X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রোধে মডেল ফার্মেসি

জাকিয়া আহমেদ
০৫ জুলাই ২০১৭, ১০:১৯আপডেট : ০৫ জুলাই ২০১৭, ১৬:০৯





মডেল ফার্মেসি (ছবি- সংগৃহীত)

 

রাজধানীর মিরপুর রোডে অবস্থিত লাজ ফার্মা থেকে সোমবার (৩ জুলাই) ওষুধ কিনছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আনোয়ার সাদাত। বিক্রেতার কাছ থেকে তিনি প্রেসক্রিপশন বুঝে নিলেন। ফিরে যাবার সময় তার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। আনোয়ার সাদাত বলেন, ‘দেশে এমন অভিজ্ঞতা হবে সেটা আগে বুঝিনি। প্রেসক্রিপশন বুঝে খাওয়ার মতো যথেষ্ঠ সক্ষম হলেও আমি প্রতিবার এখান থেকে ওষুধ নেওয়ার সময় ফার্মাসিস্টের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি। তাতে করে ওষুধের দোকানে থাকা মানুষটিকে উৎসাহিত করা হয়, তার প্রতি সম্মান দেখানো হয়।’
তিনি বলেন, ‘এ নতুন উদ্যোগে দেশের মানুষকে আর ভেজাল, নকল, নিম্নমান এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খেতে হবে না এটাই এ মডেল ফার্মেসির সবচেয়ে বড় সফলতা। আমি চাই, মডেল ফার্মেসির বাইরে দেশে কোনও ফার্মেসি থাকবে না, ওষুধ আর আলু পটল একসঙ্গে বিক্রি হচ্ছে-এ চিত্র বদলে যাবে।’

মডেল ফার্মেসির জন্য একটি নীতিমালাও তৈরি করা হয়েছে। এই মডেল ফার্মেসি নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রোধ করতে ভূমিকা রাখবে। সরকার ওষুধের দোকানগুলোকে ফার্মেসি ও মেডিসিন শপ হিসেবে চিহ্নিত করে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। ঔষধ প্রশান অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ডা. মো. মুস্তাফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য জানান।

ঔষধ প্রশান অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এসব মডেল ফার্মেসির আয়তন হতে হবে ৩০০ বর্গফুট। এছাড়া ওষুধের মান সঠিক রাখার জন্য মডেল ফার্মেসিগুলোকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। সার্বক্ষণিক রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগসহ সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা মেনে মডেল ফার্মেসি কাজ করবে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে এসব ফার্মেসি চালু হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে সারাদেশে ‘এ’ গ্রেডের ১৫০টি এবং ‘বি’ গ্রেডের ২ হাজার মডেল ফার্মেসি করা হবে।
দেশে বর্তমানে সরকার থেকে অনুমোদন পাওয়া ফার্মেসির সংখ্যা ১ লাখ ২১ হাজার। অনুমোদনহী প্রায় ১৯ হাজার দোকানে ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। তাই সরকার নকল, ভেজাল, নিম্নমান ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি রোধ করতেই এই মডেল ফার্মেসির উদ্যোগ নেয়। এসব মডেল ফার্মেসিতে প্রেসক্রিপশন সার্ভিস ডেস্ক, ফার্মাসিউটিক্যাল প্রোডাক্ট, নন ফার্মাসিউটিক্যাল প্রোডাক্ট ও মেডিক্যাল সাপ্লাই অ্যান্ড ডিভাইসের জন্য আলাদা কর্নার থাকবে।
প্রসঙ্গত, গত ২২ ডিসেম্বর ধানমন্ডির লাজ ফার্মা ও পান্থপথে অবস্থিত বায়োমেড ফার্মেসিকে নতুন আঙ্গিকে চালু করার মধ্য দিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো মডেল ফার্মেসির যাত্রা শুরু হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের ‘মডেল ফার্মেসি ইনিশিয়েটিভ প্রকল্প’ এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। সে লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ৩০টি ফার্মেসিকে মডেল ফার্মেসি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রায় ৩০ জন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।


ঢাকা, সিলেট, নোয়াখালী, হবিগঞ্জ, রাজশাহী, কুমিল্লা, নাটোর, ময়মনসিংহসহ মোট ১৫টি জেলায় মোট ১৭৭টি মডেল ফার্মেসি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। রাজধানীতে শুরু হলেও প্রতিটি জেলায় শিগগিরই কমপক্ষে একটি করে মডেল ফার্মেসি চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক মো. রুহুল আমিন। মডেল ফার্মেসির প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মানুষ ওষুধ সর্ম্পকে কাউন্সিলিং পায়, যথাযথ ওষুধের সেবনবিধি সর্ম্পকে জানতে পারে এবং একেকজন ফার্মাসিস্টের তত্ত্বাবধায়নে যেন ফার্মেসিগুলো পরিচালিত হয়, সে জন্য মডেল ফার্মেসিতে একজন ‘এ’ গ্রেড, একজন ‘বি’ গ্রেড এবং দুই থেকে তিনজন ‘সি’ গ্রেডের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট থাকবেন, যারা রোগীকে প্রেসক্রিপশন বুঝিয়ে দেবেন।’’
মডেল ফার্মেসি রাজধানী ঢাকায় মডেল ফার্মেসি হিসেবে উদ্বোধন হওয়া বায়োমেড ফার্মার এ গ্রেড ফার্মাসিস্ট আতিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মডেল ফার্মেসি হিসেবে  শুরুর পর মানুষের রেসপন্স অনেক বেড়েছে। মানুষ এখন জানতে চায়, চিকিৎসক তাকে কোন অসুখের জন্য কোন ওষুধ দিয়েছেন এবং সেই ওষুধের কার্যকারিতা কী? এসব ওষুধে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে কিনা, সে বিষয়েও মানুষ এখন সচেতন। আমরাও তাদের আন্তরিকতার সঙ্গে সব ‍বুঝিয়ে দেই। এ কারণেও মডেল ফার্মেসির গুরুত্ব বাড়ছে।’
এদিকে, ওষুধনীতি অনুযায়ী, প্রত্যেক মডেল ফার্মেসিতে ৩৯টি প্রয়োজনীয় ওষুধ ছাড়া বাকি সব ধরনের ওষুধ বিনা প্রেসক্রিপশনে বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। আর মডেল ফার্মেসি নিশ্চিত হলে অযথা অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমবে। সবার জন্য নিরাপদ ওষুধ নিশ্চিত সম্ভব হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
ওষুধের দোকানগুলোকে নিয়মের মধ্যে এনে মডেল ফার্মেসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল হাই। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো ফার্মেসি গড়ে ওঠে, যা অন্য কোনও দেশে হয় না। সেই ফার্মেসিগুলোতে ওষুধ ঠিকমতো রাখা হয় না। কখনও ফ্লোরে রাখা হয়। ফলে  তাপমাত্রা ঠিক না থাকার কারণে ওষুধের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়।’

মডেল ফার্মেসি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক এবিএম ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এর ফলে নকল ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি হবে না। বেশি দামে ওষুধ বিক্রি হবে না, গায়ে লেখা দামেই ওষুধ বিক্রি হবে, এক্সপায়ার্ড মেডিসিন ও আন রেজিস্টার্ড ড্রাগ বিক্রি হবে না। ফলে ওষুধ কেনার সময় নকল, ভেজাল, নিম্নমান এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের ভয় মানুষের থাকবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘মডেল ফার্মেসিগুলোতে রোগীদের কাউন্সেলিং হবে। ওষুধ কোথায় রাখতে হবে, ওষুধের সঙ্গে ডায়েট কী হবে, কতটুকু পানি খেতে হবে, কোনও ওষুধের সঙ্গে আরেকটি ওষুধ খাওয়া যাবে কিনা, এসব বিষয়ে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট পরামর্শ দেবেন রোগীদের।’

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!