X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আমদানি করা অস্ত্রগুলো কি আসলেই অবৈধ?

জামাল উদ্দিন
২৬ জুলাই ২০১৭, ২৩:১২আপডেট : ২৭ জুলাই ২০১৭, ০৯:৪৭


আমদানি করা এসব অস্ত্র কি আসলেই অবৈধ?
নীতিমালা ভঙ্গ করে অবৈধভাবে অস্ত্র আমদানির অভিযোগে গত ৯ ও ১১ জুলাই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ওয়ালথার পিপি ১৬টি এবং এইচ.কে. ফোর ব্র্যান্ডের পাঁচটি অস্ত্র জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এ ঘটনায় অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এ কে এম নূরুল হুদা আজাদকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। এসব অস্ত্র বৈধ কী অবৈধ সেটা তদন্ত শেষে বলা যাবে বলে জানিয়েছেন তদন্তে সংশ্লিষ্টরা। তবে অস্ত্র আমদানিকারকরা বলছেন, যে অস্ত্রগুলো বিমানবন্দরে আটকানো হয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণ বৈধ। দেশের সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ করেই নিয়মতান্ত্রিক পথে এই অস্ত্রগুলো আমদানি করা হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দারা না জেনে, না বুঝে এসব অস্ত্র আটক করেছেন। এ নিয়ে প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নেবেন বলেও জানান তারা।

অস্ত্র আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একটি অস্ত্র আমদানি করতে প্রথমে ব্যাংকের মাধ্যমে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) করতে হয় একজন বৈধ অস্ত্র আমদানিকারককে। এরপর কী অস্ত্র আমদানি করা হবে সেটা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। স্পেশাল ব্র্যাঞ্চ (এসবি) ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই )এ বিষয়ে তদন্ত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর সেসব কাগজপত্র আবারও পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করতে হয়। যে দেশ থেকে অস্ত্র আমদানি করা হবে সেই দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে সেসব কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের নির্ধারিত অনুবাদ সেন্টার থেকে সব কাগজপত্র ওই দেশের ভাষায় অনুবাদ করিয়ে দূতাবাসের মাধ্যমেই ওই দেশের বৈধ অস্ত্র রফতানিকারকের কাছে পাঠানো হয়। একইভাবে সে দেশের সরকার ও তাদের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো থেকে আবার সেই অস্ত্র রফতানির অনুমোদন নিতে হয়। বাংলাদেশের আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে লাগে প্রায় দুই বছর। আর সংশ্লিষ্ট দেশের আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে লাগে তিন থেকে নয় মাস। এসব প্রক্রিয়া শেষ করেই একটি অস্ত্র আমদানি করতে হয়।’
বাংলাদেশের অস্ত্র আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান স্মিথ অ্যান্ড এনভিল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হালিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দীর্ঘ সময় নিয়ে এতগুলো আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে তিনশ’ শতাংশ শুল্ক দিয়ে বৈধ পথে অস্ত্র আমদানি করা হয়। আর নতুন অস্ত্রের মূল্য দিয়ে আমি কেন পুরনো অস্ত্র নিয়ে আসবো।’ তিনি বলেন, ‘শুল্ক গোয়েন্দারা এ অস্ত্রগুলোকে পুরনো ও পুনঃসংস্কৃত বলে দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন।’

আবদুল হালিম আরও বলেন, ‘লোহার বা স্টিলের তৈরি বডির অস্ত্রগুলো বেশি নড়াচড়া করলে সেগুলোতে দাগ বা স্পট পড়তেই পারে। তাতে অস্ত্রগুলো পুরনো হয়ে যায় না। শুধুমাত্র অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি অস্ত্রগুলোতে সহজে দাগ পড়ে না।’
এই বৈধ অস্ত্র আমদানিকারক  বলেন, ‘আটক অস্ত্রগুলোর মধ্যে এইচ. কে. ফোর অস্ত্রও রয়েছে। যে অস্ত্রটির মধ্যে চারটি ব্যারেল থাকে। তবে বাংলাদেশে তিন ব্যারেলের ওপরে অনুমোদন নেই। যে কয়টির অনুমোদন রয়েছে সেই ক’টি ব্যারেলই আনা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘কাস্টমসের আটক করা অস্ত্রগুলো ইতালির রোম থেকে গত ২৭ মে ফ্লাই করেছে। ২৯ মে ঢাকায় ল্যান্ড করেছে। ৩ জুন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন কাস্টমসে। অবৈধ উল্লেখ করে ৬ জুন কাস্টমস এসব অস্ত্রের ডেলিভারি স্টপ করেছে। ব্যালাস্টিক পরীক্ষার জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ১৩ জুন সিআইডিতে পাঠায় অস্ত্রগুলো। ১১ জুলাই সিআইডি থেকে কাস্টমসকে জানানো হয়, এটা তাদের কাজের আওতাভুক্ত নয়।’

