X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

হার্টের রিং বিক্রি হচ্ছে সরকারি দামেই, তবে…

জাকিয়া আহমেদ
১৯ জুলাই ২০১৭, ২২:০৭আপডেট : ২০ জুলাই ২০১৭, ১২:৪২

হার্টের রিং চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মূত্রনালীর সমস্যা নিয়ে গত ১৮ জুন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এসেছিলেন ফজলুর রহমান। চেকআপে ইসিজি করার সময় তার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। ওইসময়ই তার হার্টে পরানো হয় তিনটি রিং। ফজলুর রহমানের মেয়ে তাসকিনা ইয়াসমীন অ্যামি জানালেন, রিং পরাতে গিয়ে তার বাবার চিকিৎসায় ব্যয় হয় সাড়ে তিন লাখ টাকা। এর মধ্যে রিং তিনটির দাম পড়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ৬৬০ টাকা।

তাসকিনা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ১৯ জুন এনজিওগ্রামের পর চিকিৎসকরা আমাদের জানান, বাবার হার্টের অবস্থা ভালো নয়। এনজিওগ্রামে ৮০ শতাংশ ব্লক পাওয়ায় তার হার্টে দুই বা তিনটি রিং পরানোর প্রয়োজন হতে পারে। দুটি রিং পরালে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা ও তিনটি রিংয়ের জন্য আড়াই লাখ টাকা খরচ হবে বলে জানানো হয়। পরে বাবার হার্টে তিনটি রিং পরানো হয়। এগুলোর দাম পড়ে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৬০ টাকা। তবে হাসপাতালের অন্যান্য খরচসহ চিকিৎসাবাবদ মোট ব্যয় হয় সাড়ে তিন লাখ টাকা।’

হার্টের রিং নিয়ে দরদাম করেছেন কিনা জানতে চাইলে তাসকিনা বলেন, ‘বাবা তখন গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের বেডে। তাই এসব নিয়ে ভাবার সুযোগ ছিল না। চিকিৎসকদের বলেছি, তারা যেটা ভালো মনে করবেন, সেটাই করবেন।’

জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে কথা হয় পঞ্চগড়ের সুলতানা জাহানের সঙ্গে। তার বাবার হার্টেও রিং পরানো হয়েছে। এটি ছিল বোস্টন সায়েন্টিফিক কোম্পানির। ‍সুলতানা বলেন, ‘ওই রিংয়ের দাম নেওয়া হয়েছে ৮৪ হাজার টাকা। শুনেছি, আগে এই রিংয়ের দাম ছিল সোয়া এক লাখ টাকা।’ তবে রিংয়ের দাম ৮৪ হাজার টাকা হলেও হাসপাতালের অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রায় পৌনে দুই লাখ টাকা দিতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

তাসকিনা ও ‍সুলতানার মতো আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনারি স্টেন্ট বা হার্টের রিংয়ের দাম এখন তুলনামূলকভাবে কম হলেও আনুষঙ্গিক খরচসহ এ চিকিৎসার ব্যয় সার্বিকভাবে খুব একটা কমেনি। শুধু তাই নয়, রোগীর স্বজনদের বেশি দামের রিং পরাতেও উৎসাহিত করে থাকে হাসপাতালগুলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিংয়ের দাম নির্ধারিত হলেও রিং পরানোর জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য যন্ত্রপাতি বা মেডিক্যাল অ্যাকসেসরিজের দাম নির্ধারিত নয়। এই খাতে রোগীর কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে বড় অঙ্কের অর্থ। তাছাড়া রিংয়ের দাম নিয়ে মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।

