X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

নিজেদের ক্যাম্পাসেও সিদ্দিকুরের জন্য মানববন্ধন করতে পারলো না শিক্ষার্থীরা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৩ জুলাই ২০১৭, ১৭:৫১আপডেট : ২৩ জুলাই ২০১৭, ২১:৩৬

সিদ্দিকুরের জন্য রবিবার তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন রাজধানীর শাহবাগে সম্প্রতি বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাতে চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়া শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমানের চিকিৎসা ও জীবনের দায়িত্ব সরকারকে বহনের দাবিতে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছেন। রবিবার (২৩ জুলাই) সকালে তারা এ মানববন্ধন করেন। তবে নিজেদের কলেজের সামনে মানববন্ধনের চেষ্টা করলেও ছাত্রলীগের বাধায় তারা সেখানে দাঁড়াতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন। এমনকি আমতলী এলাকায় এসে মানববন্ধনের চেষ্টাকালে পুলিশ ও তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের নেতারা সেখানে এসেও তাদের বাধা দিয়েছে ও মারধর করে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা আরও দাবি করেন, তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাসে যাতে তারা মানববন্ধন করতে না পারেন সেজন্য সেখানে ফুটবল খেলার আয়োজন করে ছাত্রলীগ। আগামীকাল সোমবারও সেখানে তারা একই কর্মসূচি দিয়েছে।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, সিদ্দিকুর আমাদের কলেজের শিক্ষার্থী। তার ওপরে হামলার প্রতিবাদে আজ রবিবার ঢাকা শহরের ৭টি কলেজ একইসঙ্গে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। অথচ আমরা নিজেদের কলেজে আমাদের সহপাঠীর জন্য মানববন্ধন করতে পারিনি ছাত্রলীগের কারণে। আমরা যেন মানববন্ধন করতে না পারি সেজন্য আজ ছাত্রলীগ নেতারা ফুটবল খেলার আয়োজন করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব শিক্ষার্থী জানান, ক্যাম্পাসে ৫ থেকে ৭ জন শিক্ষার্থী একত্রিত হলেই ছাত্রলীগ ধমকাচ্ছে।

তারা বলেন, বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে এসে আমতলীতে তিতুমীর কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে মানববন্ধনের চেষ্টা করি। সেখানেও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী মিরাজুল ইসলাম ডলার ও সাধারণ সম্পাদক মানিক হোসেন মানিকের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ কর্মীরা এসে বনানী থানা পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা করে। তারা আমাদের মারধর করে, কয়েকজনকে তুলে নিয়েও যায়।

আন্দোলনরতদের পক্ষে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী খাদিজা আকতার নিপা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের একজন সহপাঠী হাসপাতালে রয়েছেন। তিনি চোখ ফিরে পাবেন না বলেই আমাদের জানানো হয়েছে। এই ছেলেটির জীবনের দায় সরকারকে নিতে হবে। পাশাপাশি অধিভুক্ত হওয়া আমাদের ৭ কলেজের সব দাবি মেনে নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সিদ্দিকুরের পাশে দাঁড়াতে চাইলে সেটুকুও করতে দেওয়া হবে না, এটা কেমন কথা।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা যারা আন্দোলন করছি তাদের নানাভাবে হুমকিধামকি দেওয়া হচ্ছে। এখন শুনছি কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়ে প্রতিনিধি দল করা হচ্ছে, যেখানে আন্দোলনকারীদের রাখা হচ্ছে না। ফলে আগামীতে আমাদের দাবি আদায়ের আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ফ্রন্টের ঢাকা নগর সাংগঠিক সম্পাদক সাইয়েদুল হক নিশান বাংলা ট্রিবিউনকে এ বিষয়ে বলেন, আজ সকালে আমরা চেষ্টা করেছিলাম ক্যাম্পাসের সামনে দাঁড়ানোর জন্য। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন ও ছাত্রলীগ ঝামেলা করেছে। ছাত্রদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়েছে। পরে ছাত্ররা আবার জড়ো হয়ে সাড়ে দশটার দিকে আমতলীতে জড়ো হয়েছিলাম মানববন্ধনে। কিন্তু সেখানেও ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরে ছাত্রলীগ এসে সেখান থেকে কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের ভয় ভীতি দেখাতে থাকে। আমার মোবাইল এবং ক্যামেরা কেড়ে নেয় তারা। পরে আমি সাম্যবাদ ডট ওআরজির কর্মী বলে পরিচয় দিলে তারা মোবাইল এবং ক্যামেরা ফেরত দিলেও ভিডিও ও স্টিল ফটো ডিলিট করে দেয়।

ক্যামেরাতে কিসের ফটো ছিল জানতে চাইলে নিশান বলেন, ছাত্রলীগ প্রেসিডেন্ট এবং সেক্রেটারি যে শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের গায়ে হাত দিচ্ছে, মারধর করছে সে ছবি ছিল। এবং তারা যে শিক্ষার্থীদের ধমকাচ্ছে সেটার ১২ সেকেণ্ডের একটা ভিডিও ছিল। সেটাও ডিলিট করে দিয়েছে।

পরবর্তীতে যদি আমরা কোনও মুভমেন্টে যাই তাহলেও তারা দেখে নেবে বলে হুমকি দিয়েছে বলেও জানান নিশান। 

এদিকে, এ অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সেক্রেটারি  মানিক হোসেন মানিক বিকাল সাড়ে চারটার দিকে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সিদ্দিকুরের পাশে আছি, এখন শিক্ষামন্ত্রী এসেছেন তাকে দেখতে। আমরা সেখানেই আছি।’কিন্তু সকালে মানববন্ধনে বাধা দিয়েছেন এমন অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা বললে তিনি জানান, ‘যারা আপনাকে  এ তথ্য দিয়েছেন তারা সঠিক তথ্য দেননি। ফুটবল খেলার আয়োজন পূর্ব নির্ধারিত ছিল বলেও জানান তিনি।’

শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বনানী থানার ওসি বিএম ফরমান আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ধরনের কিছু আমার জানা নেই।’  

গত বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৭টি কলেজের শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবিতে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে। ৫ দফার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার বিচার, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, অবিলম্বে রুটিন প্রকাশ, ৭ কলেজের ক্লাসরুম সংকট নিরসন ইত্যাদি।

আন্দোলনকারীরা গত বৃহস্পতিবার শাহবাগে সমাবেশ করলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। সেখানে টিয়ার সেলের আঘাতে মারাত্মক আহত হন সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান। পরে তাকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তার দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এরপরই সহপাঠীরা তার সব দায়িত্ব সরকারকে বহনের দাবি তোলেন।

/ইউআই/এএম

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঢামেকে কারাবন্দি হাজতির মৃত্যু
ঢামেকে কারাবন্দি হাজতির মৃত্যু
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
রানা প্লাজায় নিহতদের ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ
রানা প্লাজায় নিহতদের ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ
ভাসানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ৫
ভাসানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ৫
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…