X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

চিকুনগুনিয়া: হটলাইন চালু, শনাক্তের চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি

জাকিয়া আহমেদ
০৭ জুলাই ২০১৭, ১২:১০আপডেট : ০৭ জুলাই ২০১৭, ১৭:৩৪

চিকুনগুনিয়া বাহিত এডিস মশা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আতাউর রহমান কাবুল। ঈদুল ফিতরের রাতে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হন তিনি। ১০৫ ডিগ্রি জ্বরের সঙ্গে ব্যথা অনুভব করেছেন তীব্র। সেই সঙ্গে পায়ের পাতা, হাঁটুর নিচের হাড়, পিঠ ও বুকে এত ব্যথা ছিল যে তাকে হাঁটতে হয়েছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলছিলেন, ‘বাসায় কেবল আমি একা না, একই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে আমার স্ত্রীও। অবস্থা এমন যে, ওষুধ আনার মতো মানুষও নেই। বাড়ির এক দারোয়ান ছিল ঈদের ছুটিতে, আরেকজনও এই জ্বরে আক্রান্ত।’

তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীতে চলছে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জ্বরাক্রান্ত প্রতি তিন জনের মধ্যে একজন আক্রান্ত হচ্ছেন এই রোগে। তবে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সঠিক হিসাব কারও কাছে নেই। কারণ এর পরীক্ষা কেবল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ছাড়া আর কোথাও করা হয় না। তবে বিএসএমএমইউ’তে এ পরীক্ষা অনেকটা ব্যয়সাপেক্ষ এবং আইইডিসিআরে পরীক্ষা করা সবার জন্য উন্মুক্ত নয়।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন- শনাক্ত যত হচ্ছে, প্রকৃত অর্থে আক্রান্তের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। চিকুনগুনিয়া নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা প্রতীকী কর্মসূচি পালন এবং গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি দিলেও এ রোগের প্রকোপ কমানো যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য তাদের।

চলতি বছর আগাম বর্ষা মৌসুমকে চিকুনগুনিয়ার প্রার্দুভাবের কারণ মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই প্রকোপ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। চিকুনগুনিয়ার প্রার্দুভাব দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে অভিমত জানিয়ে অধিদফতর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘চলতি বছর কেবল রাজধানীতে থাকলেও সচেতন না হলে ভবিষ্যতে হয়তো পুরো দেশেই সেটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর যেহেতু চিকুনগুনিয়া রোগের কোনও প্রতিষেধক এখনও নেই, তাই সচেতনতাই ভরসা।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক (সিডিসি) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সারাদেশে চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য পাবলিক হেল্থ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ফর চিকুনগুনিয়া (চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণকক্ষ) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সপ্তাহে সাতদিন ২৪ ঘণ্টা কাজের জন্য গঠিত হয়েছে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ। জনসাধারণকে এ সম্পর্কিত যে কোনও তথ্য জানতে ও জানাতে ০১৯৩৭১১০০১১ এবং ০১৯৩৭০০০০১১ নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরিপে দেখা গেছে, পুরো ঢাকা শহরই এডিস মশার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আর এ রোগ থেকে সহসাই মুক্তি মিলছে না। তাই জনসাধারণের সচেতনতার পাশাপাশি চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদেরও চিকুনগুনিয়া সর্ম্পকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মশার কামড় থেকে সুরক্ষাই চিকুনগুনিয়া থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায়। মশারি টাঙিয়ে ঘুমানো, জানালায় নেট ব্যবহার করা, প্রয়োজন ছাড়া দরজা-জানালা খোলা না রাখা, শরীরে মশা প্রতিরোধক ক্রিম ব্যবহার করা— এসবের মাধ্যমেই এই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান— জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে সচেতনতামূলক একাধিক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে। পাশাপাশি নগরীর সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে চারপাশ পরিষ্কার রাখার অনুরোধ জানান তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের আশা, বৃষ্টি কমলে এই রোগের প্রকোপ কমবে। চলতি ও আগস্ট মাসে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বড় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালের পাঁচ শতাধিক চিকিৎসক ও নার্সকে চিকুনগুনিয়া গাইডলাইনের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডিভিশনাল ডিরেক্টর, সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ এবং এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সারাদেশে চিকুনগুনিয়ার প্রার্দুভাব জানতে ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মোবাইল ফোন ভিত্তিক জরিপ করছে আইইডিসিআর। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, জরিপে ৪ হাজার ৭৭৫ জন রোগীর তথ্য নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তাদের ৩৫৭ জন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিট আবেদন শুনানি মুলতবি করেছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (৪ জুলাই) বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে মুলতবির আদেশ দেন।

২০০৫ সালে ভারতে চিকুনগুনিয়া ভয়াবহ রূপ নিলে আইইডিসিআর বাংলাদেশে জরিপ চালায়। তখন এ রোগে আক্রান্ত কোনও বাংলাদেশি পাওয়া যায়নি। ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছিল।

/জেএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মননের প্রথম আইএম নর্ম, হাতছানি জিএম নর্মের
মননের প্রথম আইএম নর্ম, হাতছানি জিএম নর্মের
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার হুমকি আব্বাসের
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার হুমকি আব্বাসের
টি-টোয়েন্টির পাওয়ার প্লেতে ১২৫ রান করে হায়দরাবাদের বিশ্ব রেকর্ড!
টি-টোয়েন্টির পাওয়ার প্লেতে ১২৫ রান করে হায়দরাবাদের বিশ্ব রেকর্ড!
জানা গেলো বেইলি রোডে আগুনের ‘আসল কারণ’
জানা গেলো বেইলি রোডে আগুনের ‘আসল কারণ’
সর্বাধিক পঠিত
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও