সেখানে গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে। আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল এএসপি মিজানুর রহমানের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের প্রভাসক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস।
ময়নাতদন্তে কী পাওয়া গেছে প্রশ্নে ডা. প্রদীপ বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, নিহত মিজানের শরীরে সায়ানোসিস ছিল।তার গলার চারপাশে একটা গোল কালো দাগও ছিল। মাথায়, বাম হাতে ও দুই পায়ে লাঠি বা শক্ত কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া দুই গাল ও বুকের ওপরের অংশেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। যেসব জায়গায় আঘাত করা হয়েছে সেখানে রক্ত জমে গিয়েছিল। তবে তার চোখ ঠিক ছিল। শরীরে কোনও বিষাক্ত পদার্থ আছে কিনা সেজন্য তার ভিসেরা (লিভার, কিডনি, স্টোমাক) সংরক্ষণ করেছি।’
ময়নাতদন্তকারী এই চিকিৎসক আরও জানান, নিয়ম অনুযায়ী ভিসেরা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারাই সেগুলো মহাখালী রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠাবে। রাসায়নিক পরীক্ষাগার থেকে প্রতিবেদন এলে তারাও তাদের প্রতিবেদন জমা দেবেন বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন ময়নাতদন্তে সায়ানোসিস পাওয়া মানে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। শ্বাসরোধে হত্যা অথবা বিষক্রিয়ায় যখন শরীর প্রয়োজনীয় অক্সিজেন না পায়, তার চোখে মুখে শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে নীল হয়ে যায়। এ অবস্থায় কারও মৃত্যু হলে মৃতদেহে সায়ানোসিস পাওয়া যাবে। যেহেতু নিহত মিজানের গলার চারপাশে একটি গোল দাগ পাওয়া গেছে, তাতে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
/জেএ/ এপিএইচ/