দেশের একেক হাসপাতালে হার্টের রিংয়ের দাম ছিল একেক রকম। গত ১৮ এপ্রিল এর দাম নির্ধারণে ১৭ সদস্যের কমিটি করে জাতীয় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। ওই কমিটি ২৮ ধরনের রিংয়ের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই নির্ধারিত দামেই দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে রোগীর কাছে রিং বিক্রি করতে হবে। বেশিরভাগ হাসপাতালেই নির্ধারিত মূল্যের এই তালিকা টানানো আছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিংয়ের দাম নির্ধারিত হলেও রিং পরাতে প্রয়োজনীয় অন্যান্য যন্ত্রপাতির দাম আগের মতোই আছে। যেমন— একটি বেলুনের দাম ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা, ওয়্যার ৭ হাজার টাকা। এছাড়া, কিছু ওষুধের দাম ২ হাজার টাকা করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনারি স্টেন্টের মতো এসব মেডিক্যাল অ্যাকসেসরিজের দামও নির্ধারিত হওয়া প্রয়োজন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ৯৪ হাজার ও দেড় লাখ টাকা দামের রিং প্রায় একই মানের। তবে চিকিৎসকরা রোগীর স্বজনদের উৎসাহিত করে থাকেন দেড় লাখ টাকা দামের রিং পরানোর জন্য। ওই সময় রোগীকে নিয়ে উদ্বেগে থাকায় স্বজনরাও রিং যাচাই-বাছাইয়ের মধ্যে না গিয়ে বিষয়টি চিকিৎসকদের ওপরই ছেড়ে দেন। আবার অনেকেই ‘ভালো হবে’ মনে করে বেশি দামের রিং পরাতে রাজি হন।

একাধিক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব ধরনের মেডিক্যাল ডিভাইস শুল্কমুক্ত হলেও রিংয়ের অতিরিক্ত দামের কারণে ভুগতে হয়েছে হৃদরোগীদের। সরকারিভাবে দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার আগ পর্যন্ত আনুমানিক ৪৭ হাজার টাকায় আমদানি করা রেজুলেট ইন্টেগ্রিটি রিং হাসপাতালভেদে বিক্রি করা হতো এক লাখ ৪০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকায়। আবার বহুল ব্যবহৃত ডিইএস স্টেন্ট বোস্টন সায়েন্টিফিকের ‘প্রোমাস এলিমেন্টে’র আমদানি মূল আনুমানিক ২৩ হাজার টাকা হলেও এটি বিক্রি হতো দেড় লাখ টাকাতেও। এখন রিংয়ের দাম সরাসরি কমলেও মেডিক্যাল অ্যাকসেসরিজ ও হাসপাতালের আনুষাঙ্গিক খরচের কারণে ভুগতে হচ্ছে রোগীদের।

জাতীয় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেডিক্যাল অ্যাকসেসরিজের দাম নিয়ে অনিয়মের কথা আমাদের কানেও এসেছে। কিছুদিন আগেই স্টেন্টের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। কয়েকদিন গেলে আমরা এগুলো নিয়েও বসবো।’

করোনারি স্টেন্টের দাম নির্ধারণ কমিটির সদস্য যুগ্ম সচিব মাহবুব কবীর মিলন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি মোটেই সন্তুষ্ট নই। দামটা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে ঠিকই, তবে মনিটরিং নেই, ওভার প্রাইসিংও চলছে। আমি মনে করি, মূল্য নির্ধারণ যেটা হয়েছে, সেটা কেবল ঘায়ের ওপর হালকা মলমের প্রলেপ। ঘা শুকানোর জন্য এটা মোটেই যথেষ্ট নয়।’ অন্যান্য অ্যাকসেসরিজের দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেখানে মূল রিংয়ের বিষয়ই এখনও শৃঙ্খলার মধ্যে আসেনি, সেখানে আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে এখনই আশা করার কিছু নেই।’

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান বলেন, ‘হার্টের রিংয়ের দাম নিয়ে কঠোর নির্দেশনা আছে। হাসপাতালের প্রায় প্রতিটি ফ্লোরের নোটিশ বোর্ডসহ বিভিন্ন জায়গায় মূল্য তালিকা টানানো আছে। কেউ অনিয়মের শিকার হলে সরাসরি আমাকে অভিযোগ করতে পারেন। অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।’

জেএ/টিআর/এএম

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শুধু চাকরির পেছনে ছুটবে না, উদ্যোক্তা হবে:  স্বাস্থ্যমন্ত্রী
শুধু চাকরির পেছনে ছুটবে না, উদ্যোক্তা হবে:  স্বাস্থ্যমন্ত্রী
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক এমডিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক এমডিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বঙ্গোপসাগরে ডুবলো জাহাজ, ভাসছেন ১২ নাবিক
বঙ্গোপসাগরে ডুবলো জাহাজ, ভাসছেন ১২ নাবিক
মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ইসির
মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ইসির
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের