X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ছড়িয়ে থাকা জেএমবিরা ফের সংগঠিত হওয়ার চেষ্টায়: র‌্যাব

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৪ জুলাই ২০১৭, ০০:০০আপডেট : ২৪ জুলাই ২০১৭, ০০:০৮

গ্রেফতার হওয়া জঙ্গি মো

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গিগোষ্ঠী জেএমবি ফের সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে বলে দাবি করেছে র‌্যাব। গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া তথ্যের বরাতে র‌্যাব বলছে, ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা জেএমবি সদস্যরা বুদ্ধিজীবী, পীর ও লেখকদের হত্যার পুরনো পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।

রবিবার (২৩ জুলাই) রাতে মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার বধ্যভূমি থেকে জেএমবির দুই সদস্যকে গ্রেফতারের পর র‌্যাবের পক্ষ থেকে এ দাবি করা হয়। গ্রেফতার দুই জঙ্গি হলো- মো. সোহেব শেখ ওরফে সোয়াইব (৩১) ও রফিকুল ইসলাম ওরফে রফিক (৩০)। র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গ্রেফতার হওয়া জেএমবির দুই সদস্য র‌্যাবের একটি মামলার পলাতক আসামি।

র‌্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সোহেব শেখ ওরফে সোয়াইবের কাছ থেকে একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। ব্যাগের ভেতর থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন ও ৪ রাউন্ড গুলি পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, রফিকুল ইসলাম রফিকের হাতে থাকা ল্যাপটপ ব্যাগের ভেতর ১টি চাপাতি পাওয়া গেছে। গ্রেফতাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে।

গ্রেফতারদের বরাত দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি ও অভিযানের কারণে জেএমবির বেশ কিছু সদস্য গ্রেফতার হয়। এতে সংগঠনটির পক্ষে বড় ধরনের কোনও নাশকতামূলক কাজ করা সম্ভব হয়নি। তবে নতুন পরিকল্পনা তৈরি, সদস্য ও ইয়ানত সংগ্রহের জন্য সংগঠনটির বেশ কিছু সদস্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে একত্রিত হয়েছিল।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে নতুন সদস্য ও ইয়ানত সংগ্রহ, নতুন সদস্যদের প্রশিক্ষিত করা, বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কাজের পরিকল্পনা, ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও জেএমবিকে ফের সংগঠিত করার জন্য মূলত সংগঠনটির সদস্য বৈঠক করে।

গ্রেফতার সোয়াইবের গ্রামের বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়ায়। সে এলাকায় ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে ১৯৯৯ সালে কাজের সন্ধানে ঢাকায় আসে ও এক চায়ের দোকানে কাজ নেয়। পরে সে গাজীপুরের সাইনবোর্ড ও এর আশেপাশের এলাকায় বিভিন্ন গার্মেন্টসে কাজ করে। ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে এম স্কয়ার সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে কাজ করার সময় ইয়াছিন নামে এক জেএমবি নেতার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ইয়াছিন বিভিন্ন সময়ে কোরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা দিয়ে সোয়াইবকে জঙ্গিবাদে উদ্ধুদ্ধ করে। এসময় ইয়াছিন সোয়াইবকে মতিউর রহমান মাদানী, আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ, মোজাফ্ফের বিন মহসীন, মুফতি জসিম উদ্দীন রাহমানীর ওয়াজ শোনার ব্যবস্থা করে দিত। পরে ঊর্ধ্বতন নেতাদের নির্দেশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শারীরিক সক্ষমতা অর্জন এবং নতুন সদস্য ও অর্থ সংগ্রহ করে সে জঙ্গি কার্যক্রম চালাতে থাকে।

২০১৬ সালে জেএমবি নেতা ইয়াছিন ও সিফাতকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এতে তাদের স্থলাভিষিক্ত হয় সোয়াইব। এরপর তার নেতৃত্বে জেএমবি সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। তারা সদস্য ও অর্থ সংগ্রহ এবং নতুন সদস্যদের শারীরিক ও বোমা বানানোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে থাকে। পাশাপাশি তারা বিভিন্ন পীর ও পীরের মাজার এবং ইসলাম পরিপন্থী বক্তব্য দানকারী বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনাও করে। চলতি বছরের ৩১ মে সোয়াইবের বিরুদ্ধে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা হয়।

অন্যদিকে, রফিকুল ইসলাম রফিকের গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ এলাকায়।  ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনার পর আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৯ সালে বাবার চায়ের দোকানে সে কাজ শুরু করে। ২০০৪ সালে বিয়ে করে এবং বর্তমান তার তিন কন্যা সন্তান রয়েছে। অভাব-অনটনের কারণে ২০১০ সালে সে গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকায় তার বোন ও বোন জামাইয়ের কাছে আসে। পরে বোন জামাইয়ের সাহায্যে ‘সাইম’ গার্মেন্টেসে কাজ নেয় সে। ২০১৩ সালে জেএমবি নেতা ইয়াছিনের সঙ্গে রফিকের পরিচয় হয়। ইয়াছিনের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় সে জেএমবির অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে গোপন মিটিং করে এবং জঙ্গিবাদে উদ্ধুদ্ধ হয়। রফিকও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার র‌্যাবের মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

চলতি বছরের ৩১ মে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা থেকে মো. মফিজুল ইসলাম ওরফে তুষার ওরফে তাওহীদ, মো. রকিবুল ইসলাম ওরফে রকিবুল মোল্লা ও মো. ইলিয়াছ আহমেদকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও জঙ্গিবাদী বইসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকা থেকে ২৩ জুন জেএমবির সক্রিয় দুই সদস্য মো. মোতাসিম বিল্লাহ ও মো. মোরসালিন শেখকে গ্রেফতার করা হয়। এ দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ৩০ জুন র‌্যাব-২ এর একটি দল জেএমবির আরও দুই সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করে। তারা হলো- চাঁন মিয়া ও মজনু মিয়া।

/এআরআর/এমএ/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!