X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংশোধন করা হলেও স্কুলের পাঠ্যবইতে পরিবর্তন হয়নি

মাহাদী আল হাসনাত
২২ জুলাই ২০১৭, ০৫:৪৪আপডেট : ২২ জুলাই ২০১৭, ১৪:২১

পাঠ্যবই স্কুলের পাঠ্যবইতে ভুল সংশোধন করতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত কিছুই পরিবর্তন হয়নি। বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা পাঠ্যবইগুলোতে বড় কোনও পরিবর্তন আনেননি।

পাঠ্যবইতে কিছু পরিবর্তন আনতে চলতি বছরের শুরুতে সাংস্কৃতিক কর্মী এবং ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলো দাবি জানিয়ে আসছিল। দাবির প্রেক্ষিতে সরকার গত এপ্রিল মাসে স্কুলের ১২টি পাঠ্য বইতে পরিবর্তনের সুপারিশ করতে একটি কমিটি গঠন করেছিল। কিন্তু বোর্ডের কর্মকর্তারা এখন বলছেন, কমিটির সদস্যদের শুধুমাত্র বড় বড় ভুলগুলো ঠিক করতে এবং পাঠ্যগুলো স্পষ্ট ও আনন্দদায়ক করতে প্রয়োজন অনুযায়ী ভাষা পরিবর্তন করতে বলা হয়েছিল।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘আমরা কিছুই পরিবর্তন করিনি এবং পাঠ্যবইতে আমাদের কিছু সংযোজন করার পরিকল্পনা নেই। তবে বইগুলোতে কিছু সংশোধন করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বইগুলো এনসিটিবির কারিকুলাম অনুযায়ী ডিজাইন করা হয়েছে এবং এ কারিকুলাম পরিবর্তন করা হয়নি।’

চলতি বছরের শুরুতে স্কুলের পাঠ্যবই প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে হেফাজত ইসলামের সমালোচনার সম্মুখীন হয় বোর্ড এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এক পর্যায়ে কোনও রকম ব্যাখ্যা ছাড়াই মাধ্যমিক পর্যায়ে ১৭টি কবিতা ও গল্প পাঠ্যবই থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন- শিক্ষাবিদ শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এমএম আকাশ, অ্যাকাউন্টিং বিভাগের অধ্যাপক মিজনুর রহমান, ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারপারসন তাসলিমা বেগম, পদার্থবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এবং বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক মুহাম্মদ কায়কোবাদ।

কমিটির কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন, কমিটি ইতোমধ্যে তাদের কাজ সম্পন্ন করেছে। প্রত্যেক শিক্ষককে নিজ নিজ ক্ষেত্রে পাঠ্যবইগুলো সংশোধনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

অর্থনীতিবিদ এমএম আকাশ বলেন, ‘আমি আশা করছি হেফাজত ইসলামের চাপে পাঠ্যবইগুলো থেকে যেসব কবিতা ও গল্প সরিয়ে ফেলা হয়েছে তা ফিরিয়ে আনা হবে।’

কিন্তু শিক্ষাবিদ শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি আমার কাজ সম্পন্ন করেছি এবং আমার সুপারিশগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

এনসিটিবি’র সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ‘কমিটিকে শুধুমাত্র পাঠ্যবই পরিমার্জন, ব্যাকরণগত এবং কাঠামোগত ভুল চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাঠ্যবই পরিমার্জনের পর কারিকুলামের সঙ্গে পরিবর্তনগুলো সামজ্ঞস্য কিনা- তা আমাদের নিজস্ব বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন।’

বোর্ড ও শিক্ষামন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছরের শুরুতে পাঠ্যবইগুলোতে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে তা হেফাজত ইসলামের চাপে করা হয়নি।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যে হাজার হাজার কবিতা ও গল্প আছে। এগুলো এক সঙ্গে পাঠ্যবইতে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব না। অনেক শিক্ষাবিদ বিভিন্ন কবিতা ও গল্প পাঠ্যবইতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন কিন্তু আমরা একসঙ্গে সবগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে পারছি না। তবে আমরা চেষ্টা করছি।’

এনসিটিবির চেয়ারম্যান জানিয়েছন, ‘পাঠ্যবইতে পরিবর্তনের সঙ্গে হেফাজত ইসলামের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে পাঠ্যবইতে কোনও কিছু যোগ করা বা বাদ দেওয়ার সময় এনসিটিবি লেখকদের ধর্মীয় পরিচয় বিবেচনায় আনে না। আমরা যখন পাঠ্যবইতে কিছু যোগ করি তখন পাঠ্যবইয়ের কারিকুলাম এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করি।’

নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘আগামী বছর কারিকুলাম পরিবর্তন করা হতে পারে। কারণ সর্বশেষ পরিবর্তন করা হয়েছিল পাঁচ বছর আগে।’

ও-তে ওড়না চাই পাঠ্যবইয়ের পরিবর্তন সমূহ

পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে হুমায়ুন আজাদের ‘বই’ কবিতা এবং ষষ্ঠ শ্রেণির বই থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ এবং ওয়াজেদ আলীর ভ্রমণ কাহিনী ‘রাচি ভ্রমণ’ বাদ দেওয়া হয়েছে।

সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘লালু’ এবং অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে উপেন্দ্র কিশোর রায়ের ছোটদের জন্য ‘রামায়ণ’ গল্পটি বাদ দেওয়া হয়।

নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে জ্ঞানদাসের ‘সুখের লাগিয়া’, ভরতচন্দ্র রায়ের ‘আমার সন্তান’, লালন শাহের ‘সময় গেলে সাধন হবে না’, রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায়ের ‘স্বাধীনতা’ এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সাকোটা দুলছে’ যোগ করা হয়েছে। আর বাদ দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে বাঙালি মুসলিম কবি শাহ মোহাম্মদ সগীরের ‘বন্দনা’, মধ্যযুগের কবি আলাওলের ‘হামদ’, আব্দুল করিমের ‘বঙ্গবাণী’, কবি গোলাম মোস্তফার ‘জীবন বিনিময়’ এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ওমর ফারুক’।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ ড. রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীগুলোর দাবি অনুযায়ী পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনা খুবই অপ্রত্যাশিত। আমরা এখনও আশা করি, পাঠ্যবাইয়ের পরিবর্তনের দায়ভার শিক্ষাবিদদের। কিন্তু তারা শুধু নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যবই পরিবর্তন করেছে। এমনকি প্রাথমিক পর্যায়ের বইগুলোর পরিবর্তন সমস্যার সৃষ্টি করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি শিশুদের বইতে উত্তেজনাকর কিছু থাকে তবে সরকারের সেটা সরিয়ে ফেলা উচিত।’

পরিবর্তনের বিরুদ্ধে হেফাজতের সতর্কতা

হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুফতি ফায়জুল্লাহ জানিয়েছেন, ২০১০ সালের পর থেকে পাঠ্যবইতে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে তা সাম্প্রদায়িক চিন্তাভাবনা থেকে। যা জনগণের কাছে কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই ২০১০ সালের আগে পাঠ্যবইতে যা ছিল তা ফিরিয়ে আনতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু দেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলিম, তাই পাঠ্যবইতে সাম্প্রদায়িক উপাদান সংযুক্ত করে সরকার মুসলমানদে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করতে পারে না।’

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কয়েক দশক ধরে যখন একটি প্রক্রিয়া চলে আসছে, তখন কেন সরকার একটি নির্দিষ্ট কমিউনিটির পক্ষালম্বন করবে?’

তিনি সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেন, ‘যদি পাঠ্যসূচিতে অধিকাংশ মানুষের বিবেক, দাবি ও অনুভূতির প্রতিফলন না হয় তবে আমরা কঠোর আন্দোলন শুরু করবো।’

যেসব ভুল সংশোধন হতে পারে

চলতি বছর পাঠ্যবাইতে ভুল, অনেক জায়গায় অর্থহীন উপাদান যেমন ছাগলের আম গাছে ওঠার ছবি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। এমনকি প্রথম শ্রেণির পাঠ্যবইতে ও’তে ওড়না লেখায় বোর্ড সমালোচিত হয়।

তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্যবইতে কুসুমকুমারী দাসের ‘আদর্শ ছেলে’ শিরোনামে ১২ লাইনের কবিতায় কয়েকটি লাইন বাদ পড়েছে, কয়েকটি শব্দ পরিবর্তন ও বানান ভুলের জন্য বোর্ড সমালোচিত হয়েছে। এছাড়া একই শ্রেণির হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার পাঠ্যবইতে ‘Do not hurt anybody’ লেখার পরিবর্তে ‘Do not heart anybody, লোখা হয়েছে।

এনসিটিবর পক্ষ থেকে বলা হয়েছ, তারা ইতোমধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠ্যবইয়ের ভুলগুলো সংশোধন করেছে এবং আগামী বছরের শুরুতে বইগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হবে।

বোর্ডের চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘এসব বইয়ের পাণ্ডুলিপি ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছ। আগামী বছরের পহেলা জানুয়ারির আগেই শিক্ষার্থীরা এসব বই হাতে পাবে।’

সৌজন্যে: ঢাকা ট্রিবিউন

/এসএনএইচ/ 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!