X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোগীর স্বস্তি বাড়ছে মডেল ওয়ার্ডে

জাকিয়া আহমেদ
২৭ জুন ২০১৭, ০৮:০১আপডেট : ২৭ জুন ২০১৭, ১৭:০২

মডেল ওয়ার্ডে রোগীদের স্বস্তি বাড়ছে ৩৬ বছরের রোজমেরী সুলতানা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন গত ১১ জুন। কিন্তু এবার এই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তিনি কেবল বিস্মিত হচ্ছেন। রোজমেরী বলেন, ‘ওষুধ খাওয়ার সময় হলেই ওয়ার্ডে থাকা নার্সরা দৌড়ে আসছেন, কেউ নিজের হাতে ওষুধ খাইয়ে দিচ্ছেন, পরীক্ষার (টেস্ট) জন্য পাশের ভবনে যাওয়ার সময় কেউবা আবার সঙ্গে যেতে হবে কিনা প্রশ্ন করছেন-‘আমি তো কেবল একের পর এক বিস্মিত হচ্ছি, এই জীবনে তো হাসপাতালে আমার এ অভিজ্ঞতা হয়নি।’

কেবল রোজমেরী নন, মাদারীপুরের সীতেশ চন্দ্র গুপ্তের অভিজ্ঞতাও একই। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন,‘এই জীবনে এমন অভিজ্ঞতা আর হয়নি। মাঝে মধ্যে ভাবছি, দেশের কোনও হাসপাতালে আছি নাকি বেসরকারি উচ্চমূল্যের হাসপাতালগুলোতে। নার্সদের এত ভালো ব্যবহার আশা করিনি, কিন্তু এখানে এখন তাই হচ্ছে। এক্সরে করার জন্য হাসপাতালের অন্য ভবনে যাওয়ার প্রয়োজন হলে এখানকার স্টাফরাই নিয়ে যাচ্ছেন সঙ্গে করে।’

গত ১৪ জুন সরেজমিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ১৬ তলায় অবস্থিত মর্ডেল ওয়ার্ডে ঘুরে এবং রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তারা প্রত্যেকেই বিস্মিত এবং আনন্দিত। একই সঙ্গে রয়েছে স্বস্তি। রোগীরা বলছেন, ‘এই মডেল ওয়ার্ডের মতো যদি দেশের সব হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলো হতো তাহলে রোগীরা অনেক বেশি স্বস্তি পেতেন। রোগীদের হাসপাতালে রেখে স্বজনরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারতেন। আর বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডকে তারা মডেল ওয়ার্ডে রূপান্তরিত করবেন।

হাসপাতালে রোগী নিরাপদে আছেন, ভালো আছেন, তারা কাছে না থাকলেও সুন্দর ও সঠিকভাবে চিকিৎসা চলছে বা চিকিৎসা সেবার কোনও ত্রুটি হচ্ছে না— রোগীর স্বজনদের এমন মনোভাব গড়ে তুলতে ও তাদের দুশ্চিন্তা দূর করতেই মডেল ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে বলে জানান বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। রোগীদের সন্তুষ্টি এবং নির্ভার রাখতেই এ মডেল ওয়ার্ডের সূচনা। নারী এবং পুরুষদের জন্য দুটি পৃথক ওয়ার্ড মিলিয়ে করা হয়েছে একটি মডেল ওয়ার্ড। নারীদের ওয়ার্ডে ২০টি বেড এবং পুরুষ ওয়ার্ডে ২৮ বেডসহ মোট ৪৮টি বেড নিয়ে শুরু হয়েছে এই মডেল ওয়ার্ড।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে স্বজনরা যেন বাড়িতে বসে নিশ্চিত থাকতে পারেন সে লক্ষ্যেই আমাদের এ প্রচেষ্টা। এখানে রোগীর ওষুধ খাওয়ানো নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। এমনকি কোনও পরীক্ষার জন্য ওয়ার্ড ছেড়ে কোথাও যেতে হলে সঙ্গে করে হাসপাতালের স্টাফরাই নিয়ে যাবেন, প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে আনবেন। মোট কথা, রোগীকে হাসপাতালে রেখে স্বজনকে তার জন্য নির্ঘুম রাত কাটাতে হবে না। আর আগামী ছয় মাসের মধ্যেই বিএসএমএমইউর সকল ওয়ার্ডকেই মডেল ওয়ার্ডে উন্নীত করা হবে।’

রোগীর স্বস্তি বাড়ছে মডেল ওয়ার্ডে ‘মডেল শব্দটির অর্থ আদর্শ, সেই ভাবনা থেকেই আমরা মডেল ওয়ার্ড নামকরণ করেছি’— বলেন ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রহিম। মডেল ওয়ার্ড নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘রোগীরা যেন সর্বাত্মক সেবা পান বিশেষ করে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও নার্সদের সেবার মাধ্যমে রোগীরা যাতে সন্তুষ্ট থাকেন সে বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করেই বর্তমান প্রশাসন মডেল ওয়ার্ড করেছে।’

এ ধরনের ওয়ার্ড মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ট্রেনিংয়ের জন্যও আদর্শ ওয়ার্ড জানিয়ে অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রহিম আরও বলেন, ‘রোগীদের সেবার যাতে কোনোরকম ত্রুটি না হয় এবং রোগী ও তাদের স্বজনদের ভোগান্তি যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা যায় সে লক্ষ্যেই এ ধরণের ওয়ার্ড চালু হলো। এ ধরণের ওয়ার্ড চালুর মাধ্যমে যত্নের সঙ্গে রোগীদের সেবা দেওয়ার বিষয়টি আরও গতিশীল হবে।’

যোগ করে অধ্যাপক আবদুর রহিম বলেন, সারাদেশেই রোগীদের সার্ভিস লেভেল সন্তোষজনক নয়, আমরা চাইলেও সেটি সম্ভব হয় না নানা কারণে। সীমিত পরিসরে সেটা আমরা শুরু করেছি এখানে। এজন্য আরও প্রস্তুতি এবং আনুষঙ্গিক সবকিছু হলে রোগীদের সেবাদানের ক্ষেত্রে আরও ফলপ্রসু হবে বলে আশা করছি।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, চিকিৎসকরা কেবল রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন, ওষুধ লিখে দেন কিন্তু হাসপাতালে একজন রোগীর সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়ে থাকেন নার্সরা। আর হাসপাতালগুলোতে প্রত্যাশা অনুযায়ী নার্সরা সেভাবে কাজ করেন না। কিন্তু এই মডেল ওয়ার্ডে নার্সরা নিজেদের হাতে রোগীদের ওষুধ খাওয়াচ্ছেন, বিভিন্ন রকম সেবা দিচ্ছেন। এভাবে যদি নার্সরা রোগীদের পাশে থাকতে না পারে তাহলে রোগীর অ্যাটেন্ডেন্সের সংখ্যা কমে যাবে, বাড়িতে তারা অনেকটা স্বস্তি নিয়ে থাকতে পারবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেবাত্ত্ববধায়ক সান্ত্তনা রাণী দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাধারণত হাসপাতালগুলোতে রোগীদের সেবা নিয়ে রোগী ও তার স্বজনদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যায়। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি, সীমিত জনবলের মধ্যেও কীভাবে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারি। রোগীদের সন্তুষ্টি নিয়েই আমরা এখানে কাজ করতে চাই। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া একজন রোগীর ওষুধ কেনা থেকে শুরু করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া৪-সব করতে চাই আমরা। তবে এজন্য পর্যাপ্ত জনবল থেকে শুরু করে মডেল ওয়ার্ডেও এসব প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি হলে আমাদের কাজটা আরও বেশি সুবিধাজনক হবে আমাদের জন্য বলেন তিনি।

 /জেএইচ/আপ-বিএল/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়