X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

একটি ভালোবাসার গল্প!

জাকিয়া আহমেদ
১৪ জুলাই ২০১৭, ১২:২০আপডেট : ১৪ জুলাই ২০১৭, ২১:০১

রাজীব ও রোমানা  ‘‘পরিচয়টা হয়েছিল ফেসবুকে। রাজীব ও আমি দু’জনই বই পড়তে ভালোবাসি। দু’জনই ফেসবুকে ‘বই পোকার আড্ডাখানা’ নামের একটি গ্রুপের সদস্য। কিন্তু তখনও আমরা একজন আরেকজনকে চিনতাম না। একটি অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্য দিয়ে আমরা দু’জনে বন্ধু হই ফেসবুকে। রাজীব যে কী সুন্দর আবৃত্তি করে!’’

চমৎকার আবৃত্তি করা এই ছেলেটার সঙ্গে পরিচয়, পরিণয় এবং তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা অসাধারণ এক ভালোবাসার গল্প সম্প্রতি বাংলা ট্রিবিউনকে শোনালেন রোমানা।

রোমানা বলেন, ‘২০১৬ সালে একদিন ডায়ালাইসিসের বেডে শুয়ে থাকা রাজীবের ছবি দেখি। ওই ছবিটা ছিল ২০১৪ সালের। আমি জানতে চাই- সে কিডনি রোগী কিনা। রাজীব জবাব দেয়, ‘আমি এখনও কিডনি রোগী’। তখন থেকেই পরিস্থিতি বদলে গেল। এত সুন্দর আবৃত্তি করে যে ছেলেটা, সে কিনা একজন কিডনি রোগী! জানতে পারি, ওর জন্য একটা কিডনি দরকার, এটি পেলেই বেঁচে যাবে সে। ওর জন্য আমার মায়া হতে থাকে। সেই মায়া একসময় রূপ নেয় ভালোবাসায়। এরপর সিদ্ধান্ত নেই আমি রাজীবকে বিয়ে করবো, আমার একটা কিডনি দিয়ে তাকে বাঁচাবো। কিন্তু রাজীব তাতে রাজি হচ্ছিল না। বন্ধুরা সবাই মিলে অনেক দিন ধরে বুঝিয়ে তাকে রাজি করিয়েছে।’

তবে ভালোবেসে বিয়ে করলেও রাজীবকে এখনও কিডনি দিতে পারেননি রোমানা। কিডনি প্রতিস্থাপন করার মতো টাকা তাদের নেই বলেই আটকে আছে বিষয়টি। এজন্য তারা এখন সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা চাইছেন। রোমানা বলেন, ‘টাকা হলেই আমরা দু’জন মানুষ একজন আরেকজনকে কিডনি দিয়ে বেঁচে থাকতে পারি।’ চিকিৎসকদের পরামর্শে ভারতে গিয়ে এই কিডনি প্রতিস্থাপনে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা লাগবে বলে জানান রাজীব ও রোমানা।

রাজীব ও রোমানা

গত ১০ জুলাই যখন পুরনো ঢাকায় প্যারামেডিক রোমানা তাসমিন বাংলা ট্রিবিউনকে এসব কথা বলছিলেন, তখন পাশে বসা আনোয়ার হোসেন রাজীব তার হাত ধরে ছিলেন। বারবার তাকাচ্ছিলেন রোমানার দিকে, আর বলছিলেন, ‘আমি খুব ভাগ্যবান।’ কথা বলার ফাঁকে রোমানাকে থামিয়ে দিয়ে একবার বললেন, ‘‘আমার ডায়ালাইসিস চলার সময় চিকিৎসকরা বলতেন, একজন ‘ও’ পজিটিভ মেয়েকে বিয়ে করে নিলেই আর ডায়ালাইসিসের জন্য কষ্ট করতে হবে না। তখনও আমি জানি না, রোমানার রক্তের গ্রুপ ‘ও’ পজিটিভ। যিনি কিনা ভালোবেসে বিয়ে করতে চাইছেন, আর আমি বারবার তাকে রিফিউজ করছি।’’

কেমন করে এমন সিদ্ধান্ত নিলেন জানতে চাইলে রোমানা বলেন, ‘গত বছরের ২৯ জুন আমাদের প্রথম দেখা হয়। আমরা লালবাগ কেল্লায় বসে চা খাই, কথা বলি, বই আদান-প্রদান করি। রাজীব আমাকে মেসেঞ্জারে কবিতা আবৃত্তি করে শোনায়। আমার কেবলই মনে হয়, এত সুন্দর আবৃত্তি করে যে ছেলেটা, সে কিডনি পাবে না? ওর জন্য খুব কষ্ট হয়। মনে হয়, তার পাশে কারও থাকা দরকার, খুব অপরাধী মনে হতো নিজেকে। মনে হলো, এই মানুষটাকে বাঁচানো যায়। আমি বাঁচাতে পারি। আমি একটা কিডনি দিলে দু’জনই বেঁচে থাকবো। তারপর রাজীবকে আমি বিয়ে করার কথা বলি, কিন্তু সে প্রচণ্ড ক্ষেপে যায়। আমাকে নানাভাবে অপমান করে।’ এসময় রোমানার হাত ধরে রাজীব বলেন, ‘ওর এসব কথা আমি হেসে উড়িয়ে ‍দিতাম। দীর্ঘ ছয় মাস এভাবে চলে। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম, তারপর কাটলো আরও  ছয় মাস। একসময় হয়তো আমিও বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখলাম।  শর্ত দিলাম রোমানার বাড়ির লোকজন রাজি না হলে বিয়ে হবে না।ওর বাড়ির লোক রাজি হলো না।’ এসময় রোমানা বলেন, ‘আমার শুধু মনে হয়েছে, ওকে বাঁচানো দরকার। তাই পরিবারের অমতেই বিয়ে করার জন্য বন্ধুদের দিয়ে রাজীবকে রাজি করানো হলো।’ 

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি বিয়ের তারিখ ঠিক হয়। কিন্তু আগের দিনই আবার বেঁকে বসেন পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসের সিনিয়র অফিসার রাজীব। তিনি আরও ছয়মাস সময় চাইলেন। রোমানা বলেন, ‘রাজীব আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। সে ট্রান্সপ্লান্টের অন্য ইনভেস্টিগেশনগুলো আমাকে বিয়ের আগে করতে দেয়নি ইচ্ছা করেই। আমার কাছে ছয় মাস সময় চাইলো আরও ভালো করে বিষয়টি বুঝতে, যেন আমার জীবনের কোনও ক্ষতি না হয়ে যায় ওর কারণে।’ রোমানার কথার সূত্র ধরেই রাজীব বলেন, ‘ওর তো একটা লাইফ আছে, আমি শেষ পর্যায়ে। বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে খুব ভাবতে হয়েছে আমাকে।’ শেষ পর্যন্ত বন্ধুদের সাহায্যে রাজীবকে রাজি করানো হলে ১৩ জানুয়ারি তাদের বিয়ে হয়।

রাজীবের কিডনি প্রতিস্থাপন এখনও আটকে আছে টাকার অভাবে। যদিও চিকিৎসকরা দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন। রোমানার হাত শক্ত করে ধরে রাজীব বলেন, ‘আমরা এখন সমাজের বিত্তবান ও দায়িত্বশীল মানুষের কাছে হাত পেতেছি। তারা যদি আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন, তাহলেই কেবল সারাজীবন আমরা একসঙ্গে থাকতে পারবো।’ 

জেএ/এএম /এপিএইচ/

আরও পড়ুন:

হলুদ ছোঁয়া শেষ, আজ হাবিবার বিয়ে

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