তিনি বলেন, ‘কাস্টমস এটাকে জব্দ বলে কিভাবে। এটাতো কাস্টমসের প্রক্রিয়া ও ভল্টেই আছে ২৭ মে থেকে। এখনও তাই আছে। এতদিন যাবত এটা বিভিন্ন হাতে গিয়েছে। কৌতূহলী অনেকেই সেগুলো ধরে দেখেছেন। এতে অস্ত্রের গায়ে ময়লা বা দাগ পড়তেই পারে। তারা এভাবে কাউকে  অস্ত্র দেখাতে পারেন না।  এটা স্বাভাবিক আমদানি। একটা আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সে এসব অস্ত্র বাংলাদেশের ঢাকা এয়ারপোর্টে এসেছে। কুয়েত সিটিতে ল্যান্ডিংয়ের পর এটা ট্রানজিট হয়েছে। দু’একটি গোয়েন্দা সংস্থাও বলেছে ওকে।’

অস্ত্র পরীক্ষা করে দেখাচ্ছেন অস্ত্র ব্যবসায়ী আবদুল হালিম
অস্ত্র ব্যবসায়ী আবদুল হালিম অভিযোগ করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যিনি আমদানিকারক তিনি একজন বৈধ ডিলার। যে ধরনের অস্ত্র এসেছে সেটা কমার্শিয়াল আমদানিতে অনুমোদিত। বৈধ একটা এয়ারপোর্ট থেকে এসেছে। এটা বন-জঙ্গল দিয়ে আসেনি। ঢাকায়ও স্বাভাবিকভাবে ল্যান্ড করেছে।’ তিনি বলেন, ‘শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালক ও তার কর্মকর্তারা এ অস্ত্র আটক করে সেটা আবার গণমাধ্যমে দিয়ে দেশকে বহির্বিশ্বে ছোট করেছে। তারা রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘‘শুল্ক গোয়েন্দারা অস্ত্রের অনেক খুটিনাটি বিষয় বুঝেন না। তারা বলেছেন- ‘এসব অস্ত্র ট্যাম্পারিং হয়েছে। ফেব্রিকেটেড হয়েছে।’ সেটা কখন হয়। যে মেটেরিয়াল দিয়ে অস্ত্র তৈরি হওয়ার কথা, সেটা দিয়ে তৈরি না করে অন্য কোনও মেটেরিয়াল দিয়ে তৈরি করলেই সেটা ফেব্রিকেটেড হয়।’

আবদুল হালিম জানান,তাদের আমদানি করা অস্ত্রের ক্ষেত্রে শুল্ক গোয়েন্দাদের এসব ল্যাংগুয়েজ  প্রযোজ্য নয়। তারপর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে যাদেরকে সেখানে নেওয়া হয়েছে, তাদের অনেকেই এ বিষয়ে কোয়ালিফাই নয়। হোক না তারা সংস্থার লোক। আমরাও ফায়ার আর্মস ডিলার। আমরা নিজেরা এ বিষয়ে হাতে-কলমে জানি। এ বিষয়ে শিক্ষাও আছে।’
মেসার্স ইমরান আর্মস অ্যান্ড কোম্পানির মালিক নূর উদ্দিন ইমরান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি অস্ত্রগুলো নিয়ে এসেছি শতভাগ নতুন। শুল্ক গোয়েন্দারা কেন পুরনো বলছে, সেটা জানি না। আমার ৫৮ পিস অস্ত্রেরই কাগজ আছে। কাগজপত্রে একটি দাড়ি-কমাও কম নাই। বাংলাদেশের আমদানি নীতি অনুযায়ী যত কাগজ দরকার সবগুলোই দেওয়া আছে। রফতানিকারকরা কখনও নতুন অস্ত্রের দাম নিয়ে পুরনো অস্ত্র দেবে না। আর আমিও তিনশ’ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে পুরনো অস্ত্র আমদানি করবো না।’
আটক অস্ত্রের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এ কে এম নুরুল হুদা আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ খবর নিচ্ছেন। সবগুলো বিষয় খতিয়ে দেখছেন। যেসব লাইসেন্সের বিপরীতে তারা অস্ত্র বিক্রি করেন, সেসব বিষয়েও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। সবগুলো বিষয় খতিয়ে দেখে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’

মেসার্স ইমরান আর্মস অ্যান্ড কোম্পানির আমদানি করা অস্ত্রগুলো সব নিয়ম মেনে  আনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা তদন্ত শেষেই বলা যাবে।’

তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- তদন্ত অধিদফতরের উপ-পরিচালক সাইফুর রহমান ও সহকারী পরিচালক জোবায়দা খানম।
অস্ত্র ব্যবসায়ী আবদুল হালিমের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারা আইন মেনে কাজ করেন। তদন্ত চলছে। তাই এ মুহূর্তে এর বেশি মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। আর আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার সবারই আছে।’
এর আগে অস্ত্র আটক করার পর ড. মইনুল খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘তদন্তদল মূলত দুটি বিষয় খতিয়ে দেখবে। প্রথমত, পুরনো ও নিম্নমানের অস্ত্র কৌশলে গ্রাহকদের কাছে নতুন হিসেবে বিক্রির মাধ্যমে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে কিনা। দ্বিতীয়ত, এ ধরনের ব্যবহৃত এবং নম্বরহীন ও অসঙ্গতিপূর্ণ অস্ত্র কী উদ্দেশে আনা হয়েছে, তা খুঁজে বের করা। এছাড়া এসব অস্ত্র রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় কোনও ঝুঁকি সৃষ্টি করবে কিনা তাও খতিয়ে দেখবেন তারা।’
/জেইউ/ এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা