X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

তালা ভেঙে পালিয়ে যায় ধর্ষণ মামলার আসামি লিটন ও তার সহযোগী

এসএম নূরুজ্জামান
০৯ জুলাই ২০১৭, ০৮:০০আপডেট : ০৯ জুলাই ২০১৭, ১৫:৩৮

সাভারে দুই তরুণী ধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি ডিবি পুলিশের সোর্স লিটন সাভারে দুই মডেলকে আটকে রেখে ধর্ষণের পর ভবনের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে পালিয়ে যায় মূল হোতা ও গোয়েন্দা পুলিশের সোর্স লিটন আলী মণ্ডল ও তার একজন সহযোগী। সহযোগীর নাম জাহাঙ্গীর ওরফে রেজাউল। তারা দুজনেই ধর্ষণের ঘটনাস্থল ওই ভবনের ষষ্ঠ তলার একটি রুমে ভাড়া থাকতো। দুটি পৃথক  গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতো। আর এই  পরিচয়  দিয়েই  তারা ফজরের নামাজের আগে প্রধান ফটকের তালা ভেঙে পালিয়ে গেছে।

শনিবার (৮ জুলাই) সাভারের সোবহানবাগে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনাস্থল ওই ভবনটিতে বসবাসকারী  ও এর আশপাশের বাসিন্দা, সাভার থানা ও ঢাকা জেলা উত্তরের ডিবি কার্যালয় সরেজমিনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।   

সংশ্লিষ্টরা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ধর্ষণের ঘটনায় মূল হোতা লিটন আলী ছাড়াও তার সঙ্গে আরও একটি গোয়েন্দা সংস্থার  সদস্য ছিলেন, তারা দুজন একসঙ্গে পালিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার থানার ওসি মহসিনুল কাদির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তরুণীরা মামলার এজাহারে লিটন, মিজান ও মোকাররম ছাড়া আর কারও নাম বলেননি। তাই লিটনের ওই সহযোগীর বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না’

সাভারে ধর্ষণ মামলার দুই আসামি নিরাপত্তাকর্মী মোকাররম ও মিজান সরেজমিনে দেখা গেছে, সাভারের সোবহানবাগের একই গলিতে ঢাকা জেলা উত্তরের ডিবি কার্যালয় ও  বি-১১৮/৩ নম্বরের বহুতল ভবনটির পাশাপাশি অবস্থান। এই ভবনের প্রথম তলা থেকে পঞ্চম  তলা পর্যন্ত বেসরকারি একটি কলেজ রয়েছে। ভবনের মালিক কবির হোসেন নিজে থাকেন সপ্তম তলায়। ষষ্ঠ তলা মেস হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এই মেসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চাকরিজীবীরা থাকেন। এই মেসের একটি কক্ষে থাকতো পুলিশের সোর্স লিটন আলী মণ্ডল। তার কাছে  মাঝে-মধ্যেই এসে রাত যাপন করতো জাহাঙ্গীর নামে ব্যক্তি, সে নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থার লোক, আবার কখনও  পুলিশের লোক বলে পরিচয় দিতো। শুধু তাই নয়, সে কখনও নিজের নাম জাহাঙ্গীর, আবার কখনও রেজাউল বলে পরিচয় দিতো।  সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে,  সম্প্রতি মাদকসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে লিটন আলী মণ্ডলকে ওই রুম ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বাড়ির মালিক কবির হোসেন। লিটন  ও তার সহযোগীদের নিয়মিত আড্ডায় বিব্রত ছিলেন মেসের বাসিন্দা কলেজ শিক্ষার্থীরা।

রুম ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ার পরও তারা জোর করেই এই মেসে অবস্থান করছিল। এ কারণে সপ্তাহখানেক আগে বাড়ির মালিক  লিটনকে বের করে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে লিটন আলী মণ্ডল  ভবনের মালিক  কবির হোসেনকে  হুমকি দিয়ে চলে যায়।

