X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীর অলিগলিতে অনুমোদনহীন স্কুল, মান নিয়ে প্রশ্ন

রশিদ আল রুহানী
০৭ আগস্ট ২০১৭, ১৯:৩৭আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০১৭, ১০:০৮

অনুমোদনহীন স্কুল রাজধানীর অলিগলিতে লাগামহীন গড়ে উঠেছে অনুমোদনহীন স্কুল। ছোট্ট একটি ভবন বা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে, কয়েকটি চেয়ার-টেবিল বসিয়ে, সাইনবোর্ড লাগিয়ে স্থাপন করা হয়েছে এসব স্কুল। ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে ৩০১টি স্কুল ও ১২২টি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অনুমোদন আছে, বাকি সবাই অনুমোদনহীন। অনুমোদন না থাকায় স্কুলগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ফলে এসব স্কুলের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
শিক্ষাবোর্ডের থেকে অনুমোদিত না হওয়ায় স্কুলগুলো কোনও নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না। স্কুল প্রতিষ্ঠার ইতিহাস বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়ায় গেছে। প্রথমে কোচিং চালু করে স্কুলের কার্যক্রম শুরু করে কর্তৃপক্ষ। পরে শিক্ষার্থী বেড়ে গেলে কোচিংয়ের নামের পাশে ‘স্কুল’ শব্দ জুড়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে ভর্তি করে। আর এভাবেই যাত্রা শুরু হয় অনুমোদনহীন স্কুলগুলোর।
জানা গেছে, শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত নীতিমালা না মেনে প্রতিষ্ঠা করায় এসব স্কুল অনুমোদনের আবেদনও করে না। শুধুমাত্র বইপত্রের সুবিধা পেতে ও শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষায় (পিইসি, জেএসসি, এসএসসি) অংশ নেওয়ানোর জন্য অনুমোদিত অন্য স্কুলের ‘অ্যাটাসমেন্ট’ নিয়ে থাকে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা অননুমোদিত স্কুলে পড়াশোনা করলেও তাদের পাবলিক পরীক্ষা দিতে হয় অনুমোদিত স্কুলের মাধ্যমে।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ড নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে, স্কুল স্থাপন করতে হলে ৫০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের ওপর ন্যূনতম চাহিদা ও শর্ত পূরণের অঙ্গীকার করে সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করতে হবে। মেট্রোপলিটন এলাকায় নিম্ন মাধ্যমিক দশমিক ২০ একর, মাধ্যমিক (নবম-দশম) দশমিক ২৫ একর এবং মহাবিদ্যালয় (একাদশ-দ্বাদশ) দশমিক ৫০ একর জমির ওপর স্থাপন করতে হবে। যেখানে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী, খেলার জায়গা, লাইব্রেরি, নিজস্ব তহবিলসহ আরও বেশকিছু অনুষঙ্গ বাধ্যতামূলকভাবে থাকতে হবে। কিন্তু স্কুলগুলো এই নীতিমালার ধারে কাছেও যায় না।
অনুমোদনহীন স্কুল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আজিমপুর, বংশাল, বকশিবাজার, কলতাবাজার, সদরঘাট, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, শনিরআখড়া, মগবাজার, কলাবাগান, বনশ্রী, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ প্রায় সব এলাকার অলিগলিতেই এমন শত শত স্কুল রয়েছে। এমনও দেখা গেছে, মাত্র ১০ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী নিয়েই চলছে স্কুলের কার্যক্রম।
অননুমোদিত স্কুলগুলোতে পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই, শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার জায়গা নেই, জমির কোটাও পূর্ণ করেনি, হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী রয়েছে স্কুলে। বরং আবাসিক ভবন অথবা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে চলছে স্কুলের কার্যক্রম।
রাজধানীর আজিমপুরে সাফির আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রয়্যাল পাবলিক স্কুল, আইডিয়াল স্কুলসহ বেশ কয়েকটি স্কুলের দেখা মিলেছে। যাদের কোনোটারই শিক্ষাবোর্ডের অনুমোদন নেই।
সাফির আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কলেজ পার্টের অনুমোদন থাকলেও স্কুল পর্যায়ের অনুমোদন নেই। অথচ দেদারছে চলছে স্কুলের কার্যক্রম। একটি আবাসিক ভবন ভাড়া নিয়ে নিচ তলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে। ভবনটির ওপরে রয়েছে আবাসিক ফ্ল্যাট।
জানতে চাইলে স্কুলটির চেয়ারম্যান শাহেদুজ্জামান ভূঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান এভাবেই অনেক বছর ধরে চলছে। আমাদের অনুমোদনও আছে।’
রয়্যাল পাবলিক স্কুল নাম দিয়ে একই এলাকায় একটি ভবনের দোতলায় স্কুল খুলে বসলেও মূলত এটি একটি কোচিং সেন্টার। এখানে যেসব শিক্ষার্থী কোচিং করতে আসে, তাদেরকে স্কুলে ভর্তির জন্য প্রভাবিত করা হয় বলে অভিযোগ আছে। তবে এখনও কোনও শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারেননি বলে জানিয়েছেন স্কুলটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম।
শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক এটিএম মইনুল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসব স্কুল কোনও নিয়মই মানে না। যেহেতু অনুমোদিত নয় ফলে তাদেরকে যাচাই-বাছাইও করা হয় না।’
কোতোয়ালি, সূত্রাপুর, বংশাল ও চকবাজার এলাকার শিক্ষা অফিসার রিয়াদ মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসব স্কুল প্রতিষ্ঠাই হয় অনিয়ম করে। অনিয়ম করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। কারণ শিক্ষা সবার অধিকার। তবে তাদের শিক্ষকদের বেশিরভাগই কোয়ালিটিফুল না। বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কলেজে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন নিয়োগ দিয়ে পড়ানো হয়। কিন্তু তারা তো শিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ পান না ।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে এটাও ঠিক সব স্কুল যে খারাপ ফল করে তাও কিন্তু নয়, তারা বেশ ভালোই করে। কারণ, এখন তো অভিভাবকরাও সচেতন। ফলে পড়াশোনার ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়।’
এই শিক্ষা অফিসার বলেন, ‘নিয়ম না মেনে প্রতিষ্ঠা করলেও ওইসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা অবৈধ নয়। কারণ, সবারই শিক্ষার অধিকার রয়েছে। তবে স্কুলগুলো যেভাবে গড়ে ওঠে বা তারা যেভাবে পড়ায় তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসব স্কুল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোনও নিয়ম তো মানেই না, বরং পড়াশোনার পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন আছে। তারা রীতিমত আল্লাহর ওয়াস্তে চলে।’
/এসএনএইচ/এপিএইচ/আপ-এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’