মালিকের একজন ঘনিষ্ঠ স্বজন  নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মেস থেকে বের করে দেওয়ার কারণে ভবন মালিক ও ভবনে অবস্থিত কলেজের  সুনাম ক্ষুণ্ন করতেই লিটন পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তার হয়তো আরও বড় ধরনের কোনও পরিকল্পনা থাকতে পারে। কিন্তু তরুণীদের একজন কমন রুমের বারান্দায় গিয়ে চিৎকার করার কারণে আশেপাশের সবাই ঘুম থেকে জেগে ওঠে। যে কারণে বাড়ির মালিক কবির হোসেনকে ফাঁসাতে পারেনি।

সোবহানবাগের একই গলিতে ঢাকা জেলা উত্তরের ডিবি কার্যালয় ও বহুতল ভবনটির পাশাপাশি অবস্থিত

সূত্রমতে, পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটানোর জন্য আগে থেকেই  লিটন তার পূর্ব- পরিচিত মিজানকে হাত করে। মিজান কলেজ চলাকালীন কলেজের নিরাপত্তা-কর্মকাণ্ড ও আনুষঙ্গিক কাজ করতো। তবে  কলেজ ছুটি হওয়ার পর বিকালের মধ্যেই কলেজ ভবন থেকে চলে যেতো।

সূত্র জানায়, প্রতিদিন কলেজ শেষ হওয়ার পর মিজান চলে গেলেও বৃহস্পতিবার রাতে আবারও সে আসে সেখানে। তার মাধ্যমেই ভবনের নিরাপত্তাকর্মী  মোকাররমকে দিয়ে ভবনের গেট খোলার ব্যবস্থা করা হয়।  

ষষ্ঠ তলার মেসে বসবাসকারী নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে   একজন  বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গত  বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে যখন মেস  মিটিং চলছিল। তখন লিটন আলী সেখানে হাজির হয়ে  ভবনের নিরাপত্তাকর্মী  মোকাররমকে খুঁজতেছিল। ১৬-১৭ বছর বয়সী মোকাররমও ষষ্ঠ তলায় ঘুমাতো। কিন্তু তাকে  খোঁজা-খুঁজি করে  না পেয়ে লিটন  নিচে চলে যায়। এরপর মধ্যরাতের পর মেসের বেশিরভাগ  লোকজন ঘুমিয়ে পড়ে। রাত দুটার দিকে দুই তরুণীকে নিয়ে লিটন ও তার পরিচিত একজনকে নিয়ে  ভবনে প্রবেশ করেন।

নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক  ভবনের আরেক জন বাসিন্দা  বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, লিটন তার পুরুষ সঙ্গীকে পুলিশের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে দুই তরুণীকে নিয়ে  ভবনে প্রবেশ  করেছিল। এসময় মিজানও তাদের সঙ্গে ছিল। মিজানের কাছে কলেজের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত কমন রুমের চাবি থাকতো।

সেই চাবি দিয়ে কমন রুম খুলে দুই তরুণীকে নিয়ে লিটন ,  মিজান ও লিটনের সঙ্গী (পুলিশের লোক পরিচয়দানকারী) ঢোকে। ওইসময়  ভবনের প্রধান ফটকের সামনে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক সদস্যও ছিলেন। বেশ কিছুক্ষণ ফটকের তালাও খোলা ছিল।

পরে মোকাররম বিষয়টি বাড়ির মালিক কবির হোসেনকে জানালে, তিনি মোকাররমকে ফটকে তালা মেরে ঘুমিয়ে থাকতে বলেন। পুলিশের বিষয় ভেবে তিনি আর কাউকে কিছু জানাননি।

তবে ফজরের নামাজের আগে একজন তরুণীর চিৎকারে আশ-পাশের লোকজন জড়ো হতে থাকে। ওই সময় লিটন ও তার সহযোগী বিপদ বুঝতে পেরে দ্বিতীয় তলা থেকে দৌড়ে নিচে নেমে আসে। ফটকে তালা মারা দেখতে পেয়ে তা কৌশলে ভেঙে ফেলে এবং এই ফটক দিয়েই বের হয়ে যায় তারা। এরপর পাশের ডিবি অফিসের লোকজন ওই ভবনে ঢুকে দুই নারীকে উদ্ধার করেন। এসময় মিজান ও মোকাররমকে আটক করে পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হয়।

/এসএমএন/ এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা